• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

উত্তরের ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে তামাক 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

দু’পয়সা বেশি লাভের বাড়তি আশার সঙ্গে বাজারজাতের নিশ্চয়তায় তামাক চাষ করছেন তরাগঞ্জের চাষিরা। জেনে শুনে বিষ চাষের এই চিত্র শুধু তারাগঞ্জে নয়। রংপুর জেলার পাশাপাশি লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতেও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তামাকের চাষ।

খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য খ্যাত রংপুর অঞ্চলে প্রতিবছরই ধান, আলুসহ কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার হতাশা কৃষকের চোখে পানি আনে। এই আহাজারির সুযোগকে লুফে নিয়ে বিনামূল্যে বিষাক্ত তামাকের বীজ কৃষকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

এদিকে তামাক চাষের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ না থাকায় কৃষকদের সচেতনতার বালাই নেই বলে মনে করছে সচেতন মহল। তাদের দাবি, তামাক চাষ বন্ধে এখনই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে আগামী দিনে উত্তরের এই জনপদে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে।

সরজমিনে দেখা গেছে, রংপুর সদরের পাগলাপীর, মমিনপুর, তারাগঞ্জের শলেয়া, মিঠাপুকুরের বড় হযরতপুর, পীরগাছার তাম্বুলপুর, কাউনিয়ার সানাইসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত দূর থেকে দেখে মনে হবে সবুজে ছেয়ে গেছে। কিন্তু ফসল নয়, একটু কাছাকাছি গেলেই মাঠে মাঠে বাড়ন্ত তামাকের চারা। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতার শিরা, উপশিরায় বিষাক্ত নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের গাছ।

রংপুর সদরের পালিচড়া এলাকার জহুরুল ও ইব্রাহিম বলেন, সারা বছর তো শস্যের আবাদ করি। কিন্তু দামের বেলায় পুঁজি বাঁচানোর চিন্তায় কান্নাকাটি করা লাগে। তামাক চাষের মধ্যে ওই টেনশন নেই। কোম্পানি থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। আবার নিশ্চিত দু’পয়সা বেশি রোজগারও হয়।
তাম্বুলপুর এলাকার নূর আমিন বলেন, তামাক আবাদে ক্ষতি হয় জানি। কিন্তু গরিবের আয় রোজগারের জন্য সুবিধা আছে। কোম্পানি থেকে লোন সুবিধার পাশাপাশি বীজ ও সার পাওয়া যায়। আবার বাজারজাত নিয়ে চিন্তা থাকে না।

এদিকে এই বিষবৃক্ষের উৎপাদন ঠেকাতে হলে চাষিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিসহ আইনের প্রয়োগ জরুরি বলে মনে করছেন তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের ফোকাল পারসন সুশান্ত ভৌমিক। বার্তা২৪.কম-কে তিনি বলেন, আইন আছে, সেটার প্রকৃত ব্যবহার করতে পারলে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে এর আগে চাষিদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি তামাকজাতকরণ কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্য থামাতে হবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ধান, আলুসহ কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে কৃষকদের বাঁচাতে হবে। কৃষকরা বাঁচলে তামাক চাষ কমে আসবে। তামাক চাষ পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই কৃষক নেতা।
তামাক থেকে মুখ ফেরাতে চাষিদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, তামাক জীবনঘাতী নিকোটিন সমৃদ্ধ। মরণব্যাধি ক্যানসারের অন্যতম উপাদান এই বিষপাতা। ক্ষতির সবদিক জানার পরও বাজারজাতের নিশ্চয়তা থাকায় চাষিদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। আমরা বন্ধ করতে চাইলেও তারা চাষ থেকে ফিরে আসছে না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলে এবার সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লালমনিরহাটে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার এই অঞ্চলে তামাকের চাষ কিছুটা কমেছে। এভাবে তামাক চাষ চলতে থাকলে এই অঞ্চলের ফসল উৎপাদন কমে আসবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here