• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁওয়ে গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঠাকুরগাঁওয়ে দিনদিন গমের আবাদ কমছে। বাজারে গমের ন্যায্যমূল্য না থাকা  ও  সরকার নির্ধারিত দরে গম বিক্রি করতে না পারায় গম আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এই জেলার অনেক কৃষক।

গম আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভুট্টা, আলুসহ অন্যান্য ফসলে ঝুঁকছেন অনেকে। গম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। তবে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ওন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০১৬ সালে গমের আবাদ হয় প্রায় ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে। পরের বছর ২০১৭ সালে ১ হাজার হেক্টর জমি কমে আবাদ হয় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ২০১৮ সালে তা আরো কমে আবাদ হয় ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৯ সালে ৬০ হাজার ১৭১ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালে ৫৮ হজার এবং চলতি বছর ২০২১ সালে  ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও গমের আবাদ হয়েছে মাত্র ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদ কমেছে এই জেলায়।

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে একসময় দেশের সর্বাধিক গম উৎপাদনের জেলা হিসেবে পরিচিত হলেও গম বিক্রি করে বারবার লোকসান হওয়ায় এই জেলায় গম আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক কৃষক। লোকসান ঠেকাতে ও  কৃষকদের গম আবাদ এবং বিক্রির জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক এপ্রিল থেকে খাদ্য গুদামে প্রতি কেজি গমের দর ২৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকারিভাবে গম সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত গম সরকারের খাদ্য গুদামে বিক্রির সুযোগ  থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সদর উপজেলার গড়েয়া চণ্ডীপুর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গম আবাদে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ খরচ হয়। ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে গম রোপণ, সার, কীটনাশক, সেচ ও কাটা-মাড়াই শেষে গম বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না তাদের। এ ছাড়া সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হলেও প্রকৃত কৃষকরা তা থেকে বঞ্চিত হন। 

আকচা পল্টন এলাকার কৃষক দত্তেস্বর রায় জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গম আবাদ করে এলেও সরকারি খাদ্যগুদামে তিনি কখনোই গম বিক্রি করতে পারেননি।

সালান্দর এলাকার তোয়াবুর রহমান বলেন, সরকারি গুদামে গম বিক্রির প্রত্যয়ন স্লিপ পেতে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারস্থ হয়েও কোনো কাজ হয় না। সরকারি গুদামে গম বিক্রি করেন বড় ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। প্রকৃত কৃষকরা সরকারের গুদামে গম বিক্রি করতে গেলে অনেক ঝামেলা করে গুদাম কর্তৃপক্ষ।

বালিয়াডাঙ্গী এলাকার কৃষক সুরেন্দ্র নাথ বলেন, সরকার প্রতিবছর গম ২৮ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দিলেও সরকারের সংগ্রহ অভিযানে গম বিক্রি করতে না পারায় খুব একটা লাভবান হন না এই এলাকার কৃষকরা। স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজন প্রভাব খাটিয়ে সরকারি গুদামে গম বিক্রি করে থাকেন। সরকারের ক্রয় তালিকায় কৃষকদের নাম থাকলেও তালিকাভুক্ত কৃষকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে গম আবাদ করে লাভ তো দূরের কথা, বারবার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক তমিজউদ্দীন জানান, গম আবাদে যে পরিমাণ খরচ ও পরিশ্রম, সে অনুযায়ী বাজারে গম বিক্রি করে তেমন একটা লাভ হয় না। তাই গম আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে গত কয়েক বছর গমের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদ করেছেন তিনি। অনেকে গমের পরিবর্তে আলু ও সবজি আবাদ করছেন। একই কথা জানান এই এলাকার আরো বেশ কয়েকজন কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন জানান, জেলায় আলু ও ভুট্টার বাজার মূল্য বেশি থাকায় এ বছর গমের আবাদ কিছুটা কমেছে। খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহের বিষয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে। সে তালিকা জেলা খাদ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সরকারিভাবে কৃষকদের গম আবাদে উৎসাহ ও তাদের ন্যায্য দাম প্রদানে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর  সরকারিভাবে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও গমের আবাদ হয়েছে  ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে।

জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, চলতি বছর ঠাকুরগাঁওয়ে সরকার নির্ধারিত ২৮ টাকা কেজি দরে ১৬ হাজার মেট্রিক টন গম ক্রয় করবে সরকার। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করা হবে। সংগ্রহ অভিযানে মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে প্রকৃত কৃষকদের ঠকিয়ে সরকারের এই সুযোগ না নিতে পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু কৃষকদের গম বিক্রির লাভের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। তাই কৃষকরা যাতে সরকারের এই সংগ্রহ অভিযানের সুফল পায় সে জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করে গম কেনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here