• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ভুট্টাগাছ ও ঘাসের ডাটা থেকে গুড় তৈরি করেছেন রংপুরের কৃষক ভুট্টু 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

ভুট্টাগাছ ও ঘাসের ডাটা থেকে গুড় তৈরি করেছেন রংপুরের এক কৃষক। নতুন এ গুড়ের স্বাদে তৃপ্ত স্থানীয়রাও। বিষয়টি গত কয়েক দিন ধরে সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। সবাইকে তাক লাগিয়ে পরিত্যক্ত ভুট্টাগাছ আর নেপিয়ার ঘাসের গাছের মাড়াই করা রসে গুড় করেছেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টু। ইতোমধ্যে তার উদ্ভাবিত এ গুড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন সাড়া ফেলেছে, তেমনি মন কেড়েছে গ্রামের মানুষের।

কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টু পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের ঝাড়বিশলা গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় এক বছর ধরে তিনি বাড়ির পাশের একটি গরু খামারে কাজ করছেন। সেখানে নিয়মিত নেপিয়ার ঘাস ও ভুট্টাগাছ মেশিনে কেটে খামারের গরুকে খাওয়ান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ ব্যতিক্রম চিন্তা চেপে বসে কৃষক ভুট্টুর মাথায়। এরপর যেই ভাবনা সেই কাজ করে বসেন তিনি। ভুট্টাগাছ ও নেপিয়ার ঘাসের পাতা ও কান্ড (ডালপালা) জড়ো করে রস মাড়াই করেন। সেই রস চুলায় জ্বালান। রসের কষ জমাট বেঁধে তৈরি হয় গুড়। একইভাবে আরেক দফায় আরো বেশি করে ঘাসের ডাটা ও ভুট্টাগাছ অন্যের আঁখ মেশিনে মাড়াই থেকে রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন। ভুট্টাগাছ থেকে ভুট্টুর গুড় তৈরি দেখতে কৌতুহলী গ্রামবাসী তার বাড়িতে ভিড় করেন। অনেকেই নতুন স্বাদের সেই গুড়ে পরিতৃপ্তির ঢেকুর গিলছেন।

গুড়ের নতুন এ উদ্ভাবন নিয়ে আনন্দিত কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টু। সরকারি পৃষ্টপোষকতা মিললে ভুট্টাগাছ ও ঘাসের গুড়ে নিজের পাশাপাশি এলাকার অনেকের জীবন বদলে দিতে চান দরিদ্র এ কৃষক। একই সঙ্গে বাজারজাতকরণেও চাইছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা। স্থানীয়রাও চাইছেন ব্যতিক্রমী এ গুড় উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারজাতকরণে কৃষক ভুট্টুকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা করা হোক।

ভিন্ন স্বাদের গুড় তৈরির গল্প প্রসঙ্গে কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টু বলেন, আমি এক বছর ধরে গরুর খামারে কাজ করি। সেখানে ভুট্টাগাছ-ঘাস কেটে কেটে গরুকে খাওয়াতে হয়। কিন্তু গরুতো ভুট্টাগাছের ডাটা (কান্ড) খায় না। আমি কয়েকদিন ওই ডাটা কেটে কেটে দাঁতে চিবিয়ে দেখেছি। ভুট্টাগাছের রস মিষ্টি লাগত। তখনই ভাবতে থাকি, আঁখ থেকে যদি গুড় হয়, তাহলে ভুট্টা থেকে হবে না কেন? এরপর ভুট্টার গাছসহ নেপিয়ার ঘাস গাছ মাড়াই করে রস থেকে গুড় তৈরি করি।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির পাশে আঁখ মাড়াই করা মেশিন আছে। সেখান থেকে মাড়াই করে রস সংগ্রহ করি। এরপর সেটা হাড়িতে একটু জ্বাল করেছি। এসময় রস জমাট বেধে একদম গুড়ের মতো হয়। আমি সেটা গ্রামের অনেক লোকজনকে খেতে দিয়েছি। সবাই খেয়ে বেশ খুশি হয়েছে। আমাকে উৎসাহ দিয়েছে।

কৃষক ভুট্টু বলেন, আমি গরির মানুষ। এই গুড় তৈরির বিষয়টি যদি সরকার গুরুত্বসহ দেখে তাহলে ভুট্টাগাছ এবং ঘাস গাছ থেকেও গুড় তৈরি সম্ভব হবে। আমাকে যদি সহযোগিতা করা হয়, তাহলে আমি ভালোভাবে সংসার চালাতে পারব। আমাকে যদি এই গুড় তৈরি এবং বাজারজাত করার সুযোগ করে দেয়া হয়, তাহলে সবাই উপকৃত হবে। গুড়ের চাহিদা পূরণে আমি ভূমিকা রাখতে পারব। এজন্য আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।

মোহাম্মদ আলী ভুট্টুর স্ত্রী আদুরী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হামরা তো প্রথমে পাগলামি মনে করছি। যখন সত্যি সত্যি রস থাকি গুড় বানা হইল, তখন তো ভালো নাগছে। এ্যলা গ্রামের সবায় আসি আসি হামার কাছ থাকি গুড় নিয়্যা যাওছে। সরকার যদি চায়, তাইলে এই গুড় দিয়্যা কিছু একটা করা সম্ভব।

স্থানীয় গ্রামবাসী বলছেন, নতুন এ গুড় মিষ্টি এবং ভিন্ন স্বাদযুক্ত। ছোটবড় সব বয়সী মানুষ এ গুড়ের স্বাদ নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কারো কোনো সমস্যা হয়নি। অনেকেই ভুট্টুর কাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে নিজেরাও জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেছেন। যা ইতোমধ্যে গ্রামের সবার কাছেই বেশ সাড়া ফেলেছে। আর এ গুড় তৈরির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রতিবেশী হামজা বলেন, আমি দুই দিন ওই গুড় তৈরি করা দেখেছি। পরে অন্যদের মতো আমি নিজেও খেয়ে দেখেছি। আঁখ, তাল, খেঁজুরের গুড়ের মতোই আমি ভুট্টা গাছের গুড়েও একই স্বাদ পেয়েছি। নতুন এ গুড় অনেকেই খেয়েছেন। কারো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।

স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি এ ঘটনাটি জানার পর সেখানে গিয়ে ভুট্টাগাছ এবং নেপিয়ার ঘাস গাছের রস থেকে গুড় করতে দেখেছি। প্রথমে একটু পাগলামি মনে হয়েছে। কিন্তু পরে রস তৈরি করা গুড় খেয়ে দেখেছি, এটা অন্য গুড়ের মতোই। স্বাদেও একটু ভিন্নতা আছে তবে মিষ্টি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে, হয়তো এ গুড় বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

এদিকে কৃষক মোহাম্মদ আলী ভুট্টুর নতুন উপকরণে গুড় তৈরির উদ্যোগের প্রশংসা করছেন চৈত্রকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান শাহ্। তিনি বলেন, ভুট্টুর এমন উদ্যোগ সবাইকে অবাক করেছে। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি। পরিত্যক্ত ঘাসের ডাটা ও ভুট্টাগাছ থেকে তৈরিকৃত গুড় আমার খুব ভালো লেগেছে। তবে সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে দেশে গুড়ের চাহিদা পূরণে এ গুড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে কৃষকরাও লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর রংপুরের (পীরগঞ্জ) আঞ্চলিক প্রধান কৃষিবিদ ড. মো. ছাদেকুল ইসলাম বলেন, উদ্যোগটি খুবই ভালো। এটি নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তবে ভুট্টাগাছ এবং নেপিয়ার ঘাস যেহেতু ফোডার ক্রপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে গুড় তৈরি হওয়াতে এটি পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপার রয়েছে। ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে মানুষের মানবদেহে বা স্বাস্থ্যের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা আগে সেটা নিশ্চিত হতে হবে। তারপর আমরা বাজারজাত করতে পারি।
#ঢাকা পোস্ট

Place your advertisement here
Place your advertisement here