• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

১৩০ নেতার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

একষট্টি জেলা পরিষদের প্রশাসক পদের জন্য আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১৩০ নেতার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। তিনি সেখান থেকেই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করবেন। এর বাইরেও কয়েকজন নিয়োগ পেতে পারেন।

বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে কমপক্ষে দু'জন বাদ পড়তে পারেন বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাদের নাম রাখা হয়নি সম্ভাব্য তালিকায়। তবে জেলা পরিষদের বেশিরভাগ বিদায়ী চেয়ারম্যানেরই প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে রাজনীতিক নাকি আমলাদের আনা হবে- সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি আমলাদের কয়েকজন থাকবেন। তবে রাজনৈতিক নেতাদের প্রাধান্য থাকবে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, দলের আটটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা এরই মধ্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে সম্ভাব্য দলীয় নেতাদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বে থাকা দলের সংশ্নিষ্ট সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা পর্যায় থেকে নামের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিটি জেলার জন্য কমপক্ষে দু'জন নেতার নাম জমা দিয়েছেন।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে কিংবা এর আগে নানা কারণে বিতর্কিত এবং জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন অথবা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রশাসক হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। সে ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট জেলাগুলোতে আমলাদের নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ওই সব জেলায় তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতাদেরও প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।

জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে ঈদুল ফিতরের আগে যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারির সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ঈদুল ফিতরের পরেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আজ বুধবার জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পরেই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হবে।

আওয়ামী লীগের তালিকায় জেলা পর্যায়ে সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য, দক্ষ, সৎ এবং প্রবীণ নেতারাই স্থান পেয়েছেন। এই তালিকায় প্রায় সব ক'জন বিদায়ী চেয়ারম্যানের নাম রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে সাবেক এমপি এবং কয়েকজন নারী নেত্রীর নামও। টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলমগীর খান মেনুর নামও প্রশাসকের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।

সুনামগঞ্জের বিদায়ী চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুটের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের নাম রয়েছে প্রশাসকের তালিকায়। নেত্রকোনার বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়ের সঙ্গে রয়েছে দলের জাতীয় পরিষদ সদস্য অসিত সরকার সজলের নাম। কিশোরগঞ্জের বিদায়ী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল অ্যাডভোকেট।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন জয়নাল আবেদিন। এ জেলার সম্ভাব্য প্রশাসকের তালিকায় রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। ঢাকার বিদায়ী চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে দলের জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল বাতেনের নাম রয়েছে।

শেরপুরের বিদায়ী চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির রুমানের নাম সম্ভাব্য তালিকায় নেই। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তালিকায় তার নামে আসেনি। এই জেলার প্রশাসক পদে সম্ভাব্যরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন পাল ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সানু। নারায়ণগঞ্জের বিদায়ী চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তালিকায় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের নাম।

মৌলভীবাজারের বিদায়ী চেয়ারম্যান হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। তার সঙ্গে প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দা সায়েরা মহসিন সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন। নরসিংদীর বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়ার সঙ্গে নাম আছে আওয়ামী যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের।

জামালপুরের বিদায়ী চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নাম সম্ভাব্য তালিকায় নেই। তিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছিলেন। এবার এই জেলার প্রশাসক পদে দলের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের দু'জন সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ার ও মির্জা সাখাওয়াত উল আলম মনি। মুন্সীগঞ্জের আছেন বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।

ফরিদপুরের বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টারের সঙ্গে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা হাসান। মানিকগঞ্জের বিদায়ী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের নামও প্রশাসকের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।

হবিগঞ্জের বিদায়ী চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীর পাশাপাশি হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর নাম প্রশাসক পদে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে। গাজীপুরের বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামানের সঙ্গে প্রশাসক পদে তার সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন দলের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হারিছ উদ্দিন আহমদ। রাজবাড়ীর বিদায়ী চেয়ারম্যান ফকির আবদুল জব্বারের সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলীর নাম রয়েছে তালিকায়।

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ আলী আকন্দ প্রশাসক পদের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন। গোপালগঞ্জে আছেন বিদায়ী চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান। মাদারীপুরের বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী। প্রশাসক পদে তার সঙ্গে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার। শরীয়তপুরের বিদায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবিদুর রহমান খোকা শিকদারের সঙ্গে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে।

এ ছাড়া প্রশাসক হিসেবে সম্ভাব্য তালিকায় বরগুনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর, পটুয়াখালীর সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, ভোলার সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন টুলু, বরিশালের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, ঝালকাঠির সভাপতি সরদার মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, পিরোজপুরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম হাওলাদারের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১৭ এপ্রিল মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১টি জেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রুটিনমতো দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা। জেলা পরিষদের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত একজন প্রশাসক পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ওই প্রশাসক রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক কিংবা আমলা হতে পারেন। আর আইন অনুযায়ী, দলীয় নেতাদের প্রশাসক পদে দায়িত্ব দেওয়ার বেলায় কোনো ধরনের আইনি বাধা নেই।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ সচল হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে মন্ত্রী কিংবা এমপি হতে পারেননি- দলের এমন নেতারা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। তারা প্রায় পাঁচ বছর ওই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান পায়। তাদের মেয়াদ পূর্ণ হলেও পরবর্তী নির্বাচন হয়নি। এ অবস্থায় গত ১৩ এপ্রিল জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার আইন (জেলা পরিষদ) (সংশোধন) পাস হয়। এর চার দিন পর নির্বাচিত জেলা পরিষদ ভেঙে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here