• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

তীব্র গরমেও শীতল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

১৫ বছরে ৭৫ একর ক্যাম্পাসজুড়ে রোপণ করা হয়েছে চারশত প্রজাতিরও বেশি গাছ। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রয়েছে। এ গাছগুলো ক্রমশই সতেজ ও সুন্দর হয়ে উঠছে। এতে সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে ভূমিকা রাখছে। তীব্র তাপপ্রবাহে যখন সারাদেশে নাকাল অবস্থা, তখন কম তাপমাত্রায় এমন স্বস্তি অবস্থা বিরাজ করছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছায়া সুনিবিড় সবুজের মায়ায় জড়ানো, পাখির কিচির মিচির শব্দ, প্রাণ জুড়ানো দক্ষিণা বাতাস, স্নিগ্ধ হাওয়া আর প্রকৃতির কোমল মায়ার চাদরে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ক্যাম্পাসের ভেতরে পথ চলতে চলতে মনে হয় এ যেন বৃক্ষের জাদুঘর!

ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি জারুলগাছ। ক্যাম্পাসের প্রথম গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে দেবদারু সুশোভিত সড়ক। ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ সুন্দরতম সড়ক হল বিজয় সড়ক যা কৃষ্ণচূড়া ও দেবদারু সড়কে সংযোগ করে থাকে। প্রতি বিকেলে বিজয় সড়ক যেন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের ছবি তোলার হটস্পট হয়ে ওঠে। এছাড়া ক্যাম্পাসের তৃতীয় ও চতুর্থ গেট পেরিয়ে দেখা যাবে বকুল ও শিউলি ফুলের সমারোহ। গ্রীষ্মে সোনালু ফুলের ঝলকে মেতে উঠে ক্যাম্পাস।

প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবন সবুজে ঘেরা। যেন ছায়াঘেরা এক সবুজ উদ্যান। চারদিকে সবুজের আলোছায়া। বিচিত্র গাছের সমাহার। সবুজের ছায়ায় এক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আরেকটা ভবন দেখা যায় না। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবন, কাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, মসজিদ, হল, মিডিয়া চত্বর, ডরমিটরি, স্বাধীনতা স্মারক, শহীদ মিনার, খেলার মাঠসহ যেকোনো জায়গায় দাঁড়ানো হোক না কেন মুহূর্তেই যেন সবুজের  নির্মল অনুভূতি ছড়িয়ে পরে সর্বত্র।

পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে পরিচিত গাছের পাশাপাশি পরিচয় মিলবে বিভিন্ন অপরিচিত গাছের। কোনোটা পরিণত, কোনোটা চারা অবস্থা থেকে মাত্রই ছোট ডাল মেলে, কোনোটা আবার শরীর ভর্তি সবুজ-কোমল-কচি পাতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে।

ক্যাম্পাসে ফল-ফুল, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছও রয়েছে। যেমন- শাল,দেবদারু,পলাশ,কাউফল, আঁশফল, সফেদা, আলুবোখারা, আমলকী, বট, পাকুড়, হরীতকী, বহেরা, অর্জুন, কাইজেলিয়া, রাবার, সোনালু, বিলাতি গাব, জাত, নিম, বুদ্ধ নারিকেল, কাঠবাদাম।

ফুলগাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে- নীলমণি লতা, ঝুমকো লতা, লাল কাঞ্চন, শ্বেত কাঞ্চন, কাঠগোলাপ, চেরি, জবা, রজনিগন্ধা ও মাধবীলতা। দুর্লভ গাছের মধ্যে রয়েছে- গ্লিরিসিডিয়া, জয়তুন,পারুল, হৈমন্তী, জয়ত্রি, ঢাকি, জাম, তেলসুর, পুত্রঞ্জীব, কানাইডিঙা, হলদু, দইবোটা, পুমুর, মহুয়া,পানিয়াল, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, চিকরা শি এবং নাগেশ্বর গাছ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজিব মিয়া বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও সবুজের সমারোহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনার অনেক বেশি। তীব্র তাপপ্রবাহে দেশ যখন অতিষ্ঠ, তখন কম তাপমাত্রায় স্বস্তি মিলছে আমাদের ক্যাম্পাসে।

রাজিব মিয়া বলেন, ক্যাম্পাসে প্রতিটি বিকেল যেন দর্শনার্থীদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বৈশ্বিক তাপনাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জণজীবন, পশু-পাখি ও বৃক্ষের বৈচিত্র্য রক্ষা তথা উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল রক্ষায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বিশাল সামাজিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সকলেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা দরকার।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা জটিলতার কারণে স্থায়ী ক্যাম্পাস পেতে তিন বছর লেগে যায়। ৮ জানুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অন্য প্রান্ত দেখা যেত। সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সুধীজনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাস গাছপালা দিয়ে সাজানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছেন প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।

জানতে চাইলে অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও সবুজ আবহাওয়া, তা একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিদিন অনেক মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। এখন শুধু ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস নয়; বৃক্ষের বৈচিত্র্যের পরিপূর্ণ আমাদের এই ক্যাম্পাস।

Place your advertisement here
Place your advertisement here