• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

চায়ের নার্সারি বিরাজোত গ্রাম

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

পঞ্চগড়েের সদর উপজেলার সীমান্তঘেষা প্রত্যন্ত গ্রাম বিরাজোত। গত কয়েক বছর আগেও এ গ্রামের মানুষ ছিল অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল। 

৫ থেকে ৭ বছর আগেও এই গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি ছিল ছনের তৈরি কাঁচা ঘর। এখন সেই গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে গড়ে উঠেছে পাঁকা ঘর।  চক চক করে জানালার থাই গ্লাস। বাড়ি বাড়ি বাই সাইকেলের বদলে হয়েছে মোটর সাইকেল। যেতে হয় না আর পাথর উত্তোলন কিংবা অন্যের জমিতে কাজ করতে ৷ 

প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পরিবর্তন হয়েছে চা গাছের চারার নার্সারি করে। এ গ্রামের উৎপাদিত চায়ের চারা জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে সিলেট, মৌলভীবাজার ও চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। ফলে দিন দিন অর্থনৈকভাবে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি।  

জানা গেছে, জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত বিরাজোত গ্রামটি। চারদিকে সবুজের সমারোহে গ্রামটি বেশ মনোরম৷ গ্রামের ভেতর ঢুকলে চোখে পড়েবে  

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে খড়ের তৈরি শেড। এই সেডের নিচেই করা হয়েছে চায়ের নার্সারি। জেলার চায়ের কথা উঠলেই সবার মুখে চলে আসে এই বিরাজোত গ্রামের নাম। আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে গ্রামটি পরিচিত পেয়েছে চায়ের নার্সারির গ্রাম হিসাবে। গ্রামটির বেশির ভাগ আবাদী জমিই এখন চায়ের নার্সারি।  বিভিন্ন নার্সারিতে মালিক-শ্রমিকরা পরিচর্যার কাজ করছেন। অনেকেই আবার বাইরে থেকে চারা কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে চারা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

স্থানীয়রা জানান, বিরাজোত গ্রামে ১২০ থেকে ১৩০টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু এই পরিবারগুলোর কম বেশি সবাই চা নার্সারির সঙ্গে যুক্ত। এ গ্রামের মানুষের দেখা দেখি পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলেতেও বাড়ছে চায়ের নার্সারি।  

নার্সারি মালিকরা জানান, কেউ নিজস্ব জমিতে আবার কেউ কেউ অন্যের জমিতে ভাড়া (চুক্তি) নিয়ে গড়ে তুলেছেন এই নার্সারি। প্রতিটি  নার্সারিতে সর্বনিম্ন  ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যন্ত চারা তৈরি করা হয়। 

বিরাজোতের চায়ের নার্সারি দেখে পার্শ্ববর্তী ডাঙাপাড়া, কামারপাড়া, পতিপাড়া, বন্দিপাড়া ও সাহেবিজোত গ্রামেও শুরু হয়েছে নার্সারি ব্যবসা। প্রতিটি চারা ৫ - ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। এতে বেকার মানুষদের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তেমনি গ্রামের মানুষের জীবন মানও উন্নয়ন হয়েছে।

জানা যায়, পঞ্চগড় জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ২১ টি নিবন্ধন নিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে বিরাজোত গ্রামের সবচেয়ে বেশি। এছাড়া নিবন্ধনে বাইরে শতাধিক নার্সারি রয়েছে। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চাষের মৌসুম চলাকালে এই নার্সারি করা যায় বলে জানায় চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।  

নার্সারি মালিক ও চাষিরা জানান, চা চারার সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ঝড়, বৃষ্টি ও বাতাস। 
 
চা নার্সারি কৃষক মোশাররফ রহমান বলেন, চায়ের নার্সারি আগে বাবা করতেন । কয়েক বছর ধরে নার্সারি করে আসতেছি। গত কয়েক বছর ধরে ভালো চলছি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় সময় ক্ষতিগ্রস্ত হই কিন্তু এতে কোনো সহযোগিতা পাই না।

জমির উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, আগে আমাদের গ্রামের মানুষরা ধান, গমের চাষ করতো, এতে তেমন লাভবান হতে পারতো না। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েক বছর আগে চায়ের নার্সারি শুরু হলে এ গ্রামের কৃষকদের জীবনের পরিবর্তন আসে। এখন এ গ্রামের প্রতিটি কৃষকদের রয়েছে চায়ের নার্সারি। আমিও চায়ের নার্সারি করে স্বাবলম্বী হয়েছি।

বিরাজোত এলাকার চাষি বাবুল হোসেন বলেন, স্থানীয় কয়েকজন কৃষক চায়ের নার্সারি করলে তাদেরকে দেখে গত ১২ বছর আগে চায়ের নার্সারি শুরু করি।  শুধু নার্সারি করেই আমি স্বাবলম্বী। আগে আমরা কয়েকজন কৃষক চায়ের নার্সারি করলেও পরে আমাদের গ্রামের সবাই নার্সারি করেন।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, জেলায় যেসব এলাকায় চায়ের নার্সারি হয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নার্সারির সংখ্যা বিরাজোত গ্রামে। চায়ের নার্সারি করে মানুষ বেশ উপকৃত হচ্ছেন। ওই গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে তারা বেশ কয়েকবার কর্মশালা করেছেন। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন মানুষ এই ব্যবসায় ঝুঁকছেন।  

Place your advertisement here
Place your advertisement here