• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

`শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখুন`:পাকিস্তানের ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের পত্রিকা ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’। ‘টেক অ্যাওয়ে ফ্রম বাংলাদেশ’স লিডারশিপ’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) প্রকাশিত নিবন্ধটির লেখক সাহেবজাদা রিয়াজ নূর। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সাহেবজাদা রিয়াজ নূর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন খোয়া প্রদেশের মুখ্য সচিব ছিলেন।

বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে রিয়াজ নূর বলেন, এই উন্নয়নের কৃতিত্ব দেশটির নেতৃত্বকে দেয়া যেতে পারে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন, এই সেতুকে দেশের ‘গর্ব ও সামর্থ্যের প্রতীক’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

নিবন্ধে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৯০ এর দশক থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা এবং পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে অর্থনৈতিক নীতির ভারসাম্যের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা তার বাবার সমাজতান্ত্রিক এজেন্ডা থেকে বাজারভিত্তিক পুঁজিবাদী প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলো থেকে শিখেছেন, যাদের অর্থনৈতিক সাফল্যের ভিত্তি চারটি। এই ভিত্তিগুলো হলো- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক উন্নয়ন, রপ্তানিকেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাণিজ্য নীতি উদারীকরণ এবং আর্থিক সংযম।

একটি সম্মেলনে এক অর্থনীতিবিদ যখন তাকে বাণিজ্য উদারীকরণের সুবিধা সম্পর্কে বলছিলেন, শেখ হাসিনা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, বাণিজ্য উদারীকরণের বিষয়ে আমাকে বোঝাতে হবে না। আমি যখন যুগোশ্লাভিয়া সীমান্তবর্তী ইতালির শহর ত্রিয়েস্তে আমার পদার্থবিদও পরমাণু বিজ্ঞানী স্বামীর সঙ্গে থাকতাম, তখন দেখেছি, সীমান্ত সপ্তাহে তিন বার খোলা থাকছে এবং দুই পাশ থেকে মানুষ যাতায়াত করছে। পণ্য কিনছে এবং আবার ফিরে যাচ্ছে।’ এতে এটিই প্রমাণ হয়, রাজনীতিবিদরা সাধারণত যে সব বিষয়ে আকৃষ্ট হন, তার পরিবর্তে শেখ হাসিনা অর্থনীতির দিকে আন্তরিকভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন।

১৯৭১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে জবাবদিহিতার অভাব এবং সামরিক শাসনের প্রভাব থাকলেও ২০০৯ সাল থেকে সেনাবাহিনী অন্তরালে রয়েছে। বেসামরিক সরকারগুলোর ঘন ঘন পা পিছলে পড়া এবং সরকারগুলোর সামান্য বৈধতা বা অবৈধতার অভিজ্ঞতা পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির গণতান্ত্রিক ইতিহাস মোটেই নিষ্কলঙ্ক নয় এবং এখানকার সরকার দুর্নীতি ও অদক্ষতার বিষয়ে জনসাধারণের সমালোচনা বারবার এড়িয়ে গেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক দূরদর্শী এবং দৃঢ় প্রত্যয় ধারণ করেছেন।

তিনি মনে করেছেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতিই দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র উপায়।
বিরোধীদেরকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ থাকলেও ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের তুলনায় ১৯৭০ সালে দেশটি ৭৫ শতাংশ দরিদ্র ছিল, কিন্তু এখন পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ ধনী।

পাকিস্তানের তুলনায় ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ অংশে জনসংখ্যা ১ কোটি বেশি ছিল। আর এখন পাকিস্তানের ২৩ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ৪৭ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ২৮ বিলিয়ন ডলার।

পাকিস্তানের ১ হাজার ৫৪৩ ডলারের তুলনায় বাংলাদেশে এখন মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার। বাংলাদেশে ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪১১ বিলিয়ন, পাকিস্তানে তা ৩৪৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ, পাকিস্তানে আগে যা ছিল ১২-১৫ শতাংশ। পাকিস্তানে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ২১ শতাংশ হয়েছে। ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া, পাকিস্তানি রুপির তুলনায় বাংলাদেশি টাকা অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অধিক হারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাক্ষরতার হার অনেক বেশি।

বাংলাদেশের উদাহরণ অনুসরণ করে পাকিস্তানি নেতৃত্বকে অবশ্যই জাতীয় লক্ষ্য হিসেবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ অনুসরণ করতে হবে এবং আঞ্চলিক শান্তির পাশাপাশি সাংবিধানিক শাসনকে এগিয়ে নিতে হবে।

কার্যকর প্রতিরক্ষার সঙ্গে আপস না করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্য উদারীকরণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ভারত, ইরান, চীন, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধির মডেল তৈরির ক্ষেত্রে উচ্চ-মূল্য-সংযোজিত পণ্যের ওপর ফের জোর দেয়া উচিত।

পাকিস্তান তুলনামূলক সস্তা শ্রমের যে সুবিধা ভোগ করছে সেটিকে উন্নত দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার দিকে নিয়ে যেতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে নারীদের জন্য শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ এবং অনুকূল আইনি পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কৃষি আয়ের ওপর একটি ন্যায্য কর আরোপের শক্তিশালী প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন। ধনী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ অবদান রাখতে হবে। বড় কর্পোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলোকে করের আওতায় আনতে হবে।

পাকিস্তানের নেতৃত্ব বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। তবে প্রধান পদক্ষেপটি হওয়া উচিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারের বিষয়টি অনুসরণ করা, যা প্রতিরক্ষা এবং গণতন্ত্র উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: বাসস

Place your advertisement here
Place your advertisement here