• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

করোনাকালের হজ: মুমিন হৃদয়ে কাবার জন্য ব্যাকুলতা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কোনো মাধ্যমহীন সম্পর্ক ইসলামের অনন্য বৈশিষ্ট্য। তাই নিবিষ্ট মনে কেউ মহান আল্লাহর কাছে আকুতি জানালে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। তবে দৃশ্যমান বস্তুর প্রতি মানবপ্রকৃতির আগ্রহও দমবার নয়। তাই মহান আল্লাহ দিকদিগন্তে ছড়িয়ে থাকা নিদর্শনাবলি পরিদর্শন করতেও বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান জানালে নিশ্চয়ই তা অন্তরের আল্লাহভীতির অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩২)

সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য হজ ফরজ : হজ ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান। মহান আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার অনুপম নিদর্শন। তাই সামর্থ্যবানের জন্য হজ পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম বাক্কায় ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। তাতে মাকামে ইবরাহিমসহ বহু সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, মানুষের মধ্যে যে সামর্থ্যবান তার ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ওই ঘরের হজ করা কর্তব্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬-৯৭)

হজের প্রতিদান : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুই ওমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে। আর মকবুল হজের বিনিময় শুধু জান্নাত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)

ভালো-মন্দ ইচ্ছার কারণে পাপ-পুণ্য : আবু কাবশাহ আল আনমারি (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘দুনিয়া চার ধরনের ব্যক্তির জন্য :

এক. আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ ও ইলম দান করেছেন। সে সম্পদের বিষয়ে রবকে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে এবং সম্পদে আল্লাহর হক সম্পর্কে অবগত। সে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ;

দুই. আল্লাহ তাআলা যাকে ইলম দিয়েছেন, সম্পদ দেননি। তবে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে যে আমি সম্পদশালী হলে তার মতো আমিও ভালো কাজ করতাম। নিয়তের কারণে সে সওয়াব পাবে। তাই উভয়ের সওয়াব সমান হবে;

তিন. আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দিয়েছেন, ইলম দেননি। ইলম না থাকায় সে সম্পদের অপব্যবহার করে। নিজের রবকে ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে না এবং সম্পদে আল্লাহর হক সম্পর্কেও জানে না। সে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ;

চার. আল্লাহ যাকে ইলম দেননি ও সম্পদও দেননি। সে মনে মনে ইচ্ছা করে, আমার সম্পদ থাকলে আমিও তার (তৃতীয় ব্যক্তির) মতো কাজ করতাম। সে মন্দ ইচ্ছার প্রতিদান পায়। তাদের উভয়ের পাপ সমান হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩২৫)

নিয়মিত আমল ছুটে গেলেও সওয়াব : কেউ অপারগতার কারণে কোনো নিয়মিত আমল ছুটে গেলে আল্লাহ তার পূর্ণ সওয়াব দেন। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা অসুস্থ হলে বা সফরে বের হলে সে সুস্থ অবস্থায় অথবা মুকিম অবস্থায় যেসব আমল করত তখনো তার জন্য ওই সওয়াব লেখা হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৬)

হাজিদের সদৃশ্যতা গ্রহণ : সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য হজ পালন ফরজ। আর অন্যরা এ সওয়াব পেতে হাজিদের সদৃশ্যতা অবলম্বন করবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪০১)

যেসব আমলে মেলে হজের সওয়াব : জিলহজ মাসের শুরু থেকে কিছু আমল সবাই পালন করতে পারে। এর মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণের পাশাপাশি হাজিদের সঙ্গে সদৃশ্যতা লাভ করা যায়। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।

তাসবিহ পাঠ : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের চেয়ে বেশি উত্তম ও প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৪৪৬)

রোজা পালন : রাসুলুল্লাহ (সা.) জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৭)

চুল ও নখ না কাটা : উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যখন জিলহজের প্রথম দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭)

আরাফার দিন রোজা রাখা : আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে তিনি আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

মুমিনের তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে ভালোবাসার নতুন জাগরণ তৈরি করে বায়তুল্লাহ। মনের কালিমা মোচন করে সাদা ইহরাম। বিশ্বের অসংখ্য মুসলিমের প্রেমের সফর থমকে আছে কভিড-১৯ মহামারির কারণে। এ বছর সৌদিতে অবস্থানরত মাত্র ৬০ হাজার হজযাত্রী নিয়ে হজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালেও বিশ্বের ২৫ লাখের বেশি মুসলিম হজ পালন করেছেন। আল্লাহর পবিত্র ঘরের অতিথি হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় প্রহর গুনছে অসংখ্য মুমিন। তাদের এ ব্যথা প্রশমিত হওয়ার মতো নয়। আল্লাহ তাদের হজের আশা পূরণ করুন এবং তাদের নিয়তের জন্য সাওয়াব দান করুন। আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here