• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

দুর্দিনে আর্থিক সংকট থেকে বাঁচতে করণীয়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

করোনাভাইরাইসের কারণে বৈশ্বিক যে আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে, কর্মচ্যুত হয়েছে কোটি মানুষ, জীবন-জীবিকার সংকট দেখা দিয়েছে সর্বত্র। এমন সংকটকালে আর্থিক সংকট থেকে জীবনযাপনে সংযত হওয়ার পাশাপাশি অনাগত দিনের জন্য সঞ্চয় করার পরামর্শ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১৮)

উল্লিখিত আয়াতে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় গড়ে তুলতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা প্রধানত পরকালের ব্যাপারে। তবে পার্থিব জীবনেও মুমিন তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদাসীন হবে না, যা অন্যান্য আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়।

মুমিন ভবিষ্যতের উদাসীন নয়

সাদ (রা.)-কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে যান মহানবী (সা.)। তখন তিনি তাঁর সব সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এক-তৃতীয়াংশ। আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তোমার সম্পদ থেকে তুমি যা সদকা করো, তা তো সদকাই এবং তোমার পরিবারের জন্য যা খরচ করো, তাও সদকা। আর তোমার সম্পদ থেকে তোমার স্ত্রী যা খায় তাও সদকা। তোমার পরিবার-পরিজনকে যদি তুমি সম্পদশালী রেখে যাও অথবা বলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে রেখে যাও, তাহলে তা তাদের মানুষের কাছে হাতপাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার তুলনায় উত্তম। আর এ কথা বলতে বলতে তিনি নিজ হাত দিয়ে ইশারা করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪১০৭)

আর্থিক অনটনের ব্যাপারে কেন সতর্কতা প্রয়োজন?

মহানবী (সা.) ভবিষ্যৎ দারিদ্র্যের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, ‘দারিদ্র্য মানুষকে কুফরি নিকটবর্তী করে দেয়।’ ইমাম গাজালি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘অভাবের কারণে মানুষ কুফরিতে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়। কেননা, অভাব তাকে ধনীদের প্রতি হিংসায় লিপ্ত করবে। আর হিংসা পুণ্যকে ধ্বংস করে। দীনহীন অবস্থায় পড়লে মানুষের মনমানসিকতা নষ্ট হয়। ফলে তার দ্বিন পালনের আগ্রহ হারিয়ে যায়। এ ছাড়া দারিদ্র্যের কারণে মানুষের মনে আল্লাহ কর্তৃক বণ্টিত জীবন-জীবিকা ও ভাগ্যের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।’ (ফয়জুল কাদির : ৪/৬৮৬)

সংকট থেকে বাঁচতে কোরআনের নির্দেশনা

পবিত্র কোরআনের সুরা ইউসুফে আল্লাহ তাআলা মানুষকে অনাগত দিনের সংকট থেকে আত্মরক্ষার পথ বাতলে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইউসুফ বলল, তোমরা সাত বছর একাদিক্রমে চাষ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য কাটবে তার মধ্যে সামান্য পরিমাণ তোমরা ভক্ষণ করবে, তা ছাড়া সমস্ত শীষসহ রেখে দেবে। এরপর আসবে সাতটি কঠিন বছর। এই সাত বছর যাহা আগে সঞ্চয় করে রাখবে লোকে তা খাবে; শুধু সামান্য কিছু যা (বীজ হিসেবে) তোমরা সংরক্ষণ করবে তা ছাড়া। অতঃপর আসবে এক বছর, সে বছর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সে বছর মানুষ প্রচুর ফলের রস নিংড়াবে।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৪৭-৪৯)

কোনো জাতীয় সংকটের আশঙ্কা হলে আয়াতের নির্দেশনা মতে মানুষ যথাসম্ভব সংরক্ষণ করবে। আর সাধারণ সময়ের জন্য মুসলিম স্কলারদের পরামর্শ হলো মানুষ তার আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করবে।

সংরক্ষণের সময় যা লক্ষণীয়

ইসলাম প্রয়োজনীয় সম্পদ সংরক্ষণের অনুমতি দিলেও সমাজের আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হয়—এমন কাজ করার অনুমতি দেয়নি। যেমন—

১.   কার্পণ্য না করা : সম্পদ সংরক্ষণের নামে কার্পণ্য করা অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ বলেন, ‘যারা কৃপণতা করে, মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তা গোপন করে আর আমি আখিরাতে অবিশ্বাসীদের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৭)

২.   অসহায় মানুষকে বঞ্চিত না করা : সম্পদের জাকাত তথা অসহায় মানুষের আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার আদায় না করার কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৪)

৩.   ভারসাম্য নষ্ট না করা : মানুষ এই পরিমাণ সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারবে না, যাতে সমাজের আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং তাতে শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হয়। আল্লাহর নির্দেশ, ‘সম্পদ যেন তোমাদের ধনীদের মধ্যে আবর্তন না করে।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ৭)

৪.   হারাম উপার্জন থেকে বাঁচা : হারাম উপার্জনের কারণে আল্লাহ মানুষের ওপর ক্রোধান্বিত হন। ফলে মানুষের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা

অন্যায়ভাবে আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদে ডুবে থাকে। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১৮)

আর্থিক সংকট থেকে বাঁচতে করণীয়

কোরআন ও হাদিসে সংককালে স্বস্তিকর জীবন লাভের জন্য যেসব আমলের কথা বলেছে তার কয়েকটি হলো—

১.   অর্থ ব্যয়ে ভারসাম্য অপরিহার্য : ইসলাম সম্পদ ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)

২.   অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ : মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো; অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

৩.   ধনীদের আছে মানবিক দায় : নিজ প্রচেষ্টায় সব মানুষ বিপর্যয় থেকে বাঁচতে পারে না। তাই সামাজিক সুরক্ষায় ধনীদের দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)

৪.   জীবিকার অনুসন্ধান করা : কর্মতৎপর মানুষ সাধারণত জীবন-জীবিকার সংকট থেকে বেঁচে থাকে। তাদের প্রশংসায় ইরশাদ হয়েছে, ‘অপর লোকেরা পৃথিবীতে বিচরণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)

৫.   সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা : সম্পদ ধ্বংস হয়—এমন সব কাজ থেকে আল্লাহ বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ কোরো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫)

৬.   আল্লাহর কাছে দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক নামাজের পর দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কুফরি, দারিদ্র্য ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩৪৭)। আল্লাহ সবাইকে সংকট থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here