• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

পঞ্চগড়ে নিচে নেমে যাচ্ছে সুপেয় পানির স্তর

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

দেশের সবচেয়ে সুপেয় ও পরিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় হিমালয়ান সমতল অঞ্চল খ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। বর্তমানে নানা কারণে এই জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে টিউবওয়েলে মিলছেনা পানি। নদী, পুকুর খালবিল শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাবার কারণে নানা সংকটে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকট কাটাতে দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন । 

হিমালয় পর্বতসহ উত্তরের বিভিন্ন পাহাড় থেকে বয়ে আসা সুপেয় পানির স্রোতধারা এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫০ ফিট উপড়ে অবস্থান হওয়ার কারণে পঞ্চগড়ের পানি দেশের সবচেয়ে সুপেয় পানি। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ এই পানির স্তর নিচে নেমে যাবার কারণে কৃষি অর্থনীতি এবং গৃহস্থালী কার্যক্রম ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা। এমনটি পাম্প দিয়েও পানি মিলছেনা। 

নতুন করে অনেক গভীরে টিউবওয়েল বা পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে পানি। গত কয়েক বছর আগে ১০ থেক ১৫ ফিট গভীর থেকে পানি উত্তোলন করা গেলেও বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ ফিট গভীরে পাইপ স্থাপন করলেও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা । ফলে নানামুখী সংকটে পড়েছে স্থানীয় অধিবাসীরা। তারা বলছেন টিউবওয়েলে বা পাম্পে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা । ফলে নিজেদের গৃহস্থালী কাজে প্রচন্ড সমস্যা হচ্ছে। গোসল করা যায়না। ঘণ্টা খানেক চাপ দেয়ার পর এক বালতি পাওয়া যায়। চাষিরা বলছেন, কৃষি কাজে সেচ দিতে হয়। পানির স্তর নিচে নেমে যাবার কারণে মাটি শুকিয়ে যায়। তাই বেশি সেচ দিতে হয়। অপরদিকে বোডিং করতেও খরচ লাগে বেশি। ফলে চাষাবাদে ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চা শিল্পের বিকাশ, কৃষি কাজের ব্যাপক অগ্রগতির জন্য পানির প্রয়োজন হচ্ছে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে পানির অপব্যবহারও হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে উৎপত্তি হয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা দিয়ে প্রবাহমান কয়েকটি নদীর পানি ভারত সরকার বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়ার কারণে তেঁতুলিয়ার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তারা মনে করেন নদী খনন এবং পানির রিজার্ভেশন বাড়াতে এখনি উদ্যোগ প্রয়োজন । 

তেঁতুলিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারি প্রকৌশলী মিথুন কুমার রায় জানান, এই উপজেলায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। 

পঞ্চগড় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম সোহেল জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপেয় এবং পরিসুদ্ধ পানি পাওয়া যায় এ অঞ্চলে। কিন্তু দিনে দিনে এই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া এবং পঞ্চগড় দিয়ে প্রবাহিত অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতে। এই নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে ভারত তাদের পানি রিজার্ভেশন করছে। ফলে আমাদের জেলায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে এই জেলায় প্রচুর চা বাগান গড়ে উঠেছে। কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। খামার ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। ফলে পানির চাহিদাও বেড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এবং গৃহস্থালী কাজে পানির অপব্যবহারও রয়েছে। এখন আমাদের পানির রিজার্ভেশন বাড়াতে হবে। তেঁতুলিয়ার বেরং এবং গোবড়া নদী দ্রুত খনন করতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতারও দরকার আছে। পানির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। এজন্য সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে হবে। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মন বলেন, হিমালয় পর্বতমালারস্রোতধারা প্রবাহিত হয় বলে এই জেলার পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপেয় এবং পরিসুদ্ধ। পানির স্তর ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন নদী খনন । ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ের ১০ টি নদী খননের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে । এই নদীগুলো খনন হলে পানির স্তর ঠিক থাকবে বলে আশা করা যায়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here