• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকীঃ এখনো বেঁচে আছেন কোটি মানুষের মনে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৯  

Find us in facebook

Find us in facebook

‘পাখি উড়ে যায় ফেলে যায় পালক’ জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বহু উপন্যাসেই এই কথাটি পাওয়া যায়। আর এ কথাটি কি বাস্তবতা না তার নেহাতই কল্পনা এটা কে জানে। কেননা তার চলে যাওয়ার আট বছর পরেও এখনো মানুষের মনে জায়গা করে রয়েছেন তিনি।

বাংলা সাহিত্যের নন্দিত লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ। একাধারে বাংলা সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও গান রচনা করে পাঠক ও দর্শকের কাছে ছিলেন সমানভাবে সমাদৃত।

মানুষ হুমায়ূন আহমেদ নেই। কিন্তু লেখক হুমায়ূন আহমেদ অমর। তার কালজয়ী চরিত্রগুলো অম্লানভাবে টিকে আছে। ঘুরে বেড়ায় এ শহরে থেকে ও শহরে।

বিস্ময়কর এই লেখকের সৃষ্ট চরিত্রগুলো শুধু সাহিত্যের পাতায় যেমন লেখা রয়েছে ঠিক তেমনি মানুষের মনেও দোলা দেয়। কখনো বা চলতি পথে বাস্তবজীবনেও দেখা মেলে তাদের। এক অদ্ভুদ সম্মোহনী ক্ষমতা ছিলো তার লেখায়।

দিন-রাত খালি পায়ে রাজপথে হেটে বেড়ায় তরুণরা। বাড়ির ছাদে কোনো তরুণী উদাস দৃষ্টিতে অপেক্ষার আনন্দ নেয় বিষন্ন চোখে! এসবই তার কালজয়ী চরিত্রগুলোর প্রভাব।

কোন চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যে কালেরসীমা অতিক্রম করবে যেটি নিয়ে চলে এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিরব প্রতিযোগিতা। হুমায়ূন আহমেদের সেই কালজয়ী চরিত্রগুলো না হয় একটি মনের অদৃশ্য হাত দিয়ে ছুঁয়েই দেখা যাক…

হিমু:

‘হিমু…প্রচন্ড রোদ নিউ মার্কেট এলাকায় দাড়িয়ে আছে এক যুবক। তার হাতে একটি সিগারেট। আজ হরতাল। কখন একটি বাস পুড়বে আর সে সেই আগুনে সে সিগারেট ধরাবে!’

অবাক লাগলেও এই বিস্ময়কর তরুনটিই হলো হিমু। ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’ বইতে ঠিক এভাবেই যেন ঘটনার বর্নণা দেয়া হয়। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা চরিত্রের একটি হচ্ছে হিমু। খালি পায়ে পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুড়ে বেড়ায় হিমু। উদ্ভট যেন কাজেই তার আগ্রহের শেষ নেই। আর এসব কাজই যেন তার মূল কর্মকাণ্ড। যুক্তির ধারধারেন না সে। এমন সব কাণ্ড করেন যে তার আশে পাশের মানুষ বরাবরই অবাক হয়ে যায়। মানুষকে চমকে দেওয়াই তার কাজ।

তার ওপর ক্ষিপ্ত হলেও শেষ পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসাই আদায় করে নেন এই বিচিত্র চরিত্রটি। আর সব শেষে মানুষের কল্যানেই তার উদ্দেশ্যবিহীন যাত্রাটি শেষ করেন।

৯০ দশক থেকে এই ‘হিমু’ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা যায় এদেশের তরুনরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘হিমু’ হতে চেয়ে খালি পায়ে পিচ ঢালা পথে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাটা নিয়েছেন অনেকে। হিমুর প্রথম বইয়ের নাম ‘ময়ূরাক্ষী’।

নাটকে সরাসরি ‘হিমু’ চরিত্রে কেউ অভিনয় করেন নি। তবে হিমু সেজেছেন, বা হিমু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অভিনয় করা চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘আজ রবিবার’ নাটকের ‘তুহিন’। তুহিনের সাজসজ্জা হিমুর দৃশ্যমান রূপের অভাব অনেকটা পূরন করেছে। এছাড়া মোশাররফ করিমও সম্প্রতি নাটকে ‘হিমু’ সেজেছেন।

মিসির আলী:

মোটা ফ্রেমের ভারী চশমা পড়া এক লোক, যে কিনা কিছুতেই বিশ্বাস করেন না অতিপ্রাকৃতিক কোন ঘটনা। যতো রহস্যময় ঘটনাই ঘটুক যুক্তি দিয়ে তার সমাধান খুঁজে নেন। আর এই যুক্তিবাদী মানুষটির নাম ‘মিসির আলী’। যিনি হিমু’র ঠিক বিপরীত। হিমু যেমন যুক্তি মানে না, মিসির আলী আবার যুক্তির বাইরে হাঁটেন না।

হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা যত চরিত্র ছিলো তার মধ্যে ‘মিসির আলী’ই তার সবচেয়ে প্রিয়। ‘হিমু’কে যদি অগোছালো আর যুক্তিতর্ক বিরোধী চরিত্রের প্রতীক বলা হয়; মিসির আলীকে বলা হবে ঠিক তার বিপরীত। মানুষের মন, আচরণ, স্বপ্ন এবং সংকট যুক্তির আলোকে ব্যাখা করাই যেন এ চরিত্রের একমাত্র কাজ।

হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি নাটকে উঠে এসেছে ‘মিসির আলী’ চরিত্রটি। সম্প্রতি এ চরিত্রকে নিয়ে নির্মান করা হয়েছে ‘দেবী’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র। যা কিনা হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের অবলম্বনের নির্মিত। আর এ চলচ্চিত্রে মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করে হালের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। এছাড়া আরো ছিলেন- জয়া আহসান, শবনম ফারিয়াসহ আরো অনেকেই।

শুভ্র:

শুভ্র’ চরিত্রটি তার নামের অর্থের মতোই শুদ্ধতম এক মানবের প্রতিচ্ছবি যেন। হুমায়ূন আহমেদরে চরিত্রগুলোর মধ্যে শুভ্র অন্যতম। নিজেকে পৃথিবীর যাবতীয় জটিলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টাই যেন থাকে এ চরিত্রের। দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে মোটেও ভাবেন না শুভ্র।

সব সময় মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে বইয়ের মাঝে ডুবে থাকেন। বাবার বিপুল সম্পত্তি শুভ্রকে কখনো টানে না। শুভ্র সুন্দরের শুদ্ধতা নিয়েই বেঁচে থাকতে চান।

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় দেখা দেয় শুভ্র। এ চরিত্রে অভিনয় করেন নায়ক রিয়াজ। এছাড়াও শুভ্রকে নিয়ে নাট্যকার-নির্মাতা অরুণ চৌধুরী নির্মাণ করেন ধারাবাহিক নাটক ‘শুভ্র’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আয়াজ উদ্দিন অনি।

বাকের ভাই:

কোনো গল্প, উপন্যাস কিংবা নাটকের চরিত্র যে বাস্তবজীবনে এভাবে দৃশ্যমান হয় তা বোধ হয় কারোরই জানা ছিলো না। হুমায়ূন আহমেদই সেই বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের মাধ্যেমে।

হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাস অবলম্বনে নিমির্ত হয় নাটক। এ নাটকে ‘বাকের ভাই’র চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। পাড়ার এক মাস্তানকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। এরই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে শত শত মানুষ!

‘বাকের ভাই’র ফাঁসি বন্ধের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ বিক্ষোভ হয়। নাটকের স্ক্রিপ্ট ঘুরানোর কথা বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাঁসিই বহাল রেখেছেন নাট্যকার। ‘বাকের ভাই’র ফাঁসি হওয়ার পর কেঁদেছিলেন মানুষ। এমনকি নাট্যকারের উপর তীব্র অভিমান থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে! নাটক জগতের সে এক বিস্ময়কর ইতিহাস ‘বাকের ভাই’ চরিত্রটি।

রুপা:

‘রুপা’হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সৃষ্টি ‘রুপা’। হিমু’র মতো এক বাউন্ডুলেকে ভালোবাসে এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি। সবসময় অপেক্ষা করে হিমুর পথের দিকে তাকিয়ে। হিমু ফোন দিয়ে বলে ‘রূপা আমি আসছি’। হিমুর পছন্দের আকাশি রংয়ের শাড়ি, চোখে কাজল দিয়ে ছাদে কিংবা বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে রূপা। কিন্তু হিমু আসে না। রুপাও জানে হিমু আসবে না।

কিন্তু তারপরও অসম্ভব মায়া আর ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করে। পরিনতিহীন এক প্রেম নিয়ে রুপা দাঁড়িয়ে থাকে সবসময় হিমুর পথের দিকে তাকিয়ে।

নাটকে রুপার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রিচি। ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘আমি হিমু হতে চাই’ নাটকে মোশাররফ করিমের বিপরীতে রুপার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রিচি।

কালজয়ী এসব চরিত্রের মাধ্যমেই ভক্তদের মাঝে বেঁচে আছেন হুমায়ূন আহমেদ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here