• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

তাওফিক কী কেন কিভাবে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

আরবি তাওফিক শব্দের অর্থ সুযোগ দান বা আনুকূল্য তৈরি। ইসলামী পরিভাষায় তাওফিক বলতে বোঝায়, আল্লাহ কর্তৃক কাউকে কোনো ভালো কাজের সুযোগ প্রদান করা। মুসলিমসমাজে যেকোনো ভালো কাজে নিজের জন্য বা অন্যের জন্য আল্লাহর দরবারে তাওফিক প্রার্থনা করার রীতি আছে।

তাওফিক কী?

ড. আহমদ আবদুল মজিদ মক্কি বলেন, “তাওফিক হলো মানুষের অন্তরে আল্লাহ কর্তৃক সুপথের দিশা দান। সেটা পথপ্রদর্শন, ভালো কাজে স্থিতি দান অথবা সামর্থ্য সৃষ্টির মাধ্যমে হতে পারে। কাউকে তখনই ‘তাওফিকপ্রাপ্ত’ বলা হবে, যখন ভালো কাজে আল্লাহ তাঁর পথচলাকে সহজ করেন, অবস্থান দৃঢ় করেন এবং সফল করেন। এককথায়, কাউকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করে কল্যাণের পথে পরিচালিত করাকে ‘তাওফিক’ বলা যায়।”

তাওফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়

আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে বান্দাদের ভালো কাজের তাওফিক দেন। শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকেই মানুষ তাওফিক লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে; আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮৮)

সবাই তাওফিকের মুখাপেক্ষী

কোনো মানুষের বাহ্যিক শক্তি ও সামর্থ্য তার কল্যাণে নিশ্চিত করতে পারে না; বরং সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের যে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম তোমাদের তা দিইনি; আমি তাদের দিয়েছিলাম কান, চোখ ও হৃদয়; কিন্তু তাদের কান, চোখ ও হৃদয় তাদের কোনো কাজে আসেনি। কেননা তারা আল্লাহর আয়াতগুলো অস্বীকার করেছিল। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। এটাই তাদের পরিবেষ্টন করল।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত : ২৬)

মন্দ কাজে তাওফিক ব্যবহার নিষিদ্ধ

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, ভালো ও মন্দ সব ধরনের কাজের স্রষ্টা মহান আল্লাহ। তবে তিনি দয়াপরবশ হয়ে কাউকে ভালো কাজের তাওফিক দেন এবং ইনসাফের সঙ্গে কাউকে তা থেকে বঞ্চিত করেন; তিনি তা করেন মূলত তাঁর পূর্বজ্ঞান এবং বান্দার মন্দ প্রকৃতি ও প্রবণতার কারণেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি তাদের তাঁর পথ দেখান যারা তাঁর অভিমুখী।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৭)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘সে বলল, আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কাজপ্রবণ; কিন্তু আমার প্রতিপালক যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)

কিন্তু আল্লাহ যেহেতু ন্যায়পরায়ণ ও দয়াশীল এবং তিনি যেহেতু বান্দার কল্যাণ চান, তাই মন্দ কাজকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা নিষিদ্ধ ও পাপ। একইভাবে ইসলামী পরিভাষা তাওফিককে মন্দ কাজের সঙ্গে যুক্ত করাও রীতিবহির্ভূত। কেননা তা আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণা পোষণের নামান্তর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী—যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদের শাস্তি দেবেন।...’ (সুরা : ফাতাহ, আয়াত : ৬)

তাওফিক লাভের উপায়

ভালো কাজের সুযোগ তথা তাওফিক হলো আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। তবে কিছু কিছু আমলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর এই অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। এমন কয়েকটি কাজ হলো—

১.   আল্লাহর অনুগ্রহ : কোনো আমল ছাড়া শুধু আল্লাহর অনুগ্রহেও ব্যক্তি তাওফিক লাভ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো আমার সাধ্যমতো সংস্কারই করতে চাই। আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে; আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮৮)

২.   নিয়তের সততা : দাম্পত্য জীবনের কলহের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৫)

৩.   আল্লাহর ওপর আস্থা : যারা আল্লাহর ওপর আস্থাশীল আল্লাহ তাদের পথ খুলে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে; আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮৮)

৪.   দৃঢ় প্রত্যয় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তাঁর কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৫)

৫.   প্রচেষ্টা : কেউ ভালো কাজে প্রচেষ্ট হলে আল্লাহ পথ খুলে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত :  ৬৯)

৬.   দোয়া : দোয়া আল্লাহর অনুগ্রহকে তরান্বিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দোয়া হলো : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার রহমতপ্রার্থী। কাজেই আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না এবং আমার সব কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র উপাস্য।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)

মুমিন জীবনে তাওফিকের বহিঃপ্রকাশ

মুমিন জীবনে তাওফিকের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ভালো কাজের সুযোগ লাভ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জেনে রাখো যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল রয়েছেন; তিনি বহু বিষয়ে তোমাদের কথা শুনলে তোমরাই কষ্ট পেতে। কিন্তু আল্লাহর তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন, কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের কাছে অপ্রিয়। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৭)

তাওফিকের ব্যাপারে হতাশা নয়

আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালো কাজের সুযোগ লাভে বান্দা কখনো নিরাশ হবে না। কেননা আল্লাহ যেকোনো সময় তাকে সুযোগ করে দিতে পারেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাহকে মৃত্যুর আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)

আল্লাহ সবাইকে ভালো কাজ করার তাওফিক দিন। আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here