• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

‘গোরকই’ কূপ: যেখানে কখনোই কমে না পানি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার দেড়শ বছরের পুরাতন গোরক্ষনাথ মন্দির হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এখনো আকর্ষণীয়। মন্দির এলাকায় অবস্থিত বৈচিত্রময় প্রস্তর নির্মিত আশ্চর্য কূপ ও তার পানি মহাপবিত্র হিসেবে তাদের কাছে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর এ কূপের পানিতে স্নান করে পবিত্র হওয়ার জন্য ছুটে আসেন লাখ লাখ নারী-পুরুষ। তবে কূপটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর পানি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ স্নান করলেও কমে না এক ফোঁটাও।

শুধু তাই নয়, সন্তান লাভসহ নানা মনোবাসনা নিয়ে এই কূপে স্নান করেন তারা। পূজা দেন শিবমন্দিরে। এই কূপের পানিকে গঙ্গার মতোই পবিত্র মনে করেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া শুদ্ধিকরণের জন্য শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হয় এই কূপের পানি। কূপটি অলৌকিকভাবে বেলে পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে বলে দাবি মন্দির কর্তৃপক্ষের।

জানা যায়, প্রায় ১ হাজার ১০৩ বছরের পুরোনো এই মন্দির ও বৈচিত্রময় আশ্চর্য কূপ ও এর পানি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মহাপবিত্র এবং এটি তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও এখানে প্রতিবছর ফাল্গুনের শিব চতুর্দশী তিথীতে পূণ্যস্নানের জন্য আগমন ঘটে অসংখ্য পূণ্যার্থীর। কথিত আছে, গুপ্ত যুগ থেকে সেন যুগের মধ্যেই অর্থাৎ ৯২০ খ্রিস্টাব্দের সময় এই কূপ ও মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। নাথ সহজিয়ার মতে, গুরু গোরাক্ষ নাথের নামানুসারে কুপের এবং স্থানের নামকরণ করা হয়েছে গোরকই। আর এই ‘গোরকই’ ফরিকি স্নান বা বারুনীর মেলা হিসেবে আজও সমানভাবে সমাদৃত।

তাই প্রতিবছর ফাল্গুনের শিব চতুর্দশী তিথীতে পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় ‘গোরক্ষনাথ বারণী’ নামে মেলার। আর এই কূপে স্নান করতে ও শিব চতুর্দশী তিথীতে পূঁজা উপলক্ষে মেলায় বিভিন্ন জেলার নানা বয়সী লাখ লাখ নারী-পুরুষের সমাগম হয়।

রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ হতে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ‘গোরকই’ নামক স্থানে গোরক্ষনাথ মন্দির। এখানে গোরক্ষনাথ মন্দির ছাড়াও আছে নাথ আশ্রম। গোরক্ষনাথ মন্দির স্থানীয়ভাবে গোরকই মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দির চত্বরে আছে মোট ৫টি মন্দির। এছাড়াও আছে তিনটি শিবমন্দির ও একটি কালি মন্দির। নাথ মন্দিরটি চত্বরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। মন্দিরের পেছনে রয়েছে কূপটি। পাথর দিয়ে তৈরি একটি ছোট চৌবাচ্চার মাঝে নিচু স্থানে ঐ কূপটি অবস্থিত। কূপটি বড় বড় কালো পাথরের খণ্ড দিয়ে নির্মিত। এ কূপের একেবারে নিচু অংশটুকু পর্যন্ত পাথর দিয়ে বাঁধানো। উত্তারাঞ্চলের লাখ লাখ হিন্দু নারী-পুরুষ পাপ-মোচনের জন্য এই কূপের পানিতে স্নান করার উদ্দেশে এখানে আসেন। কূপটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর পানি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ স্নান করার পরেও কূপের পানি এক ইঞ্চিও কমে না।

মন্দিরের উত্তরে আছে একটি পান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক বা গ্রানাইট শিলালিপি ছিল যা বর্তমানে ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও এ মন্দিরে গ্রানাইট পাথরের বহুল ব্যবহার দেখা যায়।

দর্শনার্থী নারায়ণপুর গ্রামের নিশীকান্ত বর্মন নামে জানান, এখানে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করা হয়। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় আসেন লাখ লাখ মানুষ। যারা এখানে আসেন তারা মূলত মনোবাসনা নিয়ে আসেন। যেমন কারো সন্তান না হলেও এখানে এসে প্রথমে এই কূপে স্নান করে শিবমন্দিরে পূঁজা করলে অনেকের সেই মনোবাসনা পূরণ হয়। 

বীরেন্দ্র নাথ বর্মন এক বৃদ্ধ বলেন, এই মন্দির ও কূপটি কে তৈরি করেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি, এই কূপটি নাকি অলৌকিকভাবে নির্মিত হয়েছে।

কুশলা গৌস্বামী নামে এক বৃদ্ধা বলেন, এখানে এসে কূপটিতে স্নান করে মন্দিরে পূঁজা করেছি, যাতে আমার মনোবাসনা পূরণ হয়।

সোহাগী রাণী নামে এক গৃহবধূ বলেন, মানুষের মুখে শুনে এখানে এসেছি। এসে অনেক কিছু দেখলাম ও মেলা থেকে অনেক কিছু কিনেছি। এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে।

মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার বর্মন বলেন, ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই মেলা আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় করে আসছি। আশা করছি এবার ৫ দিনের মেলায় অন্তত ৯ লাখ মানুষের সমাগম হবে।

মন্দিরের সভাপতি কাশীনাথ বর্মন বলেন, আমি শুনেছি ৯২০ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু দেশ থেকে এই গোরক্ষনাথ ও তার বন্ধু নাসির উদ্দিন নামে দুই জন এখানে আসেন। গোরক্ষনাথ এখানে বসবাস শুরু করেন ও নেকমরদে নাসির উদ্দিন। তখনই এখানে অলৌকিকভাবে মন্দির ও কূপটি নির্মিত হয়। তবে কিছু মন্দির আমরা সংষ্কার করেছি। এই কূপটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো লাখ লাখ মানুষ এখানে গোসল করলেও এর পানি এক ফোঁটাও কমেও না।

মেলাটি শুরু হয় রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এবং শেষ হবে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে। মেলা উপলক্ষে প্রায় শতাধিক বিভিন্ন ধরণের মালা, শাখা-সিঁদুর, খেলনা ও মুখরোচক খাবারের দোকান বসেছে। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে নাগর দোলা। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here