• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মরণফাঁদ ‘ব্ল্যাক স্পট’

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনারোধে নির্মিত রংপুর এলাকার ‘ব্ল্যাক স্পট’ই (দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান) যেন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে ব্ল্যাক স্পটগুলোর সঙ্গে অসংখ্য দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।


গত সোমবার রাতেও পীরগঞ্জের পার্শ্ববর্তী ধাপেরহাটে ব্ল্যাক স্পটে দুর্ঘটনায় ৩ জন মারা গেছেন।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয়ের শালজানা গ্রামে 'কাগজের ফুল' ছবির সুটিং স্পট দেখে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিশুক মুনিরসহ ৫ জন জোকা নামক স্থানে নিহত হন।

তাদের মৃত্যুর পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বুয়েটের একটি সার্ভে টিম গবেষণা করে ১৪৪টি স্থানকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে ‘ব্ল্যাক স্পট রিমুভ প্রজেক্ট’ এর আওতায় নেয়। এর মধ্যে রংপুর সওজের অধীনে ১১টি ব্ল্যাক স্পট হয়। ওই স্পটগুলোতেই কয়েক বছরে দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হন।


গত সোমবার রাতে পীরগঞ্জের পার্শ্ববর্তী ধাপেরহাটে ব্ল্যাক স্পটে ধাক্কা লেগে ঠাকুরগাঁওগামী জাকির পরিবহন নাম একটি বাস উল্টে পড়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান রংপুরগামী বাসটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই বাসযাত্রী পীরগঞ্জের ঝরনা বেগম (২৪), শামছুন্নাহার বেগম (২৭) এবং বাসটির হেলপার নিহত হন।

এর আগে পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে মোটরসাইকেল আরোহী ২ ভাই, লালদীঘি ব্ল্যাক স্পটে ২ জন, বড়দরগায় ৪ জনসহ রংপুরের ব্ল্যাক স্পটে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়।

রংপুর সওজ সূত্র জানায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে রংপুর সওজের অধীনে পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর ও তারাগঞ্জ উপজেলার ১১টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাকে ব্ল্যাক স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই স্থানগুলোতে হাটবাজার, বেসরকারি ও সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্র থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানগুলো হলো- পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, লালদিঘী, বড়দরগা, শঠিবাড়ী, মিঠাপুকুর, দমদমা, রংপুর মডার্ন মোড়, রংপুর মেডিকেল মোড়, তারাগঞ্জ, ইকরচালি ও চিকলী।

প্রায় ৫ বছর আগে উল্লেখিত ব্ল্যাক স্পটগুলোতে মহাসড়কের উভয়পার্শ্বে সম্প্রসারণ ও সড়কে ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়। ওই কাজে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু রংপুরের এই ব্ল্যাক স্পটগুলোই যেন এখন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই যানবাহন ডিভাইডারের ওপর উঠে যাচ্ছে। কিংবা ধাক্কা লাগছে। এতে ঘটনাস্থলেই অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে বা পঙ্গুত্ব বরণ করছে।

রংপুর সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম খান বলেন, ব্ল্যাক স্পটগুলোতে ইদানীং দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে সড়কে র‌্যাম্পবেল স্ট্রিপ, গতি নিয়ন্ত্রণ করুন, বামে বা ডানে চলুন এমন সাংকেতিক চিহ্নসংবলিত সাইনবোর্ড দেয়া আছে। তবে চালকের কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সবচেয়ে ট্রাকই বেশি দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনারোধে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো অনুশাসনগুলো আমরা নানাভাবে প্রচার করি। তারপরও ওভার লোডিং, ওভার টেকিং এবং ওভার স্পিডিংয়ের কারণেই যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ছে। তাই সড়ক ব্যবহারে আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে।

উল্লেখ্য, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরের মৃত্যুর ঘটনায় মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার তৎকালীন ওসি আশরাফ-উল ইসলাম ২০১২ সালের ২১ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এরপর মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল মামুদ ফাইজুল করিম একমাত্র আসামি চালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ বছরের জেল দেন।

রায় ঘোষণার সময় চালক জামির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here