• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

দেশের উদ্যোক্তাদের একটি অংশের অনেক দিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। শুধু রপ্তানিকারকদের দেশের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে নতুন বিধিমালা যুক্ত হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে। উদ্যোক্তা এবং সংশ্নিষ্টদের মতামতের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার, রপ্তানি বাজার ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ এখন সময়ের দাবি। এ উদ্যোগের ফলে রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টি সহজ হবে।

বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, একজন রপ্তানিকারক এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ বছরের গড় রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের কম, সেই পরিমাণ অর্থ বিদেশে ইক্যুইটি বা মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট হচ্ছে রপ্তানিকারকদের জন্য বিশেষ অ্যাকাউন্ট, যেখানে তারা রপ্তানি আয়ের একটি অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা করতে পারেন। পণ্যে মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে রপ্তানি আয়ের কত ভাগ ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে রাখা যাবে তা নির্ধারণ হয়। ওভেন পোশাকের মতো পণ্যে যেখানে অনেক বেশি কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, সেখানে রপ্তানি আয়ের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ অর্থ ওই হিসাবে রাখা যায়। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে উচ্চমূল্য সংযোজন হয়। এ খাতের রপ্তানিকারকরা রপ্তানি আয়ের ৬০ শতাংশ ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে রাখতে পারেন। আইটি খাতের রপ্তানি আয়ের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে রাখা যায়। এই অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে লিয়াজোঁ অফিস রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ বৈদশিক মুদ্রায় আনুষঙ্গিক ব্যয় মিটিয়ে থাকেন রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। তবে তা খুবই সীমিত পরিসরে এবং কেস টু কেস ভিত্তিতে। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের বিদেশে বিনিয়োগ করার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইন নেই। আগ্রহী ব্যবসায়ী বিদেশি মূলধন বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলে তা অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে আগ্রহী ব্যবসায়ীকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটায় পর্যাপ্ত স্থিতিসম্পন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। কোনো খেলাপি ঋণ বা অসমন্বিত পুনর্গঠিত বৃহৎ ঋণ না থাকার সনদ দিতে হবে। কোনো ধরনের শুল্ক্ক, ভ্যাট বা কর অপরিশোধিত না থাকার সনদও দিতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিচালনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ জনবল থাকতে হবে। ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় অর্জনের সম্ভাবনার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ চুক্তি রয়েছে এবং যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈতকর পরিহার চুক্তি রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- এমন দেশে বিনিয়োগ করা যাবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর থেকে মোট আটটি বাংলাদেশি কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিবিএল গ্রুপকে ইথিওপিয়ায়, মবিল যমুনাকে মিয়ানমারে, এসিআই হেলথ কেয়ার ও স্কয়ার ফার্মাকে যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্য ও এস্তোনিয়ায় ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিএসআরএম স্টিলকে কেনিয়ায় এবং স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিংকে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আকিজ গ্রুপকে মালয়েশিয়ায় দুটি কারখানা অধিগ্রহণের জন্য দুই কোটি ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দেয় সরকার।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেজুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭ বেশ আগের। এ আইনে বিদেশে বিনিয়োগ বিষয়ে কোনো বিধি নেই। এতদিন গাইডলাইন অনুসারে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন যুগোপযোগী বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এমসিসিআইর সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে আসছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের বিদেশে কারখানা স্থাপনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ফলে যেখানে যে পণ্যের চাহিদা আছে, সেখানে সেই খাতের উদ্যোক্তারা যেতে পারলে অবশ্যই দেশ লাভবান হবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির যে সুযোগ তাও নিতে পারবে বাংলাদেশ। তিনি জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যে বিধিমালা তৈরি করেছে, তা এমসিসিআই পর্যালোচনা করছে। শিগগিরই এর ওপর বিস্তারিত মতামত জানানো হবে বলে জানান নিহাদ কবির।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কারণ দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের স্বচ্ছতা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে। তবে এসব বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা, তা দেশে আনার জন্য দেশের ভেতরে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি ও ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এমএ রহিম (ফিরোজ) বলেন, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। ফলে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ এসেছে। এতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বিদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ একটি কোম্পানির দক্ষতা বাড়াতে সহযোগিতা করে, যা দেশের কোম্পানিরও দক্ষতা উন্নয়ন করে। এ বিষয়ে বিজিএমইএর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিজিএমইএ দু-একদিনের মধ্যে বৈঠক করে মতামত জানাবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here