• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

জরাজীর্ণ স্কুলে ফিরেছে প্রাণ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

বছরের প্রথম দিন পাওয়া নতুন বইয়ের মতো স্কুলের নতুন ভবনের আকর্ষণও কম নয়। তেমনি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো আর বটগাছের নিচে ক্লাস করার পর এবার নতুন ভবনে পাঠগ্রহণের আনন্দে ভাসছে শিক্ষার্থীরা।

চিত্রটি নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। কিছুদিন আগেও স্কুলটিতে পড়াশোনার নূন্যতম পরিবেশ ছিল না। এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হাস কমে যায়। তবে এখন সুন্দর পরিবেশ আর মনোরম শ্রেণিকক্ষ পেয়ে ক্লাসে ফিরছে শিশুরা।

বিদ্যালয়টির বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পুরাতন জরাজীর্ণ একটি ভবন সংস্কার করে পাঠদানের যথাযথ পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহারের সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় মৃতপ্রায় স্কুলটি পেয়েছে নতুন জীবন।

জানা গেছে, ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৬ সালে বিদ্যালয়টি একটি একতলা পাকা ভবন পায়। তবে বেশ কয়েকবছর হলো সেই ভবনটিও পাঠদানের অনুপযোগী হয়েছে। পাশেই ছিল আরেকটি জরাজীর্ণ দোচালা টিনের ঘর। তবে সেটির চালা নষ্ট হয়েছিল। খুলে পড়ছিল পলেস্তারা।

নীলফামারী শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে ছিল না কোনো বেঞ্চ, চেয়ার কিংবা টেবিল। বৃষ্টি আসলেই বন্ধ থাকতো ক্লাস। ফলে কমে আসছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার।

এখন সেই জরাজীর্ণ ভবনটিকে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। স্কুলটির আধাপাকা ভবনটির পুরোনো টিনের ছাউনি পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে রঙিন টিন। রং করা হয়েছে ভেতর ও বাইরের অংশে। আধুনিকভাবে সাজানো হয়েছে শিক্ষকদের বসার স্থান। উন্নত করা হয়েছে ক্লাসরুমগুলোর পরিবেশ। পরিপাটি পরিবেশে নিশ্চিত করা হয়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থায়। ফলে নতুন করে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় উদ্যমী হয়ে উঠছে। পাঠদানে প্রযুক্তিরও ব্যবহার হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের নাতি পড়াশোনা করে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে স্কুলটিতে পড়াশোনার কোনো পরিবেশ ছিল না। ইউএনওর সাহায্যে ভালো পরিবেশ হয়েছে। আগে ছেলেমেয়েরা ক্লাসে আসতে চাইত না। এখন পরিবেশ ভালো হওয়ায় তারা স্কুলে আসছে। অভিভাবক হিসেবে আমাদেরও ভালো লাগছে।

আরেক অভিভাবক বাবুল হোসেন সরকার বলেন, আগে তো চেয়ার বেঞ্চ কিছুই ছিল না। এখন সব আছে। স্কুলের আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এখন সেটাও ঠিক করার সময় এসেছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমু আক্তার বলে, আগে আমাদের স্কুলের ছাদ ছিল না। বৃষ্টি পড়তো। আমাদের বই ভিজে যেত। এখন স্কুল অনেক ভালো হয়েছে। আমরা এখন নিয়মিত স্কুলে আসি এবং পড়াশোনাও ভালো হয়। এখন আর বই ভিজে না।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুকাইয়া আক্তার বলে, আমাদের স্কুল আগে সুন্দর ছিল না। ছাদ পুরোনো ছিল। এখন ছাদ ঠিক করেছে। নতুন টিন দিয়েছে। আমাদের স্কুলটা সুন্দর হওয়ায় এখন ভালো করে পড়াশোনা করি। আগে বৃষ্টি যখন আসত আমরা স্কুলে আসতাম না। এখন সব ঠিক হয়েছে।

স্কুলটির সহকারী শিক্ষিকা পূর্ণিমা রাণী বলেন, আমি ২০২০ সালে স্কুলটিতে আসি। এসে যা দেখেছি, এমন স্কুলও বাংলাদেশে আছে আমার জানা ছিল না। স্কুল ছুটির পর শিশুরা যে বারান্দায় দাঁড়াবে সে অবস্থাও ছিল না। পাশের যে বিল্ডিং সেটাও ব্যবহারের অনুপযোগী। ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। ফ্যানও নষ্ট। এখন পরিবেশ অনেক ভালো। ক্লাসরুমগুলোও সাজানো পরিপাটি। এখন প্রোজেক্টরে ক্লাস নিচ্ছি। সব মিলিয়ে ডিজিটাল স্কুল বলা যায়।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করি। স্কুলে যোগদান করার সময় অবকাঠামো খুবই নাজুক ছিল। স্কুলে বেঞ্চ ছিল না, মেঝেতে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হতো। শিক্ষকদের বসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দুটি ভবনের একটি জরাজীর্ণ ও একটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বৃষ্টি বাদল আসলে রুমে বৃষ্টি পড়তো, থাকা যেত না। এই অবস্থায় আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাই। তিনি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেন। ইউএনও এটি আমলে নেন। তার অর্থায়নে আজ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চ, শিক্ষকদের বসার টেবিল ফ্যান, আলমারি সব কিছু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন স্কুলে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হয়েছে। তারা আনন্দের সঙ্গে স্কুলে আসছে। এমন পরিবেশে আমরাও শিক্ষার্থীদের ভালো শিক্ষা দিতে পারছি। এজন্য ইউএনওকে ধন্যবাদ জানাই।

নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে দেখি এর অবকাঠামো পাঠদানের উপযোগী নয়। বিদ্যালয়টির সংস্কারের জন্য টি-আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দুইটি বরাদ্দ দিই এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কিছু বরাদ্দ দেয়। সেই বরাদ্দ মিলিয়ে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন বিদ্যালয়টির অবস্থা বেশ চমৎকার। এখন বিদ্যালয়টিতে শতভাগ শিক্ষার্থী স্কুলমুখী হচ্ছে। আমরা আশা করবো এই উদাহরণটাকে নিয়ে উপজেলার অন্যান্য যে স্কুলগুলো আছে তারাও আগ্রহী হবে। আমরা সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করবো।

Place your advertisement here
Place your advertisement here