• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ভিটে ছাড়া করতে গৃহবধূর ওপর হামলা, দোকান লুটপাট

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় আঞ্জুমান আরা আঁচল (২১) নামের এক গৃহবধূকে স্বামীর ভিটে ছাড়া করতে মারধর করেছে তার প্রতিবেশী, স্বজনরা। এমনকি তার স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানটিও লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। এ সময় তাদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ওই গৃহবধূর মা মিনি আক্তার (৩৮)। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

গৃহবধূর অভিযোগ থেকে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার গৃহবধূ আঞ্জুমান আরা আঁচলের স্বামী সাইফুল ইসলাম বিজয় ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মারা যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগেই তার ৭/৮ বিঘা জমির মধ্যে স্ত্রী আঞ্জু আক্তার আঁচলের নামে বাড়ি দোকান ও বাড়ি ভিটেসহ সাড়ে ৫২ শতক জমি দলিল করে লিখে দেন বিজয়। কিন্তু বিজয় মারা যাওয়ার পরেই শুরু হয় সংকট। তার কোনো ভাই-বোন নেই। বিজয়ের বাবা আব্দুল কুদ্দুস মারা গেছেন অনেক আগেই। তার মা বিউটি বেগম অন্যত্র সংসার করছেন। বিজয় মারা যাওয়ার পর বিজয়ের সৎচাচা মোহাম্মদ আলী, আব্দুর কাদের ও ফুফাতো ভাই হারুন মিলে আঞ্জুকে ভিটে ছাড়া করতে উঠেপড়ে লাগে। একপর্যায়ে বিজয়ের রেখে যাওয়া দোকানটিতে তালা দেয় তারা। এ বিষয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছিলেন না আঞ্জু। স্বামীর ভিটে ছেড়ে চলে যেতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিল তারা।

মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা পুলিশ। কিন্তু বৈঠক অমীমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। নিরুপায় আঞ্জু বুধবার দুপুরে দোকান খুলতে গেলে তার মা মিনি আক্তারের ওপর লোকজন নিয়ে হামলা করে বিজয়ের সৎচাচা মোহাম্মদ আলী, আব্দুল কাদের, চাচাতো ভাই হারুন ও ফুফুতো ভাই হারুন (দুজনের নামই হারুন)। এমনকি তারা দোকানের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

আহত আঞ্জুমান আরা আঁচল বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তারা আমাকে আমার স্বামীর ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমার নামে আমার স্বামী বাড়ি ভিটে ও দোকানসহ সাড়ে ৫২ শতক জমি লিখে দেয়ায় তারা আমাকে সহ্য করতে পারছে না। এমনকি আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর একদিনেরও জন্য আমাকে দোকান খুলতে দেয়নি। তারা দোকানে তালা মেরে রেখেছিল। প্রতিদিন তারা আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিত। এ বিষয়ে আমি আদালতে একটি মামলাও করেছি। অথচ তারা আমার স্বামীর আপন কেউ না, দুঃসম্পর্কের স্বজন। এ বিষয়ে আমি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু সায়েম মিয়া বলেন, ওই নারী দীর্ঘদিন ধরেই তাদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে আমরা বিজয়ের রেখে যাওয়া দোকান খোলার বিষয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থাতেই শেষ হয়। এরপর আজকে ওই নারী দোকান খুলতে গেলে তাকে তারা মারধর করা হয়। তিনি অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব।

অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা কেউ ওই আঞ্জুকে মারধর করিনি বরং সেই আমার স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে মারধর করেছে। নিজেই দোকান ভাঙচুর করেছে। আমরা তাকে দোকানের মালামাল বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে মালামাল না নিয়ে দোকানের দখল চায়। দোকানটি আমাদের জমিতে হওয়ায় আমরা দোকানের দখল দিতে রাজি নই। তাই সে এ কাজ করেছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here