• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

আজ ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

Find us in facebook

Find us in facebook

আজ ৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তিযােদ্ধারা প্রচণ্ড লড়াই করে পাক দখলদার বাহিনীকে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করে ফুলবাড়ী দখলদার শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে । 

দেশ মাতৃকাকে রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে ফুলবাড়ীকে পাক দখলদার মুক্ত করা সেই সব বীর সেনানী মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে যখন পশ্চিমা শাসক গােষ্ঠীর বিরুদ্ধে সারা দেশ ব্যাপি উত্তাল আন্দোলন চলছিল, তখণ ফুলবাড়ীতে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা এবং বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালীদের মধ্যে যাতে কোন সংঘাত সৃষ্টি না হয়। সে জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফুলবাড়ীতে গঠিত হয় সর্ব দলীয় সংগ্রাম কমিটি । ২৪ মার্চ পর্যন্ত ফুলবাড়ীতে পূর্ণ শান্তি বিরাজ করে । এমনি এক মুহুর্তে ২৫মার্চ গভীর রাতে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাক বাহিনী হানা দিয়ে হত্যা করে অসংখ্য নিরীহ বাঙ্গালীকে। পরদিন ২৬ মার্চ এই হত্যাযজ্ঞের সংবাদ ফুলবাড়ীতে এসে পৌছিলে বাঙ্গালীদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ওই দিন সকলে সর্ব দলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্দোগে ফুলবাড়ী শহরে বের করা হয় এক প্রতিবাদ মিছিল। মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ভাবে ফুলবাড়ী রেল ষ্টেশন থেকে কাঁটাবাড়ী বিহারী পট্টি হয়ে বাজারে ফেরার পথে বিহারী পট্টিতে মিছিলকে লক্ষ্য করে অবাঙ্গালীরা গুলি ছুড়লে সংঘাতের সুত্রপাত ঘটে। শুরু হয় অগ্নিসংযোগ লুটতারাজ। এ সময় ফুলবাড়ীর মুক্তিকামী মানুষ বিহারী পট্টির অবাঙ্গালী বিশিষ্ট ডাঃ শওকতের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করলে ডাঃ শওকত সহ তার পরিবারের ৫ জন সদস্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা যায় । এপ্রিলের ২ তারিখ পাক দখলদার বাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমন করে পুরো নিয়ন্ত্রনে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাঙ্গালীদের উপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগসহ শারিরীক নির্যাতন। ফুলবাড়ীর মুক্তিকামী যুবকরা মাতৃভূমিকে দখলদার মুক্ত করতে যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীতে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে পাক হানাদার মুক্ত করার জন্য ১৯৭১ এর ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথ ভাবে ফুলবাড়ী থানার জলপাইতলী, পানিকাটা, দেশমা, রুদ্রানী, জলেশ্বরী, আমড়া, রাণীনগর সহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে চর্তুমূখী আক্রমন চলে। এ সময় মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝে, দখলদাররা মিত্র বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে আগমন রোধ করতে ওই দিন বিকেলে আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় ফুলবাড়ীর ছোট যমুনার উপর লোহার ব্রীজটির পূর্বাংশ ডিনামাইট দিয়ে উঠিযে দেয় । ব্রীজটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও বিরাজ করছে ফুলবাড়ীর যমুনার বুকে । এ সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গুলিতে ফুলবাড়ী সরকারী কলেজ দক্ষিণ দিকে যমুনা নদীর উপরে ভারতীয় একজন সেনাবাহিনীর অফিসার নিহত হন। তার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতি সৌদ্ধ নির্মাণ করে যান। এর পর দখলদাররা মেঠো পথে ফুলবাড়ী ছেড়ে সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ীকে পাক দখলদার শত্রুমুক্ত করে ফুলবাড়ীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে । ফুলবাড়ীকে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার শত্রুমুক্ত করে দেশ মাতৃকার বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুলবাড়ীর সিএনবি এর ডাকবাংলোয় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাসহ ফুলবাড়ী বাসীর একটি স্বরণীয় দিন ।  

Place your advertisement here
Place your advertisement here