• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ইসলাম ও বিজ্ঞানের আলোকে দুপুরের বিশ্রাম

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঘুম মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে রাতের ও দিনের ঘুমকে মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির অংশ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির একটি হলো রাতে ও দিনের ঘুম এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয়ই এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ২৩)

মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য যেমন রাতের বেলা ঘুমাতে হয়, তেমনি দিনের বেলায়ও সামান্য সময় ঘুমানো সুন্নত। দিনের এই ঘুমকে আমাদের দেশে বলা হয় ভাত-ঘুম, আরবিতে একে বলা হয় ‘কাইলুলা’, ইউরোপের অনেক ভাষায় একে বলা হয় ‘সিয়েস্তা’। আর ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাওয়ার ন্যাপ’।

ইউরোপের যে দেশগুলোতে খানিকটা গরম আবহাওয়া আছে, যেমন—গ্রিস ও স্পেনে সিয়েস্তা নামে পরিচিত ভাত-ঘুম সেখানকার মানুষের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বলা হয় দুপুর ২টার পরে এই দেশগুলো নাকি ঝিমিয়ে পড়ে। ইউরোপের কিছু শহরে, এমনকি সেখানকার মানুষের সিয়েস্তার আইনি অধিকার আছে।

দুপুর বেলায় সামান্য ঘুমানোর রীতি আরবেও আছে। মহানবী (সা.)-এর যুগেও এই ঘুমের প্রচলন ছিল। সাহাল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, ‘আমরা জুমার নামাজের পর দুপুরের বিশ্রাম গ্রহণ ও খাবার খেতাম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৮৬)

সাহাল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলী (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখো তো সে কোথায়? সেই ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠো, হে আবু তুরাব! ওঠো, হে আবু তুরাব! (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)

এমনকি মহানবী (সা.) নিজেও দুপুর বেলা কাইলুলা করতেন, এ ব্যাপারে উম্মু সুলায়ম (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) তাঁর কাছে আসতেন এবং বিশ্রাম নিতেন, উম্মু সুলায়ম তাঁর জন্য একটা চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিলে তিনি তার ওপর কাইলুলা করতেন। তিনি প্রচণ্ড ঘামতেন আর উম্মু সুলাইম তা একত্র করতেন এবং সুগন্ধির বোতলে তা মিশিয়ে রাখতেন। নবী (সা.) বলেন, হে উম্মু সুলায়ম! এ কী করছ? তিনি বলেন, আপনার ঘাম, আমি সেটা সুগন্ধির সঙ্গে মিশিয়ে রাখি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৫১)

দুপুর বেলায় সুন্নতের নিয়তে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে একদিকে যেমন নবীজির সুন্নত পালনের সওয়াব পাওয়া যাবে, তেমনি শারীরিক ও মানসিক প্রফুল্লতা অর্জন হবে।

দিনভর নানা কাজের চাপের পর দুপুরের এই ঘুম দিনের বাকি সময়টুকু সতেজ বোধ করতে এবং মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

কারণ যে ধরনের কর্মশক্তি নিয়ে আমাদের দিন শুরু হয়, সেটি দিন গড়ানোর সঙ্গে কমে আসতে শুরু করে। কাইলুলা বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।

এ ব্যাপারে লন্ডনের ঘুমবিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান দ্য স্লিপ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, ঘুম বিশেষজ্ঞ গাই মেডোজ বলেন, ‘আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, আমাদের মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে। আমরা যত বেশি সময় ধরে জেগে থাকি, আমাদের মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুমভাব তৈরি হতে থাকে।’

গাই মেডোজ বলেন, ‘যখন আমরা ন্যাপ (ভাত-ঘুম) নিই, তখন এডেনোসিনের ব্যবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়; যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মেজাজ ভালো বোধ করি।’ এর ফলে বিকেলের দিকে কাজে মনোযোগ বেশি দেওয়া সম্ভব হয়। কাজে ভুল করার আশঙ্কা কমে।

তাঁর মতে ভাত-ঘুমের সময়কাল হওয়া উচিত ১০ থেকে ২০ মিনিট। ভাত-ঘুম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তার মানে হৃিপণ্ড ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর শরীরের এই যন্ত্রগুলো ভালো থাকলে আরো অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে।

সুবহানাল্লাহ, আমাদের সবার উচিত রাসুল (সা.)-এর প্রতিটি সুন্নত পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করার চেষ্টা করা। এতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি পার্থিব অনেক উপকারিতাও পাওয়া যায়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here