• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বীর মুক্তিযোদ্ধার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

‌‘আমার অর্থ-সম্পদ নেই। ভাড়া বাড়িতে থাকি। প্রতি মাসে যে ভাতা পাই, তা দিয়ে বাড়ির খরচ আর ঋণ পরিশোধ করি। নিজের চিকিৎসা আর ওষুধপত্র কেনা হয় না। এখন চোখে ঝাঁপসা দেখি। কানেও ঠিকমতো শুনতে পারি না। হার্টের চারটি ভাল্ব ব্লক হয়ে গেছে। এভাবে আর কত দিন বিছানায় শুয়ে বসে থাকব। মৃত্যুর আগে একটু ভালো থাকতে চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন। দীর্ঘ দিন ধরে অর্থাভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না।

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ ধুমখাটিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেনের বসবাস। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর। একাত্তরে ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টের (ইপিআর) নিয়মিত সদস্য। দেশ মাতৃকার টানে অংশ নিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। এখন জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছেন। নানান রোগে আক্রান্ত হলেও অর্থাভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার।

দীর্ঘ কর্মময় জীবনে নিজের জন্য কিছুই করতে পারেননি অশীতিপর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এখন তার জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে।  অবসরের পর একটি মুদির দোকান করে সময় কেটেছে। সামান্য আয়ে তুষ্ট আবদুল বাতেন সবার কাছে শ্রদ্ধা ও সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি অসহায় জীবনযাপন করছেন।

পরিবারের লোকজন বলছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেনের হার্টের চারটি ভাল্ব ব্লক হয়ে গেছে। হাঁটাচলাও করতে পারেন না। এখন চিকিৎসার অভাবে দিনের পর দিন বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে। শয্যাশয়ী আবদুল বাতেন এখন নিজের করুণ দশার কথা ভেবে প্রতিনিয়ত চোখের পানি ফেলছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় ইপিআরে চাকরিরত ছিলাম। তখন বয়স ছিল ২৯ বছর। দেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে পারিনি। মাতৃভূমির টানে জীবনের মায়া ভুলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যুদ্ধ করেছি একটি স্বাধীন দেশ ও শোষণ, বৈষম্য, বঞ্ছনার হাত থেকে মুক্তির জন্য। কোনো কিছুর আশায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানী ভাতা পাচ্ছি। কিন্তু এই ভাতা দিয়ে তো চিকিৎসা হচ্ছে না। আমার বাড়ি ভাড়া, সংসার খরচ আর ধারদেনা পরিশোধ করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। কেউ তো আর বেশি করে ঋণও দেয় না। আমারও তো মন চায়, আরও কিছু দিন বাঁচতে। কিন্তু পরিবারের লোকজন তো আমার চিকিৎসা করাতে পারছে না।

অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে না পারায় হতাশ ছেলে খুরশীদ আলম। নিজেদের অর্থ সংকটের কথা তুলে ধরে খুরশীদ বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকার অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি করে দিয়েছেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। কিন্তু আমার বাবা ভাতা ছাড়া কিছুই পায়নি। বাবার অসুস্থতার বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জামুকাসহ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, বাবার চারটি ভাল্ব অকেজো হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের পরার্মশে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বরে দিনাজপুরে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়েছিলাম। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা ওপেন হার্ট সার্জারির পরামর্শ দেন। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইন্সস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওপেন হার্ট সার্জারি করতে বললেও অর্থের অভাবে এখন পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

খুরশীদ আলম তার অসুস্থ বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেনের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে বলেন, কোনো সন্তানই চায় না তার বাবা চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে মারা যাক। আজ শুধু অর্থের অভাবে আমাদের পরিবার বাবার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছে না। এই কষ্ট আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝবে না।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নং ওর্য়াড কাউন্সিলর মুক্তার হোসেন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। সুযোগ পেলেই তার খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করব। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকেও জানিয়ে রাখব।

রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, আমাদের সবার উচিত আবদুল বাতেনকে সহযোগিতা করা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে ভারত সরকার প্রতি বছর বাংলাদেশের ১০০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আমরা রংপুর থেকে বাতেনের নাম পাঠিয়েছি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেনের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। আর্থিক সহায়তা পাঠানোর ঠিকানা- সোনালী ব্যাংক, রংপুর কর্পোরেট শাখা, রংপুর, হিসাব নম্বর- ০১৯০২৬০০০০৬২।

Place your advertisement here
Place your advertisement here