• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

শুভ জন্মদিন: নিভৃতচারী কল্যাণময়ী শেখ রেহানা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

এম নজরুল ইসলাম  

জগৎসংসারে এমন কিছু মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা নিজেদের নিয়ে কখনো উদগ্রীব হননি। আবার পাদপ্রদীপের আলোয় কখনো নিজেদের আলোকিত করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আড়াল করে রেখেছেন সব কিছু থেকে। এমন নির্মোহ থাকা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। বিশেষ করে রাজনৈতিক আবহে যাঁদের বেড়ে ওঠা, তাঁদের পক্ষে নিভৃত জীবন কাটানো একেবারেই অসম্ভব বলেই মনে হয়।

তবে নিতান্ত সাদামাটা জীবনে যাঁরা অভ্যস্ত, ক্ষমতা কখনো তাঁদের মোহভঙ্গের কারণ হতে পারে না। এমনই এক আড়ালচারী মানুষ শেখ রেহানা। আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

কৈশোর-উত্তীর্ণ বয়সে হারিয়েছেন মা-বাবা, ভাইদের। হারিয়েছেন স্বদেশের আশ্রয়। দেশে দেশে ঘুরেছেন গৃহহীন, আশ্রয়হীন পরিবেশে। নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল না কোথাও। ছিল না নিশ্চিত জীবনযাপনের নিশ্চয়তাও। লড়াই করতে হয়েছে দারিদ্র্যের সঙ্গে। উপার্জনের জন্য নিজেকে নিযুক্ত করতে হয়েছে নানা কাজে। কিন্তু কোনো দিন ভেঙে পড়েননি তিনি। বড় বোন শেখ হাসিনা এসেছেন রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে। শেখ রেহানা কখনো রাজনীতিতে শামিল হওয়ার কথা ভাবেননি। কিন্তু নেপথ্যে বড় বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, তখন তাঁর দুই সন্তান জয় ও পুতুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শেখ রেহানা।

জাতির পিতার কন্যা তিনি। কিন্তু জীবনটা তাঁর জন্য সহজ হয়নি। জীবনের অনেকটা পথ রীতিমতো লড়াই করেই কাটাতে হয়েছে তাঁকে। বাংলাদেশে যেদিন বিশ্ব ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়টি রচিত হলো, সেদিন শেখ রেহানা ছিলেন ব্রাসেলস শহরে। এর পর থেকেই তো শুরু এক অনিশ্চিত জীবন। দিল্লি হয়ে লন্ডনে স্থায়ী বাস। সেখানেই বিয়ে। সেখানে সন্তানদের বড় করেছেন। আজ তাঁরা নিজেদের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।

২০০১ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তে ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর হোল্ডিংয়ের এক বিঘার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি প্রতীকী মূল্যে শেখ রেহানার কাছে বিক্রি দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন করা হয়। বাড়িটি তাঁর নামে নামজারিও করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়িটি সরকারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন ১০ মার্চ ২০১২।    

শেখ রেহানাকে কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না। তিনি সব সময় থাকেন নেপথ্যে। শেখ হাসিনাকে যখন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার করা হয়, তখনো তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যেমন তাঁর মুক্তির ব্যাপারে কথা বলেছেন, তেমনি প্রবাসী বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।

শেখ রেহানার রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় মেলে ১৯৭৯ সালেই। সে বছরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়। ওই বছর ১০ মে সর্বইউরোপীয় বাকশালের সম্মেলনে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ রেহানা। ওই সম্মেলনের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর পাঠানো বাণী পাঠ করেন শেখ রেহানা। তাঁর পক্ষে বক্তব্যও দেন তিনি। এটাই ছিল কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে শেখ রেহানার প্রথম বক্তব্য দেওয়া। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তিনিই সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের কলঙ্কজনক ও অমানবিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। পঁচাত্তরের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ রেহানার আবেগঘন বক্তব্য সে অনুষ্ঠানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। হলভর্তি প্রবাসী বাঙালি নারী-পুরুষ এবং বিদেশি রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্ট সদস্য ও সাংবাদিক পিনপতন নীরবতায় তাঁর বক্তব্য শোনেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকের কাছ থেকে জানা যায়, তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনায় অনেকের চোখই অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।

এভাবেই নিভৃতে-নেপথ্যে থেকে তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কখনো পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে চাননি। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত এই নিভৃতচারী কল্যাণময়ী নারীর জন্ম দিনে তাঁকে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা। দীর্ঘায়ু হোন তিনি।

লেখক : সর্বইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি
[email protected]

Place your advertisement here
Place your advertisement here