• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

২০০৯ সাল থেকে দূরদর্শী রাজস্ব ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ। গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক রয়েছে এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালে এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে তা সাড়ে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান প্রায় এক তৃতীয়াংশ। তবে ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তা ১৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান এক পঞ্চমাংশ থেকে বেড়ে এক তৃতীয়াংশ হয়েছে।

১৯৮০ সালের পর থেকে জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান দ্বিগুণ হয়েছে। ১৯৯০’র দশকের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি ২০ গুণ বেড়ে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স থেকে শুরু করে স্বল্প মজুরির শ্রমও অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

রেমিটেন্স, রপ্তানি এবং কৃষির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ভারতের তুলনায় মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৯৮ ডলার থেকে কমে এক হাজার ৯২৯ ডলার হয়েছে। দেশটির অর্থনীতির আকার ২ দশমিক ৮৭ ট্রিলিয়ন থেকে কমে ২ দশমিক ৬৬ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

গত ১৫ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ধরে রাখায় ২০২০ সালে মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৯৬১ মার্কিন ডলার নিয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। একই বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৩৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০০৪ সালের পর থেকে প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০১৭ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করায় বড় প্রতিবেশী এই দেশটিকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ।

২০০৮ সালের বৈশ্বিক ঋণ সংকটের আগে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের অর্ধেক থাকলেও ২০১৪ সালের মধ্যে তা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালে ভারতের অর্থনীতি ৭.৩ শতাংশ সংকুচিত হলেও একই সময়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে।

গড় আয়ু, জন্মহার এবং শিশু পুষ্টির মতো বেশ কিছু মানব উন্নয়ন সূচকে ভারতের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের সুযোগ-সুবিধা বিস্তৃত পরিসরে পৌঁছে গেছে। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হয়েছে।

অন্যদিকে, মানব উন্নয়ন সূচকে ভারতের অবস্থান সুবিধাজনক নয়। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলোতে এসব সূচক অত্যন্ত নাজুক। যেমন— বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে গত বছর কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ১৯ শতাংশ। আর বাংলাদেশে তা ৩৫ শতাংশ।

ভারতের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলো বাল্যবিয়ে এবং অকাল গর্ভধারণ মোকাবিলায় রীতিমতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিহার রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজারে অন্তত ৪৭। বাংলাদেশের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রজনন সমস্যার সমাধান।

ভারত ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে পুরোনো ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট বাতিলের ঘোষণা দেয়। দুর্নীতি প্রতিরোধ, ডিজিটাল লেনদেনে মানুষকে উৎসাহ দান, দেশকে জাল নোট মুক্ত করা এবং কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কয়েক বছর ধরে ওঠানামা করেছে। তবে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মানুষের দৈনিক খাদ্য ও জ্বালানি কেনাকাটা বাধাগ্রস্ত করে। এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনেও আঘাত করে। প্রায় ৮৬ শতাংশ নগদ অর্থ রাতারাতি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

তবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থানীয় মুদ্রায় গত ৫০ বছরে প্রায় ২৭০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি জিডিপির মাত্র ৫ শতাংশ বা তার কম রয়ে গেছে। রপ্তানিমুখী শিল্প সম্প্রসারণের ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

মূলত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে শ্রমঘন এবং অদক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক নির্ভর খাত টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ও জুতো শিল্প থেকে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশের সুবিধাভোগী অবস্থান, বিনিয়োগবান্ধব আইন এবং কম মজুরির কারণে অনেক ভারতীয় ক্রেতা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে।

ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার বাংলাদেশ। ২০২০-২১ সালে উভয় দেশের মধ্যে ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে। যা ২০১৯-২০ সালের সাড়ে ৯ বিলিয়নের চেয়ে বেশি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করবে। তবে এর পুরো সম্ভাবনা কেবল উন্নত পরিবহন সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে।

বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্প্রতি যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পণ্য, পরিষেবা ও জ্বালানির বাণিজ্য বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। এমনকি ছোট এক প্রতিবেশী এগিয়ে যাওয়ায় এখনও অব্যবহৃত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার অন্বেষণ বাকি রয়েছে। তবে আপাতত দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক বীরত্বের যাত্রা উপভোগ করছে বাংলাদেশ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here