• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

নিজের স্বপ্ন পূরণে পা দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য মানিক

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০১৯  

Find us in facebook

Find us in facebook

হাত না থাকার পরও স্বপ্ন পূরণের স্পৃহা থেমে নেই। পা দিয়ে লিখেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন অদম্য মেধাবী মানিক রহমান।

মানিক রহমান কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ময়নার ছেলে। 

মানিক রহমান এবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ফুলবাড়ী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ৬ নম্বর কক্ষে একটি টেবিলের উপর বসে শুধুমাত্র ডান পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তার রোল নম্বর-৬১৮০১৩।

মানিক রহমান পা দিয়ে লিখলেও লেখা ঝকঝকে ও হাতের লেখার চেয়ে অনেক ভালো। তার পায়ের লেখা দেখে অনেকে চমকে যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, সৃষ্টিকর্তা তার হাত না দিলেও পায়ের শক্তি দিয়েছে।

ফুলবাড়ী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র সেন জানান, প্রতিবন্ধী মানিক রহমান একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার হাত না থাকলেও পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় পূর্ণ মার্কের পরীক্ষা দিচ্ছে সে। আমরা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য তাকে ৩০ মিনিট বেশি সময় দিচ্ছি। তিনি অদম্য মেধাবী মানিকের সাফল্য কামনা করেন।

ট্যাগ অফিসার ও ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, মানিক রহমানের পা দিয়ে জেএসসি পরীক্ষার খাতার লেখা দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। তার পায়ের ঝকঝকে সুন্দর লেখা স্বাভাবিক হাতের লেখার চেয়েও ভালো। তিনি মানিকের উন্নতি কামনা করেন।

ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, প্রতিবন্ধী হলেও মানিক রহমান অদম্য মেধার অধিকারী। অষ্টম শ্রেণিতে ১৩৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার শ্রেণি রোল নম্বর হচ্ছে ৭। মানিক রহমানের পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য তিনি একটি কাঠের টেবিল মানিককে দিয়েছেন। এবারের জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মানিক মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করাসহ সে ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেতে পারে বলেও এমন আশা পোষণ করেন তিনি।

স্থানীয় ইউনুছ আলী জানান, মানিক রহমান একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও অসাধারণ মেধার অধিকারী। সে একজন সাহিত্য প্রেমীও। তার কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি চমৎকার লাগে। তিনি মানিকের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ময়না জানান, আমার প্রতিবন্ধী ছেলে মানিক কষ্ট করে পা দিয়ে পরীক্ষায় খাতায় লিখে জিপিএ-৫ অর্জন করে আমাদের বুক আনন্দে ভরে দিয়েছে। মানিক পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পাবে আশা করছি। তিনি মানিকের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে কিস্তিতে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। এই ল্যাপটপ দিয়ে সে প্রাক্টিস করছে। মানিকের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার স্বপ্ন পূরণে তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন। 

মানিকের মা সহকারী অধ্যাপক মরিয়ম বেগম জানান, মানিক রহমানের জন্ম থেকেই দুই হাত ছিল না। তার ডান পায়ের চেয়ে বাম পা টি জন্ম থেকেই ছোট। জন্মের সময় থেকে তার ঠোঁট ও তালু কাটা থাকলেও পরে ঠোঁট ও তালু অপারেশন করে কাটা অংশটি ভালো করা সম্ভব হয়।

মানিক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক মনে করে পথ চলছে। তার দু’হাত না থাকলেও সে পা দিয়েই প্রায় সব কিছুই করতে পারে। শধু খাওয়া, গোসল, টয়লেটে বাবা মাকে সাহায্য করতে হয়। তিনি মানিকের এই পথ চলা ও তার স্বপ্ন পূরণে সবার দোয়া কামনা করেছেন। 

মানিক রহমান তার ভবিষ্যত স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, আমি লেখাপড়া শিখে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তবে এখন তার এই স্বপ্ন পূরণে সে সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here