• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় চা উৎপাদন শুরু

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

এক কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় চলতি মৌসুমে চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রায় ছয় কোটি কেজি কাঁচা চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করে ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার থেকে চা পাতা উত্তোলন শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কাজ চলবে।

প্রথম দিকে চা বাগানগুলোতে কাঁচা চা পাতা উত্তোলনের হার কম হওয়ায় এখন পর্যন্ত দু-একটি চা-কারখানা চালু হয়েছে। তবে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে সব চা-কারখানা উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় ১০ হাজার ১৭০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা-বাগান এবং সাত হাজার ৩১০ জন ক্ষুদ্র চাষি চা উৎপাদন করছেন।

গত মৌসুমে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় আট হাজার ৬৮০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিল। এর থেকে ৯৫ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, মহামারি পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার ১৮টি চা-কারখানায় পাঁচ কোটি ১২ লাখ কেজি কাঁচা চা পাতা থেকে এক কোটি তিন লাখ কেজি চা উৎপাদন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের পরে দেশের উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমিতে দ্রুত চা চাষের বিস্তৃতি ঘটায় তৃতীয় বৃহৎ এলাকা হিসেবে পঞ্চগড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন চা চাষি ও চা-কারখানা মালিকরা। এখানে নিলাম বাজার স্থাপিত হলে চাষিদের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য পেতে সহায়ক হবে। এতে করে এই অঞ্চলে চা শিল্প বিকাশ ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চায়ের নিলাম চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল নিলাম বাজারে হয়। উৎপাদন মৌসুমে সাধারণত ৪২টি নিলাম হয়ে থাকে।

পঞ্চগড় জেলা স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন বলেন, পঞ্চগড়ে প্রতিবছর চা চাষ ও চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চায়ের গুণগতমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ১৬ টাকা থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচের বিবেচনায় এই মূল্য খুবই কম। মূল কথা হচ্ছে, পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপন করা হলে চা চাষিরা সার্বিকভাবে উপকৃত হবে। এ অঞ্চলে চা শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

চা বোর্ডের সূত্রানুসারে, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে মোট ১৮টি চা-কারখানা চালু রয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চগড়ে ১৭টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা রয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ কারখানা কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ শুরু করেছে।

তেতুলিয়া গ্রিন কেয়ার চা-কারখানার ম্যানেজার মনজুর আলম বলেন, গত ২ মার্চ থেকে কারখানা চালু করা হয়েছে। কারখানায় প্রতিদিন ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কাঁচা চা পাতা প্রয়োজন হয়। তবে শুরুর দিকে বাগানগুলোতে পাতা উত্তোলনের হার কম হওয়ায় এখন প্রতিদিন পাঁচ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে আশা করছি মার্চের মাঝামাঝি থেকে এটা বাড়বে।

পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, প্রতি বছর উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় চা আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আট হাজার ৬৮০ একর জমিতে চা আবাদ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৭০ একর।

তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় আট হাজার ৬৪২ একর, ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ২৯৩ একর, নীলফামারীতে ৬১ দশমিক শূন্য নয় একর, দিনাজপুরে ৬১ দশমিক ৫০ একর এবং লালমনিরহাট জেলায় ১১২ দশমিক ৯৮ একর জমিতে চা আবাদ হয়েছে।

তিনি জানান, স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করে চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে এরই মধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু ও পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ে পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, চায়ের নানান রোগবালাই ও পোকা দমনে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here