• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

দেশের মাটিতে প্রথমবারের মত ধানের তুষ দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সিলিকা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

সাদা সোনা খ্যাত সিলিকা। এটিকে সিলিকন ডাই অক্সাইড বলা হয়ে থাকে। এটি সাবান, সিরামিক, কাগজ, পেপার বোর্ড, পানি পরিশোধনাগার, ভবন নিমার্ণ, গার্মেন্টস, পেট্রোলিয়াম এবং মেটাল তৈরিতে কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বাৎসরিক ভাবে সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা আনুমানিক ২,০০০ মেট্রিক ট্রন পেরিয়েছে। যে হারে শিল্প কলকারখানা বাড়ছে এর চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।

দেশে বিপুল পরিমাণে সোডিয়াম সিলিকেট (সিলিকা) তৈরির কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর সোডিয়াম সিলিকেট আমদানি করার জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। দেশের মাটিতে সিলিকা তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৫৫-৬০ ভাগ সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।

তবে ভাল খবর হল দেশের মাটিতে প্রথমবারের মত ধানের তুষ দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সিলিকা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামে সাসটেইনেবল এনার্জি এন্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেড (সোর্স) নামে একটি প্রতিষ্ঠান সিলিকা উৎপাদনের কাজ করছে।

ধান থেকে চাল প্রক্রিয়াজাত করার পরে আমরা একটি বর্জ্য পেয়ে থাকি। যে বর্জ্যটির নাম হল তুষ। জানা যায়, তুষকে পুরিয়ে ছাই করলে ৬০-৭০ ভাগ সিলিকা পাওয়া যায়। এটি কষ্টিক ডাইজেশন করে সোডিয়াম সিলিকেট তৈরি করে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা যায়।

প্রথমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধানের তুষের ছাই মেপে ডাইজেস্টরে নিয়ে কষ্টিক সোডা দিয়ে ডাইজেসন (অনবরত নাড়ান) করা হয়। ডাইজেশন প্রক্রিয়াটি ১০০-১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১-২ ঘণ্টা চালানো হয়। এখান থেকে যে ধোঁয়াটি বের হয় সেটি বাইরে ছেড়ে না দিয়ে সেটা দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। উৎপন্নকৃত বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে বাইরে থেকে কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন পরে না। এরপর তরল সোডিয়াম সিলিকেট ২-৩ মাইক্রন ছাকনি দ্বারা ছাকা হয়। এতে বিশুদ্ধ তরল সোডিয়াম সিলিকেট পাওয়া যায়। চাহিদা অনুযায়ী সোডিয়াম সিলিকেটে পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি বাষ্পীভূত করা হয়। এরপর এই বিশুদ্ধ সোডিয়াম সিলিকেট ২৫০ লিটার স্টিলের ড্রামে ভরে বাজারজাত করা হয়। ছাকনি হতে প্রাপ্ত বর্জ্য পদার্থ এক্টিভেটেড কার্বন ড্রাইয়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়।

উৎপাদন অনুযায়ী বাজারের চাহিদা অনেক পরিমাণে বেশি। স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদন বাড়িয়ে বাজার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটির ফোরম্যান দুলাল হোসেন বলেন, আমরা এ প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন কর্মরত আছি। প্রায় ছয় বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাথে আছি। ছয় মাস থেকে আমাদের প্রোডাকশন হচ্ছে। আমরা ধানের তুষ থেকে সিলিকা পাউডার তৈরি করছি, পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। যারা কাজ করি একেকজন একেকটি মেশিন দেখাশুনি করি। আর এখানে সবাই আমরা মাসিক বেতনে কাজ করছি।

প্লান্টটি দেখতে আসা হাসিনুর রহমান বলেন, প্লান্টটির কথা জানতে পেরে দেখার খুব আগ্রহ ছিল। আজকে সরাসরি পুরো প্ল্যান্টটি দেখলাম। সত্যিই এটি প্রশংসার দাবি রাখে। তুষ দিয়ে তারা সিলিকা উৎপাদনের পাশাপাশি এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পুরো প্লান্টটি পরিচালনা করছে। এটি অনেক ভাল ও পরিবেশবান্ধব। ঠাকুরগাঁওয়ের মত একটি জেলায় শিল্প কারখানায় মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে বলে আমি আশা করছি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রকৌশলী মানিক হোসেন বলেন, আমরা ধানের তুষ দিয়ে সিলিকা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। যে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি প্ল্যান্টের মধ্যে এটি একটি। আমাদের পুরো প্রক্রিয়াটি শতভাগ পরিবেশবান্ধব। আমরা আশা করছি এটির মাধ্যমে আমরা দেশের যে সিলিকার চাহিদা তা মেটাতে সক্ষম হব।

সাসটেইনেবল এনার্জি এন্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেডের (সোর্স) ম্যানেজিং ডাইরেক্ট মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ইটকলের আর্থিক সহযোগিতায় আমাদের এ প্রজেক্ট। আমরা এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ৫০০ কেজি সিলিকন পার অক্সাইড পাউডার তৈরি করছি। যেহেতু এটি দেশে পাওয়া যায় না আমদানি করা ছাড়া, তাই এর চাহিদা অনেক বেশি। আমরাই প্রথম দেশে সিলিকা তৈরি করছি ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here