• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

রংপুর ২ আসনের বদরগঞ্জ তারাগঞ্জে নির্বাচনী হালচাল

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কমান্ড মানছে না কেউ। এ আসনে তিনি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলুকে মনোনীত করলেও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মণ্ডল ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বারবার নেতৃত্ব পরিবর্তন, বহিরাগত জাপা নেতার মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে উপজেলা জাতীয় পার্টির মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে “হামার নেতা সাবলু, হঠাও ভাটিয়া বাবলু” স্লোগান তুলে জিয়াউদ্দিন

বাবলুকে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। 
 

রংপুরে এরশাদের জনপ্রিয়তা ও লাঙ্গলের ঘাঁটিকে কাজে লাগিয়ে ২০০১ সালে দলকে সংগঠিত করা মোহাম্মদ আলী সরকার বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ব্যবসায়ী আনিসুল ইসলাম মণ্ডলকে মনোনয়ন দিলে তিনি জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বদরগঞ্জ উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সাবলু চৌধুরীকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তৎকালীন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার নাটকীয়তায় তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বারবার দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে এ আসনে জাতীয় পার্টির নেতারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মণ্ডল ও জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে চলছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মীরা জিয়াউদ্দিন বাবলুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, আনিসুল ইসলাম মণ্ডল ও অ্যাড. মোকাম্মেল হক চৌধুরী দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এ আসনের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়ে ছিলেন। গত ২৮শে নভেম্বর এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনিসুল ইসলাম মন্ডল উপজেলা নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য চট্টগ্রাম-৯ আসনের এমপি জিয়াউদ্দিন বাবলু এ আসনে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বারবার নেতৃত্বের পরিবর্তনে দলে বিভক্তি, এ আসন ধরে রাখতে পরিকল্পনা না থাকা, স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দলের কারণে দলের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। এর আগে বদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে এরশাদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়াই করা উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা লাতিফুল খাবির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেন নি। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগ ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি জাতীয় পার্টি। 
 

সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে আসা সাবলু চৌধুরী দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর দল সংগঠিত না হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তার রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল না থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আস্থা রাখতে পারেন নি। তাই বেশির ভাগ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটার আমার সঙ্গে রয়েছে। তাদের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছি। আমি নির্বাচিত হয়ে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিকে পুনরায় শক্তিশালী করবো। 
 

জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য অ্যাড. মোকাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মনোনয়ন দিয়েছে জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করলে ভালো হবে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি এখন সংগঠিত হতে না পারলে আওয়ামী লীগ বের হয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। আসাদু্‌জ্জামান চৌধুরী সাবলু বলেন, দলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। এ ছাড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বহিরাগত হওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তিনি এই আসনে প্রার্থী হলে স্থানীয় জাতীয় পার্টির সহযোগিতা পাবেন না। তাই আমি অনুরোধ করবো, স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী গতকাল দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, রংপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলুকে রংপুর-২ আসনের জন্য মনোনীত করেছেন। ওই আসনে একাধিক প্রার্থীর ব্যাপারে ঢাকায় গিয়ে আলোচনা করা হবে। এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ এম এরশাদের ভাগ্নি জামাই জিয়াউদ্দিন বাবলুর পক্ষে মনোনয়ন দাখিলের প্রতিবাদে এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে গত শুক্রবার রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে। পৌর শহরের সিও বাজার এলাকায় ওই মানববন্ধন, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন নেতাকর্মীরা। মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক সর্দার, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী, সদস্য মেহেরাব হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা শাহিনুর রহমান সহ অন্যরা। এর আগে জাপা চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে চুরি করা মনোনয়নপত্র দাখিল করার অভিযোগ এনে রংপুর জেলা-মহানগর ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জিয়াউদ্দিন বাবলুকে প্রতিহত করতে গত বুধবার রংপুর ডিসি অফিস, তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ-সৈয়দপুর ইউএনও অফিসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here