• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ইসলামে মাতৃভাষার মর্যাদা 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

মায়ের সঙ্গে যেমন সন্তানের সম্পর্ক গভীর, মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও তেমনি গভীর। সন্তান জন্মের পর যখন কথা বলতে শেখে তখন সে তার মায়ের ভাষাতেই কথা বলে, এটা তার স্বভাবগত ও জন্মগত চাহিদা। ইসলাম মানুষের এ চাহিদার যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছে। প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছানোর জন্য এই জগতে ধারাবাহিকভাবে নবি ও রসুল এসেছেন।

পৃথিবীর নানা দেশে নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে আল্লাহ অসংখ্য নবি-রসুল পাঠিয়েছেন। সব নবি-রসুলের ওপর আল্লাহ ওহি পাঠিয়েছেন তাদের স্বগোত্রীয় ভাষায়। মহান রব্বুল আলামিন সুরা ইবরাহিমের ৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন—‘আমি প্রত্যেক রসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যেন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।’

নবি ও রসুলগণ যদি সুকৌশলে মানুষকে আল্লাহর পথে নিজ মাতৃভাষায় আহ্বান না করতেন, তাহলে জনসাধারণ তা পূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করতে পারত না। কেননা আহ্বানকারী যদি এক ভাষার হন, আর তার জাতি যদি হয় ভিন্ন ভাষাভাষী, তবে তার ডাকে কেউই সাড়া দেবে না। তাই দিন প্রচারে ইসলাম মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। মহান আল্লাহর অসংখ্য অগণিত সৃষ্টির মধ্যে মানুষ হচ্ছে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’—সৃষ্টির সেরা জীব।
এই মানুষকে আল্লাহ এমন একটি নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কোনো প্রাণিকে দেননি; আর তা হচ্ছে মানুষের মুখের ভাষা। আল্লাহ সুরা রুমের ২২ নম্বর আয়াতে বলেন—‘তার নির্দেশনাবলির অন্যতম হলো : আসমান-জমিন সৃষ্টি, তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা এবং ভাষার ভিন্নতা।’ আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিপুণতার সঙ্গে প্রত্যেকটি মানুষকে অন্য মানুষ থেকে আলাদাভাবে তৈরি করেছেন। তাদের মধ্যে দিয়েছেন রংয়ের ভিন্নতা, ভাষার ভিন্নতা, দিয়েছেন রুচির বৈচিত্র্য। এর মাধ্যমেই আল্লাহর মহা কুদরত ও অপরূপ মহিমা ফুটে উঠেছে।

পৃথিবীর প্রত্যেক জনপদে সব জাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে; যা তাদের মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা, স্বপ্নের ভাষা এবং প্রাত্যহিক মনের অব্যক্ত বিষয়গুলো প্রকাশের ভাষা। মমতাময়ী মায়ের কাছ থেকে প্রথম সে ভাষা শেখে বলে তার নামকরণ করা হয়েছে মাতৃভাষা। বর্তমানে বিশ্বে প্রচলিত ছয় সহস্রাধিক ভাষার মধ্যে এক এক জনপদের লোকেরা তাদের সেই প্রিয় মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষার সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশ ও অঞ্চলকে। তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মধ্য এশিয়ার অঞ্চলগুলো এবং ভারতের উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।
তবে আমাদের মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় শুধু আন্দোলন-সংগ্রামই নয়, জীবনও দিতে হয়েছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির ইতিহাসে রচিত হয়েছে অমর এক শোকগাথা; যেখানে শাহাদতের সুধা পান করতে হয়েছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেককেই। বাংলার দামাল ছেলেরা সেদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মায়ের ভাষাকে মুক্ত করেছিলেন বলেই আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের উচিত ভাষা শহিদদের জন্য দোয়া করা এবং বিশুদ্ধ মাতৃভাষা চর্চা করা, বাংলাকে সব বিকৃতি থেকে রক্ষা করা।

লেখক:মুফতি মীযানুর রহমান রায়হান
বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক ও ধর্মীয় আলোচক

Place your advertisement here
Place your advertisement here