• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

খালিদের স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী খালিদ হাসানের স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তার পড়াশোনার খরচসহ দেওয়া হবে ঘর ও প্রতি মাসের খাদ্য সহায়তা। উপজেলা প্রশাসনের মানবিক সহায়তা তহবিল থেকে খালিদ হাসানের পড়াশোনার খরচ বহনের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন।

জানা গেছে, খালিদ হাসানের বাবার বাড়ি গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নে। ১০-১২ বছর আগে তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর আলাদা সংসার গড়ে তোলেন এবং মা ও ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। সেই থেকে খালিদ হাসান তার মায়ের সঙ্গে গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের পূর্বপাড়ায় মামা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। অনেক কষ্টে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করাতে পারলেও পরবর্তীতে খালিদ হাসানের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েন মা।

এ অবস্থায় সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে খালিদ ও তার মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে দেখা করে কষ্টের কথা জানান। এরপরই তাৎক্ষণিক খালিদ হাসানের পড়াশোনার খরচ চালানোসহ তাকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন।

কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থাপত্য প্রকৌশল বিভাগের ডিপ্লোমা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ। তার স্বপ্ন তিনি দেশের একজন বড় স্থপতি (আর্কিটেক্ট) হবেন।

খালিদ হাসান বলেন, ইউএনও স্যারের সহায়তার আশ্বাসে পড়াশোনার খরচ চালানোর দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। আমি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালিদ হাসানের বাবা একজন রিকশাচালক। ছেলের পড়াশোনাসহ অন্যান্য খরচ অল্প কিছুদিন তার বাবা দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন এবং খালিদকে তার মাসহ বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর খালিদ তার মাসহ মামা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানেও সবার অভাবের সংসার। খেয়ে না খেয়ে চলে মা-ছেলের জীবন। একপর্যায়ে টাকার অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় খালিদের পড়াশোনা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন বলেন, সোমবার ছেলেটার মা সকাল থেকে আমার সঙ্গে দেখা করবেন বলে অফিস রুমের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। আমি প্রশাসনিক কাজে বাইরে থাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দুপুরে আমি রুমে ঢুকতেই আমার পেছন পেছন তিনিও ঢুকলেন। আমি তার দিকে তাকালাম। তার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল তখন। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারছিলেন না। অনেকক্ষণ পর সব ঘটনা খুলে বলেন।

জানালেন, আগের রাত থেকে তিনি আর তার ছেলে কিছুই খাননি। ভাই ও ভাবি তাকে এবং তার ছেলেকে বাড়ি ছাড়তে বলেছেন। এমন না খাওয়া অবস্থা প্রায়ই হয় তাদের। তারপর তিনি তার ছেলের কথা বললেন।

ইউএনও বলেন, ছেলেটা লজ্জায় আমার রুমে আসেনি। নিচে দাঁড়িয়েছিল। আমি ছেলেটাকে নিয়ে আসতে বললাম। মা-ছেলের দুজনের কষ্টের জীবন আর স্বপ্নগুলো আমি শুনলাম। আমারও চোখগুলো তখন ছলছল করছিল জলে। তবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল, আমি এমন অসহায় মা-ছেলের অন্ধকার জীবনে হয়ত একটু আলো দিতে পারব ভেবে।

এরশাদ উদ্দীন বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক তাদের জন্য একটা ঘর করে দেওয়া হবে। আপাতত তাদেরকে এক মাসের চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক জিনিস দেওয়া হয়েছে। ছেলেটার পড়াশোনা, থাকা, খাওয়ার যাবতীয় খরচ মানবিক সহায়তা বক্সে প্রাপ্ত অর্থ থেকে দেওয়া হবে।
#জাগোনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

Place your advertisement here
Place your advertisement here