• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ইসলামে ওজুর বিকল্প তায়াম্মুম

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

তায়াম্মুম:

ইসলামের বিধান অনুসারে, তায়াম্মুম (تيمم‎‎) হলো ওজু বা গোসলের বিকল্প স্বরূপ বালি, মাটি বা ধূলা দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা।

পবিত্র পানি অলভ্য হলে, কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করে তায়াম্মুম করতে হয়।

তায়াম্মুম (التيمم) অর্থ ‘সংকল্প করা, ইচ্ছা করা’। পারিভাষিক অর্থে- ‘পানি না পাওয়া গেলে ওজু বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহান আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি।

তায়াম্মুমের কথা পবিত্র কোরআন মাজীদে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন যে,

وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ-

‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো বিপদ সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পাক-পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর বর্ষণ করতে, যাতে তোমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সূরা: মায়েদাহ , আয়াত ন: ৬)

এবং হাদীসে এসেছে যে, আবু যার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়।’ ( নাসাঈ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৩২৪)

তায়াম্মুমের বিধানের পটভূমি:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম– এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি মূলত তায়াম্মুমের মূল পটভূমি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই তায়াম্মুমের আয়াতটি নাজিল হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূল (সা.) এর সঙ্গে কোনো এক সফরে বেরিয়েছিলাম। যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌছালাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। রাসূল (সা.) সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তার সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তারা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রা.) এর কাছে এসে বললেন- ‘আয়িশা কি করেছে আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূল (সা.) ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তারা পানির নিকটে নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। আবূ বকর (রা.) আমার নিকট আসলেন, তখন রাসূল (সা.) আমার উরুর ওপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রা.) বললেনঃ তুমি রাসূল (সা.) ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছো! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। ‘আয়িশা (রা.) বললেন আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। রাসূল (সা.) ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তায়ালা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তারপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন।

উসায়দ ইবনু হুযায়র (রা.) বলেছেনঃ হে আবূ বকরের পরিবার বর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রা,) বলেনঃ তারপর আমি যে উট এ ছিলাম তাকে দাড় করালে দেখি আমার হার খানা তার নীচে পড়ে আছে।’ (বুখারী, ফৎহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৮ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮)। (৭৮), মায়েদাহ ৫/৬, নিসা ৪/৪৩। (৭৯) . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৮ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০। (৮০), আবুদাঊদ হা/৩৩০, অনুচ্ছেদ-১২৪; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬)

মূলতঃ তায়াম্মুমের হুকুম একটি পুরস্কার- যা এ উম্মতেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ তায়ালার কতই না অনুগ্রহ যে, তিনি ওজু-গোসল প্রভৃতি পবিত্রতার নিমিত্ত এক বস্তুকে পানির স্থলাভিষিক্ত করে দিয়েছেন, যার প্রাপ্তি পানি অপেক্ষাও সহজ। বলাবাহুল্য, ভূমি ও মাটি সর্বত্রই বিদ্যমান। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, এ সহজ ব্যবস্থাটি একমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদীকেই দান করা হয়েছে।

তায়াম্মুমের নিয়ম:

তায়াম্মুমের অনুমতি উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য মহান আল্লাহর এক বিশেষ দান। বস্তুত পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি। যা মহান আল্লাহ তায়ালা পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করে রেখেছেন । তারপরও অবস্থার আলোকে যদি পানি না পাওয়া যায় বা বান্দা অসুস্থ হয়ে পানি ব্যবহারে অপারগ হয়, সে সময় কি করবে।

সেই অবস্থার কথা বর্ননা করে মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও; অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান- যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।’

তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি যথা:

(১) পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা, (২) উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা, এবং (৩) উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় কনুই মাসেহ করা।

তায়াম্মুমের সুন্নাত ৭টি যথা:

(১) তায়াম্মুমের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ বলা’, (২) উভয় হাত পাক পাটিতে মেরে সামনের দিকে নেয়া, (৩) তার পর পিছনের দিকে নিয়ে আসা, (৪) হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা, (৫) মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা, (৬) মাসেহের তারতিব ঠিক রাখা, (৭) বিরতিহীনভাবে তায়াম্মুম করা অর্থাৎ উভয় মাসেহে বিলম্ব না করা।

তায়াম্মুমের মুস্তাহাব:

যে ব্যক্তির প্রবল ধারণা যে, শেষ সময় পর্যন্ত পানি পাওয়া যাবে, এমন ব্যক্তির জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আর যদি পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।

আজকের এই পর্বে তায়াম্মুম কি, এর পটভূমি, তায়াম্মুমের নিয়মাবলী, তায়াম্মুমের ফরজ, সুন্নাত মুস্তাহাব ইত্যাদি আলোকপাত করা হয়েছে।

ইসলামে ওজুর বিকল্প তায়াম্মুম (পর্ব-২) এ যেসময়গুলোতে তায়াম্মুম বৈধ, যেসব বস্তু বা যা দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়, যে কাজগুলোর দ্বারা তায়াম্মুম নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here