• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ফুলবাড়ীতে হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকে দুজন মারা গেছেন। তাঁরা হলেন পৌর এলাকার চকসাবাজপুর গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোতাহার আলী (৫৮) এবং অপরজন যশোর কোতোয়ালি থানা এলাকার রাজারহাট গ্রামের ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন (৫২)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান।

নিহত মোতাহার হোসেনের ছেলে সানজিদ আহম্মেদ সুইট বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে জ্বর ছিল আমার বাবার। গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

অপর দিকে ট্রাকমালিক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘যশোর থেকে পাথরের ডাস্টের ভাড়া আনতে বড়পুকুরিয়া এলাকায় যান ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন। গতকাল রাত ১০টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। শুনেছি স্ট্রোক করে ড্রাইভার বিল্লালের মৃত্যু হয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘স্থানীয়রা ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে তাঁর পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। এখানে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোতাহার আলীরও মৃত্যু একই কারণে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সবাইকে সচেতন করতে বলা হচ্ছে। এ সময় অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যেতে, তাপ এড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে এবং বেশি করে পানি পান করতে হবে।’

সরেজমিন ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা নেই হাসপাতালের বেড। জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগে রোগীর প্রচুর চাপ। সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমে সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে অনেকেই। রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে নির্ধারিত বেড ছাড়াও ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকেই। অসুস্থদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ফুলবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কর্মজীবী মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দাবদাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে শরবত ও কোমল পানীয়ের। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শরবত, ডাবের পানি, আখের রস খেয়ে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম করছেন। তাপপ্রবাহের কারণে শহরের সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম।

পৌর শহরের নিমতলা মোড় এলাকায় রিকশাচালক হাসান আলী ও দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভ্যাপসা গরমে গলা শুকিয়ে আসছে, রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যাত্রীও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও পেটের দায়ে রাস্তায় আছি।’

এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান দাসপাড়া এলাকার অনিল চন্দ্র বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদ, গরমে কাজ করতে পারছি না। তাই কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, কাজ না করলে খাব কী? তাই বাধ্য হয়েই কাজ করতে হচ্ছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৮০ জন রোগী, যা গতকাল ছিল ৪৩৭ জন। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৫ জন, মোট ভর্তি রোগী রয়েছে ৮৭ জন; এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগে ভর্তি রয়েছে ১৪ জন রোগী।

জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রউফ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। পেট ব্যথা, জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে। এ সময় রোগীর চাপ বেড়েছে, এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নওরিন জাহানের (২) মা মেঘলা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। সঙ্গে বমি করছে। দুই দিন ধরে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েও কমছে না। তাই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।’

হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া রোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধরে পায়খানা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। রোগী বেশি থাকায় বেডে জায়গা নেই; তাই ফ্লোরে সুয়ে আছি।’ 

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, বেলা ৩টায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা ছিল শতকরা ৪৪ পারসেন্ট। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।


 

Place your advertisement here
Place your advertisement here