• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

জ্বালানি ও বাণিজ্যে জোর ঢাকার, নয়া দিল্লির চাই কানেক্টিভিটি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। সংকট মোকাবিলায় ভারত থেকে জ্বালানি তেল আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির কথা ভাবছে সরকার। নয়া দিল্লির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে রয়েছে সবুজ সংকেত। তবে ঠিক কী পরিমাণ বা কত দামে বাংলাদেশকে জ্বালানি দেবে দেশটি, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে ভারতের কাছ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে বন্ধুপ্রতীম দেশটির সঙ্গে কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলনসহ পাঁচ থেকে সাতটি চুক্তি এবং এমওইউ স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া ঢাকা চাইবে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। বিশেষ করে, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ও বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ।

অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে নয়া দিল্লিরও কিছু চাওয়া আছে। এক্ষেত্রে মোদি সরকার কানেক্টিভিটিতে (সংযোগ স্থাপন) জোর দেবে এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে আগামী সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নয়া দিল্লি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় তিন বছর বিরতির পর প্রধানমন্ত্রীর এ সফর নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে আগামী বছর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই এ সফর কি না, বোদ্ধা মহলে সে ধরনের আলোচনা চলছে।

অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নির্বাচন ইস্যুকে উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, সফরের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দুই দেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এ সফর দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

ভারত থেকে জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি ইস্যু নিয়ে আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি। আমাদের বিভিন্ন সোর্স থেকে জ্বালানি আসছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, তারাও (ভারত) মোটামুটি পজিটিভ ইন্ডিকেশান দিয়েছে। ঠিক কী পরিমাণ দেবে বা কত দামে দেবে সেগুলো নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ভারত ফরমালি একটা ইতিবাচক সাড়া দেবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে নেপাল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বলেন, আমরা আশা করছি, এটা একটা ভালো সফর হবে। পাঁচ থেকে সাতটা এমওইউ স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। রেলওয়ে খাতে একটা এমওইউ হবে। দুই দেশের আর্মি স্টাফ কলেজের মধ্যে একটা এমওইউ হবে। লিগ্যাল জুডিশিয়াল সার্ভিসেসের মধ্যে কেপাসিটি বিল্ডিং-এর একটা এমওইউ স্বাক্ষর হবে। ব্লু-ইকোনোমি, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও প্রসার ভারতের (ভারতের জাতীয় টিভি) মধ্যে একটা এমওইউ হবে। এ রকম বিভিন্ন খাতে পাঁচ থেকে সাতটা এমওইউ স্বাক্ষর হবে।

সচিব মাশফি বিনতে শামস বলেন, আমাদের এখন পেন্ডিং ইস্যু নেই। তারপরও আমরা চাই, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। আমাদের এক্সপোর্ট বাড়ুক সেটা আমরা চাই। এ ব্যাপারে আমরা ভারতকে অনুরোধ করব। আমরা ভারত থেকে বিনিয়োগ চাই। ভারতেরও কিছু চাহিদা আছে। কানেক্টিভটি নিয়ে, সেগুলো তারা হয়ত পারসু করবে (তুলবে)।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রূপসা নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ হস্তান্তরের কাজ চলছে। হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর সফরেই এটি হস্তান্তর হবে। দুই দেশের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

দিন দুয়েক আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে ভারত। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের গুরুত্ব বোঝাতে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আসন্ন সফর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও দিন চারেক আগে ঢাকায় সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন অনেক পরিপক্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।


নয়া দিল্লিতে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে বরাবরের মতো বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তার জট খোলার বিষয়টি তুলবে ঢাকা। ঢাকার পক্ষ থেকে তিস্তার জট খোলা নিয়ে নয়া দিল্লিকে তাগাদা দেওয়া হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে বার্তা পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তিস্তা সবসময় আমাদের অগ্রাধিকারে থাকে। আমরা সবসময় ভারত সরকারকে এটা নিয়ে চাপ দিই। প্রধানমন্ত্রীর সফরেও তিস্তার প্রসঙ্গটি উঠবে। তবে এটা নিয়ে কোনো সুসংবাদ থাকছে বলে মনে হয় না।

এক যুগ পর দিন দশেক আগে নয়া দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সফরে কুশিয়ারার পানি উত্তোলনে সুরাহার বিষয়ে নয়াদিল্লি থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

যৌথ নদী কমিশনের সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ের দুটি বৈঠকে ঢাকার পক্ষে অংশ নেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান।

তিনি বলেন, জেআরসিতে আমরা কুশিয়ারার এমওইউ’র ব্যাপারে বেশি জোরালো দাবি জানিয়েছি। দাবি জানানোর পর তারা তাদের পয়েন্টে বলেছে, আমাদের মধ্যে যে এমওইউ ড্রাফটিংয়ের খুঁটিনাটি ছিল এটা ফাইনাল শেপে আসছে। তাদের যে স্টেটের ক্লিয়ারেন্স সেটাও হয়ে গেছে। এখন  মন্ত্রিপরিষদের একটা এপ্রুভাল দরকার আছে। হয়ত প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এমওইউটা স্বাক্ষর হতে পারে। পুরোপুরি রেডি, এখন তাদের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে। যদি তারা মনে করে এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরে এটা সাইন করবে, সাইন হতে পারে। যতদূর শুনেছি, তাদেরও একটা ইচ্ছা আছে, কুশিয়ারা প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে সাইন করার। তাদের (ভারত) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এটি।

যা থাকছে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে
চার দিনের সফরে আগামী সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নয়া দিল্লির উদ্দেশে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিনিধি দলে থাকবেন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সফরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন।

শেখ হাসিনা নয়া দিল্লি পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর মহাত্মা গান্ধীর সম্মানে রাজঘাটে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সফরে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ঐতিহাসিক হায়দ্রাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির দেওয়া রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। নয়া দিল্লিতে অবস্থানকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এবং কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সফরে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) কর্তৃক আয়োজিত বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে তার যোগদানের কথা রয়েছে।

এছাড়া তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ও গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ জন সদস্যের বংশধরদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর আজমির শরীফ জিয়ারতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে সবশেষ ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় তিন বছর পর আবার দেশটি সফরে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here