• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

ডলার নিয়ন্ত্রণে চতুর্মুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

দেশে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডলারের দাম রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে। কার্ব বা খোলা মার্কেটে ডলারের দাম ১১২ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। গতকালও সর্বোচ্চ ১১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। খোলাবাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাংকের নগদ ডলারের দাম। আমদানিকারদের পণ্য আমদানির ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রতি ডলারের জন্য ১০৫ টাকা থেকে ১০৮ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের এ অস্থিরতা থামছে না। এমনি পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে চতুর্মুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম কেউ বাড়াচ্ছে কি না তা তদারকি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১১টি টিম এক সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অভিযান শুরু করেছে। একই সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত দেশের মানিচেঞ্জারগুলোকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। গতকাল ১০টি টিম মানিচেঞ্জারগুলো পরিদর্শন করেছে। এমনকি কেউ অযৌক্তিকভাবে ডলারের দাম বাড়ালে লাইসেন্স বাতিলেরও হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে বাজার তদারকির পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ের হ্রাস টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলারের ওপরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হয়েছে। বলা হয়েছে এ ধরনের এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি জ্বালানি তেল, ভোগ্যপণ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র আশা করছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগের ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রিত হবে। কেউ কারসাজির মাধ্যমে বাজার ঘোলাটে করতে পারবে না।

অবশ্য ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর আগের মতো সব ব্যাংকে ডলার সরবরাহ করছে না। শুধু যারা সরকারি কেনাকাটা বিশেষ করে জ্বালানি তেল, সার, ভোগ্যপণ্য আমদানি করছে ওইসব ব্যাংকের চাহিদার একটি অংশ মেটাতে ডলার সরবরাহ করছে। কিন্তু অন্য সব এলসির ক্ষেত্রে ডলার সরবরাহ করছে না। এদিকে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যে ডলার প্রয়োজন তা সংগ্রহ করবে কোথা থেকে। বাধ্য হয়েই যেসব ব্যাংকের কাছে ডলার আছে তাদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্যে ডলার কিনে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কারণীয় কী হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তা বলে দিচ্ছে না। একদিকে ডলার সরবরাহ করা হবে না, অপরদিকে প্রয়োজন মেটাতে বেশি দামে ডলার কেনায় কড়াকড়ি করা হবে, তাহলে ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে কি না এমন প্রশ্ন করেন এক ব্যাংকার।

বাণিজ্যিক ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১১ টিম: 
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার তদারকিতে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন পরিদর্শন বিভাগ থেকে ১১টি টিম বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শনে নামানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ডলারের দরের চেয়ে এক টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় টাকা পার্থক্য হতো ব্যাংকের নগদ ডলারের মূল্যে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে ব্যাংকের নগদ ডলারের মূল্য ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে ব্যাংকগুলো সেখানে ডলার বিক্রি করছে ১০৫ টাকা থেকে ১০৮ টাকা পর্যন্ত। বাস্তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের এ মূল্যের কোনোই কার্যকারিতা নেই। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলোতে প্রকৃতপক্ষেই ডলার সঙ্কট রয়েছে নাকি কৃত্রিমভাবে ডলারের সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে তা তদারকি করার জন্যই ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগে লেনদেনে হানা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেখা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো বাস্তবে কী দরে বিদেশী মানিচেঞ্জারগুলোর কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে, আর বিক্রি করছে কত মূল্যে। কেউ ডলার লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিমুনাফা করছে কি না তা তদারকি করা হচ্ছে।

মানি চেঞ্জারগুলোতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার: ব্যাংকের মতো মানিচেঞ্জারগুলোতেও তদারকি জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খোলাবাজারে ডলারের মূল্য ১১২ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। গতকালও ১০৯ টাকা থেকে ১১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। কোনো মানিচেঞ্জার কারসাজির মাধ্যমে ডলারের মূল্য বাড়িয়ে অতিমুনাফা করছে কি না সেজন্য তদারকি করা হচ্ছে। ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। এ জন্য মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন তার সংগঠনের ৯ জন সদস্যকে নিয়ে দেখা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সাথে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে গভর্নরকে অনুরোধ ব্যবসায়ীদের: 
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের এ অস্থিরতা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। গতকাল গভর্নরের সাথে সাক্ষাৎ শেষে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ডলার নিয়ে যারা কারসাজি করেছেন বা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ঋণের বিপরীতে সুদের হার তুলে নেয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা আপাতত তুলে না নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা: 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কমাতে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য এক দিকে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ঋণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে শতভাগ মার্জিন দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হবে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের পণ্য আমদানিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ জন্য পাঁচ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলারের বেশি পণ্যের এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল ব্যাংকগুলোর জন্য এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখবে: 
এ দিকে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখা হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ২৮ দিনে ১১২ কোটি মার্কিন ডলার বিক্রি করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।

ডলারের বাজারে অস্থিরতা একটি গোষ্ঠীর কারণে: 
এ দিকে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একটি গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার কারণে ডলারের বাজার অস্থির হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থার অভাব, অকার্যকারিতা- একই সাথে বাজার অস্থির করে সেখান থেকে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। তবে কোন গোষ্ঠী বাজার অস্থির করছে তাদের নাম বলেননি সেলিম হোসেন। 

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বর্তমানে অচল। এটাকে সচল করতে হবে। চলমান ডলার বাজারের অস্থিরতায় হয়তো কোনো ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থা বাড়াতে হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here