• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

লালমনিরহাটে মরিচের ঝালে কৃষকের হাসি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

‘মাত্র ৬০ শতাংশ জমিতে ২৫ হাজার টাকা খরচে মরিচ চাষ করে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। প্রথম দিকে ১০ দিন পরপর ৮-৯ মণ মরিচ তুললেও এখন পাচ্ছি ৩-৪ মণ। প্রথমে প্রতিমণ ৫শ’ থেকে ৬ শ’ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে প্রতিমণ মরিচ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মরিচ চাষি আসাদুল গাজি।

তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরো এক-দেড় মাস মরিচ তুলতে পারবেন। ওই জমি থেকে আরো লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রির আশাও করছেন এ মরিচ চাষি।  

কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে লালমনিরহাটের মরিচ চাষিদের মুখে। দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। মুনাফা বেশি পাচ্ছেন চাষিরা।

কম বেশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় মরিচের চাষ হলেও  বন্যায় আর ভারী বৃষ্টিতে দেশের নিম্নাঞ্চলের মরিচ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে মরিচের যোগান অনেকটাই কমে এসেছে। তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলের মরিচ ক্ষেতে এখনো মরিচ সংগ্রহ করছেন চাষিরা।

জেলার আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি, ভেলাবাড়ি ও সদর উপজেলার বড়বাড়ি, মোগলহাট ও পাটগ্রাম উপজেলায় কাঁচা মরিচের চাষাবাদ কিছুটা বেশি। তবে সব থেকে বেশি চাষাবাদ হয় বড় কমলাবাড়ি গ্রামে। এ গ্রামটির মাঠের পর মাঠ কাঁচা মরিচের ক্ষেত।

চাষিরা জানান, সারা বছর বিভিন্ন জাতের কাঁচা মরিচ চাষ করেন কৃষকরা। তবে বর্ষাকালে বাজারজাত করতে এসব অঞ্চলের চাষিরা উঁচু জমিতে চৈত্র মাসে জমি তৈরি করে মরিচের চারা রোপণ করেন। এরপর নিড়ানি, সেচ, সার দিয়ে পরিচর্যা করলে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে। আবহাওয়া ভাল থাকলে এসব ক্ষেতের মরিচ ভাদ্র মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়।

বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চলের মরিচ ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হওয়ায় এ সময় মরিচের বাজার দর বেড়ে যায়। তাই এই মরিচ চাষে বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা। যাদের এক সময় খাবার নিয়ে চিন্তা ছিল তারা এখন বাড়ি গাড়ির মালিক বনে গেছেন শুধুমাত্র চাষাবাদ ও সবজির ব্যবসা করে। এ অঞ্চলের চাষিদের কাছ থেকে ক্ষেত থেকেই মরিচ কিনে ঢাকা চট্টগ্রাম কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। 

দিনভর ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে রাতে ট্রাকে পৌঁছে দেন পাইকারি বাজারে। সেখানে তা বিক্রি করে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের টাকা চলে আসে। এভাবে বড় সবজির বাজার তৈরি হয়েছে লালমনিরহাটে।

বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আরেক মরিচ চাষি মজিবর রহমান জানান, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে পানি জমে না- এমন জমিতে মরিচের চারা রোপণ করতে হয়। এরপর সার-কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করলে লাভবান হওয়া যায় মরিচে। ১০-১২ দিন পর পর জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত, এমনকি বৃষ্টি কম হলে ভাদ্র মাসেও মরিচ সংগ্রহ করা যায়। এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে ঝামেলা নেই, মুনাফাও অনেক বেশি। এমন দাম থাকলে তার এক বিঘা জমি থেকে দুই লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রির আশা করছেন আব্দুর রহিম।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সানা উল্লাহ মিয়া বলেন, নিম্নাঞ্চলের মরিচ ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হওয়ায় এই উঁচু অঞ্চলের মরিচের চাহিদা বেড়েছে। গত ১০ দিন আগে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা মণে মরিচ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে মাঠেই সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় ক্রয় করে সারা দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। সারাদিন ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে রাতে ট্রাকে বড় বড় পাইকারি বাজারে যাচ্ছে। পরদিন ভোরেই টাটকা সবজি চলে যাচ্ছে শহরের খুচরা ক্রেতার হাতে। 

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলীনুর রহমান বলেন, চলতি বছর এ উপজেলায় ১৪২ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার দরও ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা। উঁচু অঞ্চলের মরিচ ক্ষেত আরো এক মাসের অধিক সময় ফলন দেবে। সবমিলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here