• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

অন্ধকার কি? কিভাবে এর সৃষ্টি?

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

এই অবাক পৃথিবীর কত কিছুই না রয়ে গেছে আমাদের অজানা। এর মাঝে অনেক রহস্যময় জিনিস আমরা জানতে পেরেছি এবং অনেক কিছুই আমাদের জানা হয়নি এখনও। আজ আমরা তেমনই এক অজানা তথ্য জানতে চেস্টা করবো। ডেইলি বাংলাদেশের আজকের এ আয়োজনে থাকছে অন্ধকার আসলে কি এবং কিভাবে এর সৃষ্টি?

আমাদের পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অন্ধকারকে ভয় পায় আর অন্ধকারকে ভয় পাওয়াকে বিজ্ঞানের ভাষায় লিক্টফবিয়া বলা হয়ে থাকে। অন্ধকার এমন একটি জিনিস যেটা আমাদের সম্পূর্ণ ইউনিভার্সে ছড়িয়ে আছে। আমাদের ইউনিভার্সে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ অন্ধকার। অন্ধকার তখনই গায়েব হয়ে যায় আলো চলে আসে। আবার যখন আলো চলে যায় তখন ওই স্থানে অন্ধকার চলে আসে। এরপরও আমাদের মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসু লোক আছে যাদের মনে প্রশ্নের উদয় হয় যে, অন্ধকারের গতি কত? আমাদের এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে এমন কিছু নেই যেটা আলোর গতিবেগ অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ তিন লাখ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড। তাহলে এখান প্রশ্ন আসাটা সাভাবিক অন্ধকারের গতি কত হতে পারে?

অন্ধকারের ভৌতিক রূপে কোনো অস্তিত্ব নেই। অন্ধকার মানেই হচ্ছে আলো না হওয়া। অর্থাৎ আলোর অভাব। যখন আপনি আলোকে কোনোভাবে আড়াল করবেন তখন আপনি অন্ধকার পাবেন। যেটাকে আমরা ছায়া বলে থাকি। যদি আমরা গতির হিসেবে কথা বলি তাহলে অন্ধকার ওইটাই যেটা আলো আসা বন্ধ হয়ে গেলে পাওয়া যায়। যদি আমাদের সূর্য হঠাৎ করে আলো প্রদান করা বন্ধ করে দেয় তাহলে পৃথিবীতে আলো আসা বন্ধ হয়ে যাবে আর পৃথিবীতে অন্ধকার ছেয়ে যাবে। কিন্তু পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড সময় লাগে। এর মানে সূর্যের আলোর ছোট থেকে ছোট অংশকে গায়েব হয়ে যাওয়ার জন্য আট মিনিট উনিশ সেকেন্ড সময় লাগবে। এরপর আলোর ছোট থেকে ছোট অংশ যাওয়ার পরে অন্ধকারকে পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড লাগবে। এর মানে আমরা পৃথিবীতে সূর্যকে আট মিনিট উনিশ সেকেন্ড পর্যন্ত দেখতে পারবো না।

অধিকাংশ বিজ্ঞানি এবং ভৌতিক শাস্ত্রী মনে করেন অন্ধকারের কোন গতি নেই সেটা না নড়াচড়া করতে পারে, না স্থানান্তর হতে পারে। যদি আমরা অন্ধকারকে আলোর অভাব ভাবি আর আলো নিয়ে অন্ধকারের পেছনে ছুটি তাহলে অন্ধকার ততটা গতিতে গায়েব হয়ে যাবে ঠিক যতটা গতিতে আলো আসবে। কিন্তু এর মানে এটাই দাঁড়ালো যে অন্ধকারও আলোর গতিতে ভ্রমন করতে পারে।

অন্ধকারকে আলোর ছোট থেকে ছোট অংশ গায়েব হয়ে যাওয়ার পরেই দেখতে পারবেন। আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে বেশ কিছু জায়গায় বা কিছু বস্তু বা পিন্ড আছে যার থেকে বের হওয়া আলো ওই অন্ধকারের স্থানকে নিয়ে নিয়েছে। ঐ বস্তু থেকে বের হওয়া ফটন আলোর উৎপন্ন করে আর অন্ধকারকে সরিয়ে ওই স্থানকে আলোকিত করে দেয়।

প্রশ্ন হল অন্ধকার বলে কি আসলেই কিছু আছে? আমাদের ইউনিভার্সে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই নাকি অন্ধকার তাহলে আমি এরকম কেন প্রশ্ন করছি অন্ধকার বলে কিছু আছে কি নেই?

এই প্রশ্নটার উত্তর শুধু জানার জন্য নয় বোঝার জন্য আপনাকে এই সম্পূর্ণ লিখাটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। অন্ধকার যেটা আলোর বিপরীত। আমাদের পুরো ইউনিভার্সের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ স্থান অন্ধকার হলেই এই অন্ধকারকে বোঝার জন্য আমাদের এই ইউনিভার্সের মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ আলোর সাহায্য নিতেই হবে। এই পাঁচ থেকে দশ ভাগ আলো আর ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ অন্ধকার যেটাই বলি না কেন এগুলো দেখার জন্য যেটার প্রয়োজনটা হল আমাদের চোখ।

যখন কোন বস্তুর ওপর থেকে আলোর কোনো কণা প্রতিফলিত হয়ে আসে আমাদের চোখে আঘাত করে তখনই আমরা সেটাকে দেখতে পাই। আমাদের চোখে যে আলো এসে পড়ে সেতা ইউনিভার্সে থাকা বিশাল একটি ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ক্ষুদ্রতম অংশ।

ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন এর মধ্যে অনেক রকমের আলো আছে। এই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন খুব মারাত্মক এবং খুব ভালোও হতে পারে। আমরা জানি আলো একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলাফেরা করে। আর এই গতির কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ প্যাটার্ন আছে। প্রধান সমস্যা তো এটাতেই, কারণ আমরা সব কিছু দেখতে পাই না। যদি এর থেকেও বেশি করে বলি তবে, বিজ্ঞান বলে আমাদের চোখে এই ইউনিভার্সের বিশাল রেডিয়েশনের একটি ক্ষুদ্র অংশকেই দেখতে পারে। অর্থাৎ আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতা খুবই ছোট।

এটাকে বোঝার জন্য কিছু উদাহরণ নেয়া যেতে পারে। যেমন, মনে করুন আমরা একটি পাখিকে যেভাবে অনেক রঙের সমন্বয়ে রঙ্গিন দেখি, একটি বিড়াল কিন্তু এইভাবে দেখেনা। কারণ ওই বিড়ালের ওই ধরনের কোষ নেই যেগুলো আমাদের আছে। এর মানে আমরা মানুষ এই পৃথিবীতে যে বিভিন্ন ধরনের রঙ দেখে থাকি তা শুধু আমাদের নিজেদের চোখ এবং মস্তিষ্কের তৈরি করা। সেটা আমাদের পৃথিবীর অন্য সব প্রাণীদের থেকে আলাদা। কিন্তু আমরা যে জিনিসটা পারি না বিড়াল কিন্তু সেটা খুব সহজেই পারে আর সেটা হল অন্ধকারেও দেখতে পারে।

এর মানে বিড়ালের ভিতরে অন্ধকারে দেখতে পাওয়ার কোষ আছে যা আমাদের মধ্যে নেই। আমরা যখন কোন কিছুকে দেখার কথা বলি তখন সেটা হচ্ছে আমাদের চোখের ভার্চুয়াল ধারনা। মনে করুন সূর্যের আলো যখন কার ওপরে পড়ে সে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয়। সেই প্রতিবিম্বগুলোকে আমাদের চোখ আমাদের মস্তিষ্কে থাকা নিউরন কোষকে ট্র্যান্সফার করে তারপর মস্তিষ্ক আমাদের বলে দেয় আমরা কি দেখছি।

এই আলোর আরো কিছু বিষয় আছে, আলো বিভিন্ন ওয়াভে চলাফেরা করে। একটি নির্দিষ্ট গতির আলোকেই আমরা শুধু দেখতে পারি। বাকিগুলোকে আমরা মোটেও দেখতে পাই না। যেমন এক্স রে, আল্ট্রাভাইওলেট রস্মি, গামা-রে এ রকম অনেক রকমের আলোকরশ্মি আছে যা আমাদের এই সাধারণ চোখ দেখতে পারে না। যেমন, আমরা মানুষের শরীরের ভেতরে থাকা হাড়কে খালি চোখে দেখতে পাই না কিন্তু যদি আমাদের চোখ এক্সরে সংবেদনশীল হতো তাহলে আমরা ঠিকই দেখতে পারতাম।

আমাদের মধ্যে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এই পৃথিবীতে আমরা যা দেখি তার বাইরে আর কিছুই নেই। কিন্তু বিজ্ঞানিকভাবে আমাদের এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। এখন যদি কোনো প্রাণী বা বস্তুকে শুধুমাত্র এক্স রে ওয়াভের মাধ্যমে দেখা যায় তাহলে সেটা আমাদের এই সাধারন চোখ ধরতে পারবে না। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে সেই বস্তু বা প্রাণীটি নেই। এই ক্ষেত্রে আপনি যদি বলেন ভূত আত্মা বা জিনের কথা, যে এদেরও তো খালি চোখে দেখা যায় না। তাহলে বলা যেতে পারে, হয়তো বা তবে নিশ্চিত হবে ধরা যেতে পারে এই মহাবিশ্বে এই রকম অনেক কিছুই আছে যেগুলো আমাদের এই সাধারন চোখ দেখতে পায় না।

বিজ্ঞানিরা এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর পরিমাণে গবেষণা করছেন যেন আমাদের দৃষ্টিসীমার আরো বিস্তার হতে পারে। তাহলে বন্ধুরা আমরা বুঝতেই পারছি এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে অনেক কিছুই আছে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। বিড়াল আলো এবং অন্ধকারে দেখতে পারে কিন্তু আমরা পারি না। এটা হচ্ছে আমাদের সীমাবদ্ধতা কিন্তু বিড়ালের কাছে এই সীমাবদ্ধতা নেই। এর জন্য তারা দিন এবং রাত উভয় সময় দেখতে পারে এবং তাদের কোনো প্রকার সমস্যাও হয় না। যে সমস্যাটি আমাদের আছে।

যদি আমরা রাতের বেলায় কোনো সমস্যা ছাড়া দেখতে পারতাম তাহলে আমরা কি বলতাম অন্ধকার কে? হয়তো আমরা এটাই বলতাম যে, দিনের বেলাই আমরা বেশি দেখতে পারি আর রাতে একটু কম। আর যদি আমাদের চখে রাতের বেলায় দেখতে পাওয়ার কোষ অনেক বেশি হত তাহলে হয়তো আমরা দিনের বেলাতেই কম দেখতে পারতাম আর রাতের বেলাতেই বেশি। এর মানে আমরা আজকের আলোচনা থেকে এটাই বুঝতে পারলাম যে, আমাদের এই সাইন্টিফিক সীমাবদ্ধতার কারণেই রাতের সৃষ্টি হয়েছে যেটাকে আমরা অন্ধকার বলে থাকি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here