• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

মদিনায় ইসলামী সমাজ গঠনের প্রথম অঙ্গীকার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

নবুয়তের দ্বাদশ বর্ষে হজের সময় মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) মদিনা থেকে মুসলিমদের বড় একটি কাফেলা নিয়ে মক্কায় আসেন। ১২ জিলহজ রাতের তৃতীয় ভাগে তারা আকাবা নামক স্থানে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করেন। সংখ্যায় তারা ছিল ৭৫ জন। ৭৩ জন পুরুষ এবং দুজন নারী। সৌভাগ্যবান দুই নারী হলেন উম্মে আম্মারা নাসিবা বিনতে কাব (রা.) এবং উম্মে মানি আসমা বিনতে আমর (রা.)। এই সাক্ষাতে তারা নবীজি (সা.)-কে মদিনায় হিজরতের আমন্ত্রণ করেন এবং তাঁকে রক্ষায় জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করে। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৮০)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন তাঁর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)—যদিও তখনো মুসলিম হননি। তিনি মদিনাবাসীর সামনে মক্কার পরিস্থিতি ও মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁর উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘মুহাম্মদের মূল্য ও মর্যাদা সম্পর্কে তোমরা জানো। আমাদের গোত্রের মধ্যে যারা মুহাম্মদ প্রবর্তিত ধর্ম বিশ্বাস সমর্থন করে না, মুহাম্মদকে আমরা তাদের কাছ থেকে দূরে রেখেছি। নিজ শহরে স্বগোত্রীয়দের মধ্যে তিনি নিরাপদে আছেন। তিনি তোমাদের কাছে যেতে চান, তোমাদের সঙ্গে মিশতে চান। যদি তোমরা তাঁর নিরাপত্তা দিতে এবং শত্রুপক্ষের হামলা থেকে তাঁকে রক্ষা করতে পারো তবে কিছু বলার নেই। তোমরা যে দায়িত্ব নিয়েছ সে তোমরাই ভালো জানো। কিন্তু যদি তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করে থাকো, তবে এখনই চলে যাও।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১৬২)

আব্বাস (রা.)-এর কথা শেষ হলে কাব (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেন, আল্লাহ আমাদের কাছে কোন বিষয়ে বাইআত বা অঙ্গীকার চান। তিনি তা বর্ণনা করেন। আব্বাস ইবনে উবাদা আনসারি (রা.) মদিনাবাসীকে এই অঙ্গীকারের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, তোমরা বুঝতে পারছ তোমরা কিসের অঙ্গীকার করছ? তোমরা আরব ও অনারবের সঙ্গে যুদ্ধের অঙ্গীকার করছ। সেদিন যদি তোমরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসো, তবে এখনই অঙ্গীকার ছেড়ে দাও। সাহাবিরা তখন আবারও নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বাইআতের জন্য অগ্রসর হন। সর্বপ্রথম বাইআত গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন আসআদ ইবনে জুরারা (রা.)। পরবর্তী সময়ে অন্যরা শপথ গ্রহণ করে। পুরুষরা নবীজির হাতে হাত রেখে এবং নারীরা মৌখিকভাবে বাইআত গ্রহণ করেছিল। ইসলামের ইতিহাসে একে আকাবার দ্বিতীয় শপথ বলা হয়। (সিরাতে মোস্তফা : ১/৩৩২ ও ৩৩৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সে রাতে সাহাবিদের থেকে পাঁচটি বিষয়ে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তাহলো—

১.   ভালো-মন্দ সর্বাবস্থায় আমার কথা শুনবে এবং মানবে।

২.   সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা উভয় অবস্থায় সম্পদ ব্যয় করবে।

৩.   সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

৪.   আল্লাহর পথে উঠে দাঁড়াবে এবং আল্লাহর ব্যাপারে কারো ভয়ভীতি প্রদর্শনে পিছিয়ে যাবে না।

৫.   তোমাদের কাছে যাওয়ার পর আমাকে সাহায্য করবে এবং নিজেদের প্রাণ ও সন্তানদের রক্ষা করার মতোই আমার হেফাজত করবে। এতে তোমাদের জন্য জান্নাত রয়েছে। (আর-রাহিকুল মাখতু, পৃষ্ঠা ১৬২)

মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে অঙ্গীকার গ্রহণকারী মুসলিমরা নিজেদের মধ্য থেকে ১২ জন নকিব বা নেতা মনোনীত করেন। তারা হলেন, ‘আসআদ ইবনে জুরারা, সাদ বিন রাবি, সাদ বিন উবাদা, উসাইদ বিন হুদায়ের, আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা, বারা বিন মারুর, উবাদা বিন সামিত, রাফি বিন মালিক, আবদুল্লাহ ইবনে আমর, মুনজির বিন আমর, সাদ বিন খায়সামা, আবুল হায়সাম মালিক বিন তাইয়িহান (রা.)। নির্বাচিত সাহাবিদের ৯ জন খাজরাজ থেকে এবং তিনজন আউস গোত্রের ছিলেন। তাঁরা পুনরায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৮১)

আল্লামা ইদরিস কান্ধলভি (রহ.)-এর মতে আকাবার দ্বিতীয় শপথের ব্যাপারে নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে—এর বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইনজিল ও কোরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং এটাই তো মহাসাফল্য।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১১; সিরাতে মোস্তফা : ১/৩৩৪)

বাইআত শেষ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) কাফেলাকে নিজ অবস্থানে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সকাল হতে হতে কোরাইশরা শপথের কথা জানতে পারল এবং একটি বিরাট দল নিয়ে মদিনাবাসীদের ঘিরে ধরল। কিন্তু কাফেলার মুশরিকরা তাদের নিশ্চিন্ত করল এখানে এমন কিছু হয়নি এবং তাহলে অবশ্যই তারা জানতে পারত বলে আশ্বস্ত করল। অবশ্য কোরাইশরা অনুসন্ধান করে জানতে পারল ঘটনা সত্য। তখন তারা মদিনা থেকে আগত কাফেলার পিছু নেয়। কিন্তু ততক্ষণে তারা নিরাপদ স্থানে চলে এসেছে। শুধু সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-কে ধরতে পারল। তারা তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন করল। অবশেষে জুবায়ের ও হারিস নামক দুই ব্যক্তি যাদের সিরিয়ায় যাওয়ার পথে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদের সহায়তায় তিনি মুক্তি পেলেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ১২০-১২১)

ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি ‘আকাবার দ্বিতীয় শপথ’ যা বাইআতে কুবরা বা উজমা নামেও পরিচিত তার নিম্নোক্ত প্রভাব তুলে ধরেছেন।

১.   ঐতিহাসিকরা এই শপথকে ‘ফাতহুল ফুতুহ’ বিজয়গুলোর বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেননা এর মাধ্যমে মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।

২.   এ শপথের মাধ্যমে আগামী দিনের জন্য আত্মবিসর্জনকারী কর্মী দল ও মুসলিম নেতৃত্ব তৈরি হয়।

৩.   মদিনার বিবদমান দুটি গোত্রের মধ্যে চূড়ান্ত সম্প্রীতি স্থাপিত হয়।

৪.   শপথের স্থান ও সময় নির্ধারণ থেকে নবীজি (সা.)-এর বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার প্রমাণ মেলে।

৫.   এই বাইআতের মাধ্যমে মুসলিমরা একটি রাজতৈনিক শক্তি হিসেবে পথচলা শুরু করে। (আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা, পৃষ্ঠা ২৪৬-২৫১)

Place your advertisement here
Place your advertisement here