• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

ঘর নাই, মাইয়ারে বিয়া দিতে পারতেছি না

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

দীর্ঘদিন রোগে ভুগে তার স্বামী মারা গেছেন গত মে মাসে। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ। ভিটেমাটি হারিয়ে এক মেয়েকে নিয়ে এখন তার আশ্রয় হয়েছে সড়কের পাশে অন্যের জায়গায়। নিজে ঘর করা বা উপযুক্ত মেয়ের বিয়ে দেওয়া তো দূরে থাক, অভাবের সংসারে খাবার জোগানোই তাদের জন্য কষ্টের।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের চৌদ্দহাত কালিতলা গ্রামে রাস্তার ধারে এমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধ হাজেরা বেগম ও তার মেয়ে।

তার স্বামীর নাম মৃত হজরত আলী। পরিবারে তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অভাবের তাড়নায় দুই ছেলে ও ছোট মেয়ে একদিন চলে যান ঢাকায়। সেখান থেকে বড় ছেলে চলে যান ভারতে। আর ফেরেননি। ছোট ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাবার চিকিৎসায় বাড়িতে এসে মেয়ে আর যাননি। এখন মায়েন সঙ্গেই থাকেন তিনি।

জানা যায়, ছোট ছেলে শহরে এক মামলায় পড়লে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ভিটেমাটি ছাড়া জমানো কোনো টাকা নেই হজরত আলী ও হাজেরা দম্পতির কাছে। উপায় না পেয়ে ঘরসহ ভিটেমাটি বিক্রি করে ছেলেকে টাকা পাঠিয়ে দেন। এদিকে জমি দলিল করে দেওয়ার পর ছেড়ে দিতে হয় ভিটা। হাতে অবশিষ্ট কিছু টাকা ছিল, তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ও ওষুধ খেতেই চলে গেছে। পরে কোনো উপায় না পেয়ে রাস্তার পাশে অন্যের একটি জরাজীর্ণ ঘরে আশ্রয় নেন তারা।

এখানে ওঠার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন চলত হাজেরা-হজরত দম্পতির। নানা রোগ আর বয়সের ভারে কয়েক মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন হজরত আলী। বাবার চিকিৎসার জন্য বাড়ি চলে আসেন মেয়ে আমেনা (২০)। জমানো টাকা দিয়ে চিকিৎসা করালেও গত মে মাসে তাদের ছেড়ে চলে যান তার বাবা। এখন বৃদ্ধ মা ও মেয়ে রাস্তার ধারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

হাজেরার মেয়ে আমেনা বলেন, আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আমি আর মা এখানে কষ্ট করে থাকছি। মা বয়সের কারণে কাজ করতে পারেন না। আমি চাতালে কাজ করি। যা হয় তা দিয়ে জীবন চালাই। তবে সারা দিন কাজ করে রাতের বেলায় রাস্তার পাশে থাকা খুব কষ্টের। আমাদের পেছনে সরকারি ঘর বানাচ্ছে। যদি আমাদের একটা ঘর দেয় সরকার, তাহলে মাকে নিয়ে ভালোভাবে থাকতে পারব। 

হাজেরা বেগম বলেন, আমার মাইয়াটা বিয়ার উপযুক্ত। ঘর নাই, মাইয়াটারে বিয়া দিতে পারতেছি না। আমি বিয়ের কথা বললেও সে আমাক ছেড়ে যাবে না। অনেক কষ্ট করে আমরা মা-মেয়ে এখানে থাকি। রাতে ঘুম হয় না। ঘর থেকে বের হলেই গাড়ির ভয়। আমাদের একটা থাকার জায়গা দিলে উপকার হবে আমাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে হজরত চাচা মারা গেছেন। তারা অনেক কষ্ট করে চলেন। চাচা শেষ সময়ে এসে লাঠি ছাড়া চলতে পারতেন না। আমি দেখেছি তারা মুড়ি খেয়ে দিন কাটাত। আমরা মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করেছি। এখন বৃদ্ধা ও তার মেয়ে একসঙ্গে থাকেন। এটা একটা সচল রাস্তা। সব সময় যানবাহন চলাচল করে। যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। তাদের যদি একটা ঘর দেওয়া হয় সরকারিভাবে, তাহলে তারা ভালোভাবে থাকতে পারবেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম বলেন, আসলে উনারা খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছেন। আমরা হাজেরা চাচির জন্য সরকারি ঘরের বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করা যায় উনারা পাবেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আসলে অনেক কষ্টের। মা-মেয়ের মানবেতর জীবনযাপন। তারা যদি প্রকৃত অর্থে ভূমিহীন হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
###ঢাকা পোস্ট

Place your advertisement here
Place your advertisement here