সাফজয়ী ইয়ারজানের ফুটবলার হওয়ার মর্মস্পর্শী গল্প
– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৪
Find us in facebook
ঝুঁপড়ি ঘর থেকেই মায়ের হাতে বানানো প্লাস্টিকের বল খেলতে খেলতে বড় হয়েছেন ইয়ারজান। গোলরক্ষক হয়ে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে একটি শিরোপাও এনে দিয়েছেন তিনি। গ্রামের মাঠ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন। নেপালে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের ৯০ মিনিটেও যখন ১-১ গোলে ম্যাচ ড্র, এরপর টাইব্রেকারে ভারতের তিনটি শট ঠেকিয়ে দেশের শিরোপা নিশ্চিত করেন ইয়ারজান।
সে জয়ের আনন্দে এখনও মাতোয়ারা সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ইয়ারজানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। আব্দুর রাজ্জাক ও রেনু বেগমের এই সন্তান অন্য আট-দশজন মেয়ের মতোই। গ্রামের অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জায়গা করে নেন বয়সভিত্তিক ফুটবল দলে।
দুই বোনের মধ্যে ইয়ারজানই বড়। ঘরে অসুস্থ বাবা, যার কারণে তিনি কাজ করতে পারেন না। ফলে একমাত্র উপার্জনক্ষম মা রেনু বেগমের আয়ে চলে তাদের সংসার। সম্পদ বলতে তাদের কেবল ভিটেমাটি। ঘর থাকলেও জরাজীর্ণ। ঘরে আসবাবপত্র না থাকলেও, ইয়ারজানের সাফল্যের ক্রেস্ট এবং ট্রফিতে সাজানো শোকেস পরিপূর্ণ। এমন পরিবার থেকে ইয়ারজানের ওঠে আসার গল্প দারুণ মর্মস্পর্শী।
ইয়ারজানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের একজনের বাদাম ও টমেটো ক্ষেতে কাজ করছিলেন ইয়ারজানের মা রেনু বেগম। দিনশেষে ২৫০ টাকা শ্রমে মজুরী আসলেও সে টাকায় চলছে না দারিদ্র-পীড়িত টানাপোড়েনের সংসার। পাটখড়ির বেড়া দেওয়া বাড়িতে মাত্র তিনটি ছোট ঘর। একটিতে টিনশেড, আরেকটিতে ঘরের টিনের চাল ভেঙেছে। তার পূর্ব পাশের পলিথিনের ছাউনির ঘরটি রান্নার জায়গা। মেরামত করার টাকাও নেই। ফলে জরাজীর্ণ ঘরেই চলছে বসবাস। জীর্ণ এই কুটির থেকেই দুয়েক বেলা খেতে না পেরেও ফুটবল খেলার নেশায় বুঁদ হয়ে পড়েছিল গোলরক্ষক ইয়ারজান। খেলেছেন বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে গ্রামের মাঠে।
কাজে ব্যস্ত মা রেনু বেগমের সঙ্গে ওই অবস্থাতেই কথা হয়। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ইয়ারজানের বাবা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তিনি কাজ করতে না পারায় আমাকেই কামলা দিতে হয়। সারা দিন কাজ করে পাই ২৫০ টাকা। এই টাকায় চলে চারজনের সংসার। আমাদের কোন আবাদি জমিজমা নেই। আমার শ্বশুর ইয়ারজানের দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন ২২ শতক জমি দিয়েছিলেন। এ জমিতে আবদুর রাজ্জাকসহ চার ভাইয়েরা বসবাস করছেন। মেয়ের এই জয়ে বুক বাধলেও এভাবেই চালানো সংসারে বাড়ির কোন পরিবেশ নেই।
ইয়ারজান কিভাবে খেলোয়াড় হয়ে উঠলেন, জানতে চাইলে রেনু বেগম বলেন, ‘শিশুকাল থেকেই আমার মেয়ের ফুটবল খেলার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। ইয়ারজানের বয়স যখন পাঁচ-ছয় বছর, ওই সময় দেখতাম সামনে কোন বল পেলে সেটা নিয়ে ছুটোছুটি করতো। আমাদের তো সামর্থ্য নাই, তাই পুরোনো পলিথিন দিয়ে বল বানিয়ে দিতাম মেয়েকে। সেটা নিয়েই আশপাশের শিশুদের নিয়ে খেলতো। ওর বাবা যখন ঢাকায় কাজ করতেন, তখন তাকে বলে দোকান থেকে একটি বল কিনে দিয়েছি। সেটা দিয়েই পরে স্কুলে ফুটবল খেলতে শুরু করে।’
২০১৭ সালের দিকে হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর খেলা দেখে টুকু রেহমান (স্থানীয় একাডেমির পরিচালক) তাকে তার ফুটবল একাডেমিতে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু একাডেমিতে ভর্তি ও খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য ছিল না ইয়ারজানের পরিবারের। কিন্তু টুুকু রেহমানের উৎসাহে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে টুকু ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হয় ইয়ারজান। তবুও এত দূরের পথ পাড়ি দেওয়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল তাদের। গ্রামের লোকজনও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। কিন্তু রেনু বেগমের মেয়ের জেদ ছিল ফুটবল খেলার। তাই সব বাঁকা চোখকে তোয়াক্কা না করে ফুটবল খেলে গেছেন।
গত বছর উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগের ট্রায়ালে খেলতে ঢাকা গিয়েছিল ইয়ারজান। বাড়ি ফিরে মেয়ে বলল, মা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অফিসাররা আমাকে পছন্দ করছে। আমাকে খেলতে ডাকা হবে। তিন মাস আগে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ ফুটবলের ট্রায়াল হয়। ঢাকায় হওয়া সেই ট্রায়ালেও ইয়ারজানকে পাঠানো হয় টাকা ধার করে। ঢাকা থেকে নেপালে গিয়ে মেয়েটা ফুটবলে শিরোপা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে এমনটা ভাবেননি মা রেনু বেগম। বিজয়ের পর গ্রামের সেই বাঁকা চোখগুলোতেও আনন্দ দেখার কথা জানান তিনি।
ইয়ারজানের বিজয়ের অনুভূতি জানিয়েছেন বাবা আব্দুর রাজ্জাকও, ‘আমি তো এমনিতে অসুস্থ। আমাদের কোন স্মার্টফোন নেই। যখন শুনলাম আমার মেয়ে গোল আটকিয়ে জিতেছে, তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। এত আনন্দ কখনও পাইনি। কখনও কল্পনাও করিনি এমন বিজয় দেখতে পারব। মেয়ে ফুটবল খেলছে, সে খেলবে এমনই ছিল ধারণা। সে যে এত বড় অর্জন করবে তা ভাবতে পারিনি।’
মা রেনু বেগম সেই সুর টেনে বলেন, ‘মেয়ের বিজয়ের কথা শুনেই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কি আনন্দ! তারা বাড়িতে এসে অনেক কিছু আয়োজন করল। খিঁচুড়ি রান্না হলো। সেদিন রাতে যখন ইয়ারজান ফোনে কথা বলল, বলল মা আমরা জিতে গেছি। তখন আনন্দে কেঁদেছি। মেয়ে দেশে ফিরে ফোন করে জানিয়েছে, দেশে ফিরেছে। গ্রামে ফিরবে ঈদের আগেই। মেয়ে ফিরলেই তাকে খুব ভালোভাবে খাওয়াব। এখন মেয়ের আসার অপেক্ষায় আছি সবাই।’
প্রশাসন থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে ইয়ারজানের মা-বাবা বলেন, নেপালে ইয়ারজানদের খেলার শিরোপা জয়ের খবরের পর আমাদের বাড়িতে জেলা প্রশাসক স্যার, র্যাব ও চেয়ারম্যানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আসছেন। ডিসি স্যার, আমাগো ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। র্যাব আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন ইফতার ও নগদ টাকা।
টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেন, ইয়ারজানের বড় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল তার। আমি তাকে আমার ফুটবল একাডেমিতে নিয়ে আসি। কিন্তু তার বাড়ি থেকে আসতে অনেক কষ্ট হতো। তারপরেও সে নিজের অদম্য চেষ্টায় ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। নেপালের মাঠে ভারতের বিপক্ষে গোল আটকে শিরোপা জয়ের পাশাপাশি সেরা গোলরক্ষক হয়ে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এ অর্জন আমার, আমার একাডেমিরও, পঞ্চগড়বাসীর। ইয়ারজান আমাদের গর্ব।
হাড়িভাসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইয়েদ নূর-ই-আলম জানিয়েছেন, গোলরক্ষক ইয়ারজান নেপালের ভারতের বিপক্ষে খেলে পেনাল্টিতে গোল আটকে শিরোপা অর্জন করায় আমরা খুবই আনন্দিত। জেলা প্রশাসক ইয়ারজানের বাড়ির ঘর ও টয়লেট নির্মাণে খরচের হিসান জানতে চেয়েছেন। আগামী বুধবারের মধ্যে এর একটা বাজেট দেব। আশা করছি দ্রুতই তাদেরকে ভালো ঘর করে দিতে পারব।
একইভাবে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান ইয়ারজানের। ইয়ারজান আমাদের সন্তান, সে আমাদের পঞ্চগড়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার সাফল্যের কথা জেনে তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবসময় তার পরিবারের পাশে আছি।
- হিলিতে ভুর্তুকি মূল্যে কৃষক পেল হারভেস্টার মেশিন
- হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
- লালমনিরহাট জেলা সমিতির নতুন কমিটি গঠন
- ‘দেশের সব মানুষকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে’
- পীরগাছায় চাচাতো ভাইয়ের লাঠির আঘাতে যুবক নিহত
- বাজুস এখন শক্তিশালী সংগঠন
- পীরগঞ্জে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শাড়ি লুঙ্গি ও নগদ অর্থ বিতরণ
- বালিয়াডাঙ্গীতে গলায় ফাঁস যুবকের আত্নহত্যা
- টয়লেটের ট্যাংকে পড়ে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু, আহত বড় ভাই
- দিনাজপুরে নাশকতা মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতা কারাগারে
- হাফিজুল এখন পরিবারের বোঝা
- পীরগঞ্জে প্রতিজ্ঞা দিবস পালিত
- গঙ্গাচড়ায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- নীলফামারীতে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালন
- ধূমপান বা তামাক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর
- সত্যি কী আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান?
- হজের জন্য মাহরাম না পেলে নারীদের করণীয় কী?
- রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো : মস্কো
- অপসাংবাদিকতা মূল সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সুবিধায় আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গ: রেলমন্ত্রী
- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা পাপমুক্ত হয়েছি’
- ‘মৎস্যসম্পদ রক্ষার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে’
- উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি
- টেনিস খেলাকে জনপ্রিয় করতে কাজ করা হচ্ছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ
- ‘উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারি’
- তীব্র গরমেও শীতল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- চাই না মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসুক
- ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ কার্বণ নিঃসরণ কমাতেই হবে
- খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- ছেলেকে নিয়ে ঈদের নামাজে যাওয়া হলো না বাবার
- প্রথমবার সালমানের বিপরীতে কিয়ারা
- ঈদে সংবাদপত্রের ছুটি ঘোষণা আজ
- রাতে বেরিয়ে নিখোঁজ কিশোর, দুপুরে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
- চিলমারীতে বৃষ্টির জন্য ৩য় দিন ইসতিসকার নামাজ আদায়
- হিলি সীমান্ত পরিদর্শনে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি দল
- গাজার ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার বিথী
- সুন্দরগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতিতে করলা চাষে ব্যাপক সাফল্য
- আবারও তিনদিন বাংলাবান্ধার ইমিগ্রেশন ও বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা
- ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচকে নিয়োগ দিচ্ছে পাকিস্তান
- হিলিতে রচনা প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ রক্তিম
- বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড ৫ কূটনৈতিক দলিল সই
- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন করা হবে: ইসি আলমগীর
- ব্যস্ততার পরিবর্তে অস্তিত্ব টেকানোর লড়াইয়ে মৃৎশিল্পীরা
- জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন গৃহীত
- দ্রুত শিক্ষকদের শূন্য পদ পূরণের সুপারিশ
- ভূরুঙ্গামারীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মে দিবস পালিত
- মির্জা ফখরুলকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে: ওবায়দুল কাদের
- ঢাকায় ইসরায়েলের বিমান
- বদরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা