• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

আত্মার পরিচর্যার গুরুত্ব ও পদ্ধতি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

লোহাতে পানি লাগলে জং ধরে আমরা জানি। তেমনি মানুষের অন্তরেও জং পড়ে, যখন মানুষ অলসতায় নিমজ্জিত হয়। মনের খায়েশের অনুগামী হয়ে জীবন যাপন করে। অন্তরে জং পড়লে প্রকৃত শান্তি উধাও হয়ে যায়। খারাপকে খারাপ মনে হয় না। অন্যদিকে ভালো, কল্যাণকর বিষয়ও মনে হতে থাকে খারাপ। এ জন্য জ্ঞানীরা বলেন, মাছে পচন শুরু হয় মাথা থেকে আর মানুষের পচন শুরু হয় মন থেকে।

আত্মায় জং ধরলে পরিষ্কার করতে হয়। পরিষ্কারের জন্য একটা ব্যবস্থা রাখা আছে। নবী করিম (সা.) এর ভাষায়, ‘লোহাতে পানি লাগার পর যেমন জং ধরে, তেমনি মানুষের আত্মাতেও জং ধরে। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! জং পরিষ্কারের ব্যবস্থা কি? রাসূল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করা এবং নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মেশকাত, হাদিস নম্বর-২১৬৮)।

আল কোরআন আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে নাজিলকৃত গ্রন্থ। মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের ভাষায় কোরআনের পরিচয় বিভিন্নভাবে এসেছে। স্বয়ং নবী করিম (সা.) কোরআনের পরিচয় ও কোরআন তেলাওয়াতকারীর ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হজরত আলী (রা.) থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। তিনি বলেন, আল কোরআন সব কিছু থেকে উত্তম, আল্লাহ ছাড়া। যে ব্যক্তি কোরআনকে সম্মান করলো সে যেন আল্লাহকেই সম্মান করলো। যে লোক কোরআনকে অসম্মান করলো, সে আল্লাহকে হেয় করলো।  আল্লাহ তায়ালার নিকট কোরআনের মর্যাদা হচ্ছে, সন্তানের কাছে পিতা-মাতার ন্যায়। কোরআন হলো ওই সুপারিশকারী, যার সুপারিশ কবুল করা হয়। অতএব, কোরআন কারো জন্য সুপারিশ করলে, সুপারিশ কবুল হবে। কোরআনকে কেউ পথপ্রদর্শক বানালে, কোরআন তাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পশ্চাতে রেখে চলবে, কোরআন তাকে হাঁকিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। কোরআনের বাহকরা রহমতের বেষ্টনীতে থাকেন। তারা হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার নূর লাভকারী ও আল্লাহর কালামের শিক্ষার্থী। যারা কোরআনের ব্যক্তিদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, প্রকৃত অর্থে ওরা আল্লাহর সঙ্গে শত্রুতা পোষণকারী। আল্লাহ তায়ালার বন্ধু ওই সব লোক, যারা কোরআনের বাহকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখেন। অতএব, হে কোরআনের বাহকরা! তোমরা কোরআনের সম্মানে আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও। তাহলে আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। তিনি মাখলুকের কাছে তোমাদেরকে প্রিয় করে তুলবেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআন শ্রবনকারীদের থেকে দুনিয়ার বিপদ সরিয়ে দেন। তেলাওয়াতকারীদের থেকে আখেরাতের বিপদ দূর করে দেন। কোরআনের একটা আয়াত তেলাওয়াত করা, আসমানের নিচের সব কিছু থেকে উত্তম। (মেরকাত শরহে মেশকাত, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৬৬০)। হাদিসটি হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। সরাসরি নবী করিম (সা.) থেকে নয়। হাদিসের এ প্রকারের নাম মুরসাল।

কোরআনের বরকত পেতে হলে, তার হক আদায় করে পড়তে হয়। কোরআনের অনেক হক আছে। সে সব হকের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা ওই সময় পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকো, যতক্ষণ তোমাদের মন কোরআনের প্রতি আকৃষ্ট থাকে। যখন মনে উদাসীনতা চলে আসবে তখন তেলাওয়াত বন্ধ করে দেবে। (হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মেশকাতে বর্ণনা করা হয়েছে, হাদিস নম্বর-২১৯০)।

এক হাদিসে কুরআনের তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন নিয়মিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যথায় কোরআনের বরকত থেকে বিরত হওয়ার ঘোষণা এসেছে। রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা কোরআনের ব্যাপারে যত্নবান হও। আল্লাহর কসম! রশ্মি ছেড়ে দেয়ার পর উট যেমন দ্রুত পালিয়ে যায়, অবহেলাকারীদের থেকে কোরআন তার চেয়েও দ্রুত হারিয়ে যায়।’ (মেশকাত-২১৮৭)।

রাসূল (সা.) মানুষের মন পরিবর্তনের যে ব্যবস্থার কথা বলেছেন, এ ব্যাপারে যত্মবান মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ইতিহাস সাক্ষী কোনো বেদ্বীন যখন কোরআন গবেষণায় লেগেছে, অল্প দিনের ব্যবধানে সে কোরআনের ছায়ায় এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তাহলে যারা ঈমানের নূরে আলোকিত, তাদের জীবন আরো দ্রুত পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই সবাইকে কোরআনের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে।

মন পরিবর্তনের দ্বিতীয় বিষয় ছিলো মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করা। বর্তমান করোনা মহামারি চলছে। পরিচিত, কাছের বহু মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতেও যদি আমরা আখেরাতের কথা স্মরণ না করি তাহলে মনের পরিবর্তন আর কখনো হবে না। তাই আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি যেন আমার মনে অবস্থাকে পরিবর্তন করে দেন। সম্পদের মোহে পড়ে যে সব অন্যায় ও অবিচার করেছি তার জন্যও ক্ষমা চেয়ে নেয়া। মানুষের হক আদায় করে দেয়া।

Place your advertisement here
Place your advertisement here