• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

শেষ বলে ১ রানের নাটকীয় জয় পেল কলকাতা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

রোববারের পর আন্দ্রে রাসেল কি কেকেআর ভক্তদের মনে নিজের জায়গাটা আরো মজবুত করে নিলেন?

প্রশ্ন উঠতেই পারে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে টানা দু’বার দুশোর বেশি রান তুলে হারের উপক্রম তৈরি হয়েছিল। ম্যাচ প্রায় কেড়ে নিয়েছিলেন উইল জ্যাকস এবং রজত পতিদার। রাসেল নিজের প্রথম ওভারে আক্রমণে এসেই ফিরিয়ে দিলেন দু’জনকে।

শেষদিকে এসে আইপিএলের অন্যতম সেরা ফিনিশার দীনেশ কার্তিককেও ফেরালেন। তবু শেষ ওভারে কোহলিদের জেতানোর ‘দায়িত্ব’ নিয়ে নিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। তবে ১ রানে টান টান ম্যাচে জিতে শেষ হাসি কলকাতারই।

টস হেরে ঘরের মাঠে আগে ব্যাট করতে নেমেছিল কলকাতা। সুনীল নারাইনের অফ ফর্ম থাকা সত্ত্বেও প্রথমে ফিল সল্ট এবং পরে শ্রেয়স আইয়ারের ফিফটির সৌজন্যে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২২২ রান করে কলকাতা।

জবাবে বিরাট কোহলি এবং ফাফ ডু প্লেসি ব্যর্থ হলেও জ্যাকস এবং পতিদার ব্যাঙ্গালুরুকে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন। রাসেল তাদের ফেরানোর পর শেষ ওভারে স্টার্ককে তিনটি ছয় মারেন করন শর্মা।

তিনি আউট হওয়ার পর শেষ বলে ২ রান দরকার ছিল। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হন লকি ফার্গুসন। ম্যাচের পর অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে একটা প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি ওঠা উচিত, আর কত দিন কেকেআর বয়ে বেড়াবে স্টার্ককে?

এদিন প্রথম ২ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে এমনিতেই কেকেআরের কাজ কঠিন করে দিয়েছিলেন। পরের দিকে বাকি বোলাররা মিলে তা সামাল দিলেও শেষ ওভার সেই তাকেই দেওয়া হয়। তখনও জিততে চাই ২১ রান। বিপক্ষে করন শর্মার মতো অখ্যাত ক্রিকেটার।

তার হাতে পর্যন্ত তিনটি ছয় খেলেন স্টার্ক! সেই বোলারের দাম কখনো ২৫ কোটি হতে পারে? এরপরেও হয়তো স্টার্ককে সামলাতে আসরে নামবেন গৌতম গম্ভীর, শ্রেয়স আইয়াররা। কিন্তু শাক দিয়ে যে মাছ ঢাকা যায় না তা সমর্থকেরা বুঝে গেছেন।

কেকেআরের ইনিংসের প্রথম ওভার দেখেই বোঝা গিয়েছিল এই পিচে বল সহজে ব্যাটে আসবে না। তবু মোহাম্মদ সিরাজকে ছয় এবং চার মেরে শুরুটা খারাপ করেননি ফিল সল্ট। দ্বিতীয় ওভারে ইয়াশ দয়ালকে দু’টি চার মারেন।

উল্টো দিকে সুনীল নারাইন একেবারেই খেলতে পারছিলেন না। এক সময় প্রথম সাত বলে কোনো রান করতে পারেননি। তৃতীয় ওভারে সিরাজ বেশ বেকায়দায় ফেলেন তাকে। পাওয়ার প্লে-র সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিল না কেকেআর।

চাপ অনেকটাই কাটে চতুর্থ ওভারে। লকি ফার্গুসনকে চারটি চার এবং দু’টি ছয় মেরে ২৮ রান নিয়ে রান রেট অনেকটাই বাড়িয়ে দেন সল্ট। তবে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তাকে তুলে নেন সিরাজ। কিছুক্ষণ পরে ফেরেন নারাইনও।

রান করতে না পেরে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছিলেন। বড় শট খেলার প্রচেষ্টায় আউট হন। ইয়াশ দয়ালের বল অনেকটা দূরে থাকলেও শরীর একটুও না এগিয়ে শট মারেন। স্লোয়ার বলে বড় শট খেলা সহজ ছিল না। পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে নারাইনকে ফেরান দয়াল।

পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ফিরে যান অঙ্গকৃশ রঘুবংশীও। দয়ালের একই ওভারে মিড-অনের উপর দিয়ে হালকা শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিলেন। কেকেআরের ব্যাটারদের দরকার ছিল এই সময় ধস সামাল দেওয়ার।

সেটার দিকেই মন দিলেন শ্রেয়স এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার। হাতে উইকেট থাকায় পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর বল ধরে খেলছিলেন তারা। অফ ফর্মে থাকা ভেঙ্কটেশের কাছে সুযোগ ছিল এই ম্যাচে বড় রান করার। তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।

সফল হননি রিঙ্কুও। স্পিনারদের নিয়ে আসার পর এমনিতেই কেকেআর ব্যাটারদের বড় শট খেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। ফাস্ট বোলাররা ঝুঁকেছিলেন স্লোয়ারের দিকে। ফার্গুসনের মতো বোলারও স্লোয়ার দিচ্ছিলেন।

সে রকমই একটি বল শট খেলতে গিয়ে ফিরলেন রিঙ্কু। তার জায়গায় নেমে আন্দ্রে রাসেলকেও বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তবে উল্টো দিকে থাকা শ্রেয়সের প্রশংসা করতেই হয়। পরিস্থিতি বুঝে তিনি খেলছিলেন। শট নির্বাচনে ছিল দক্ষতার ছাপ।

শ্রেয়স জানতেন যে তিনি আউট হলে দল আরো চাপে পড়বে। তাই ঝুঁকি নিয়ে কোনো শট খেলতে যাননি। তার সঙ্গে রাসেলের ৪২ রানের জুটি অনেকটা তফাত গড়ে দিল। ওই সময়ে আর একটা উইকেট পড়লেও চাপে পড়ত কেকেআর।

শ্রেয়সের আউট হওয়াটাও দুর্ভাগ্যজনক। নিশ্চিত চার যে ওভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেবেন ফাফ ডু প্লেসি, তা ভাবতে পারেনি তিনি নিজেও। মাথা নাড়তে নাড়তে ফিরে গেলেন। তারপরেও যে কেকেআর দুশোর গন্ডি পার করল, তার নেপথ্যে রয়েছেন রমনদীপ সিং।

কেন তাকে খেলিয়ে মনিশ পান্ডেকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে এই প্রশ্ন অনেকেই তুলছিলেন। কিন্তু ১৯তম ওভারে সিরাজকে মারা দু’টি ছয় এবং একটি চারের কথা ভুললে চলবে না। ওই ওভারের ২০ রান কেকেআরকে অনেকটাই সাহায্য করল।

আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২০৪ রান তাড়া করে জিতেছে আরসিবি। ফলে এই ম্যাচে নিজেদের ছাপিয়ে যেতে হত তাদের। প্রথম বলেই হার্শিত রানাকে চার মেরে শুরুটা ভালই করেছিলেন কোহলি। প্রথম ওভারেই আসে ১২ রান। দ্বিতীয় ওভারে স্টার্ক দেন ১৫ রান।

তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই তৈরি হয় বিতর্ক। হার্শিতের স্লোয়ার বল কোহলির প্রায় কোমরের উচ্চতায় আসে। কোহলি কোনো মতে ব্যাট ঠেকানোর পর সেই বলে ক্যাচ নেন হার্শিতই। কোহলি ‘নো বলের’ রিভিউ নিলেও দেখা যায় সেটি বৈধ।

কারণ কোহলি ক্রিজ থেকে এগিয়েছিলেন। রিপ্লেতেও দেখায় বল তার কোমরের নীচেই রয়েছে। কোহলি অবশ্য খুশি হতে পারেননি। তিনি আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করেন। ডাগআউটে ফিরেও প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত দেখায় তাকে।

কোহলি ফেরায় দায়িত্ব নিতে হত ডু প্লেসিকে। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ভরুণ চক্রবর্তীর প্রথম বলেই মিড অন দিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাল ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন ভেঙ্কটেশ।

বিপক্ষের দুই অস্ত্রকে ফিরিয়ে দেওয়ায় স্বস্তি আসে কেকেআর শিবিরে। সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। উইল জ্যাকস এবং রজত পতিদার কেকেআর বোলারদের বেশ চাপে ফেলে দেন। পতিদার এত দিন ফর্মে ছিলেন না। জ্যাকস আগে ভাল খেলেননি।

কিন্তু কেকেআরের বোলাররা যেন দু’জনকেই ফর্মে ফেরানোর ‘পণ’ নিয়ে নেমেছিলেন। কোনো বোলারকেই তোয়াক্কা করছিলেন না এই দুই ব্যাটার। স্পিন সহায়ক পিচে সুয়াশ শর্মাকে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসাবে নামানো হয়েছিল। তার দ্বিতীয় ওভারেই হল ২২ রান।

ছাড় পেলেন না নারাইনও। তারও একটি ওভার থেকে এল ১৫ রান। জুটি ভাঙলেন সেই রাসেল। এই পিচে তার বোলিং সবচেয়ে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। প্রথম বলেই তিনি তুলে নেন জ্যাকসকে। ওভারের শেষ বলে আউট হন পতিদার।

বিপক্ষের সবচেয়ে বিপজ্জনক দুই ব্যাটারকে একই ওভারে তুলে নেন রাসেল। পরের ওভারে জাদু দেখালেন আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান নারাইন। তিনি প্রথম বলে ফেরালেন ক্যামেরন গ্রিনকে (৬)। শেষ বলে ফেরালেন মহীপাল লমরোরকে (৪)।

তখনও কেকেআর শান্তিতে থাকতে পারেনি। কারণ উল্টো দিকে কার্তিক ছিলেন। অতীতে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তার ৩৫ বলে ৮৩ রানের ইনিংস কেউই ভুলে যাননি। এদিন তার অর্ধেক খেললেই জেতা যেত।

কিন্তু পিচ এবং কেকেআর বোলারদের বৈচিত্রের কারণে সহজে খেলতে পারেননি। রাসেলের ওভারে আউট না হলে অবশ্য কী হত বলা যায় না।

Place your advertisement here
Place your advertisement here