• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

রাজারহাটে ৩০ বছর পর লিজমুক্ত চাকিরপশার নদী

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে দীর্ঘ ৩০ বছর পর চাকিরপশার নদীর ১৪১ একর বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে। পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্তের শিকার হয়ে নদী থেকে বিলে পরিণত চাকিরপশার লিজমুক্ত হওয়ায় আনন্দিত নদীপারের ক্ষতিগ্রস্ত জেলেসহ শত শত মানুষ। এখন এই নদীর বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা নিশ্চিত করাসহ পানিপ্রবাহ বাধামুক্ত ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার দাবি নদীরক্ষা বিষয়ক সংগঠনগুলোর।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা এবং উলিপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত শত বছরের পুরনো একটি পানির প্রবাহ আছে। স্থান বিশেষে এর কয়েকটির নাম। রাজারহাট সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি থেকে উৎপন্ন হয়ে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে এসে এর নাম চাকিরপশার। আরও কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে এর নাম মরা তিস্তা এবং ভাটিতে এর নাম বুড়িতিস্তা। 

আশির দশকে রাজারহাটের পাঠানহাট নামক স্থানে চাকিরপশারে আড়াআড়ি সেতুবিহীন সড়ক নির্মাণ করে চাকিরপশার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হয়। প্রবাহ বন্ধ হলে নদীকে বদ্ধ বিল দেখিয়ে নব্বইয়ের দশকে লিজ দেওয়া শুরু হয়।

জেলা প্রশাসনের সূত্র মতে, এই বদ্ধ বিলের (কার্যত উন্মুক্ত নদী) আয়তন ৩০৬ একর। এর ১৪১ একর অমৎসজীবীদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছিল। বাকিটুকুর প্রায় সম্পূর্ণটাই বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে যোগসাজসে অবৈধভাবে লিখে দেওয়া হয়েছে। আড়াআড়ি সেতুবিহীন সড়ক নির্মাণ করার কারণে হাজার হাজার একর ধানের জমিতে জলাব্ধতা দেখা দেয়। ফলে তিন ফসলি জমিও হয়ে উঠেছে এক ফসলি। কোনো কোনো বছর একবারও ফসল পাওয়া যায় না।

এই পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নদীর পানিপ্রবাহ বাধামুক্ত করা, অমৎসজীবীদের লিজ বাতিল এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার দাবিতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি এবং গণকমিটি। এ আন্দোলনে নদীর সুরক্ষায় উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে একটি দাবির প্রতি সরকারি সিদ্ধান্ত মিলেছে। সেটি হলো লিজ বাতিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাসে কুড়িগ্রাম জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণীতে চাকিরপশারে ২০ জনের গ্রহণ করা ১৪১ একর জমির ১৪২৯ বাংলা সনের লিজ বাতিল করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে রাজারহাট উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা মৎস বিভাগের সহযোগিতায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন অনুসন্ধান চালিয়েছে। এতে ‘চাকিরপশার মৎসজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নিবন্ধন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। ওই সমিতির ২০ জন সদস্যের মধ্যে একজনও প্রকৃত মৎসজীবী নেই। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ এর ২ (খ) ধারা অনুযায়ী চাকিরপশা মৎসজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডে লিজ পাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে ওই সমিতির লিজ বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে বুধবার বিষয়টি জানাজানি হলে নদীপারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উচ্ছ্বাস ও উল্লাস প্রকাশ করেন। সবার চোখে-মুখে ছিল নদী রক্ষা করতে পারার উপচেপড়া আনন্দ। এই নদী উদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন রিভারাইন পিপলের চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি এবং গণকমিটির সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, হাজার হাজার জেলে চাকিরপশারে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। লিজ থাকাকালীন এসব মৎসজীবীরা নদীতে নামতেও পারতেন না। এখন লিজ বাতিল হওয়াতে এখানকার সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।

এ ব্যাপারে রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সরেজমিন তদন্ত করে রাজারহাটের ইটাকুড়ি থেকে তিস্তায় মিলনস্থল পর্যন্ত স্রোত বাধাহীন করার সুপারিশ করেছিল। একই সঙ্গে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সেতুবিহীন সড়কে সেতু স্থাপন, ছোট সেতুগুলো ভেঙে সেতু বড়করণ এবং স্থায়ীভাবে লিজ বাতিলেরও সুপারিশ করেছিল। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চাকিরপশার সুরক্ষায় ছয়বার চিঠি দিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ও একবার চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে চাকিরপশার লিজ দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা জারি করলেও তিনি তা পালন করেননি। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসন চাকিরপশার ১৪১ একর বন্দোবস্ত বাতিল করেছেন।

দীর্ঘ আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে চাকিপশার মুক্ত হওয়ায় আন্দোলনকারী সবার পক্ষে জেলা প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই সংগঠক বলেন, এখন চাকিরপশার পানির প্রবাহ বাধাহীন এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। এর বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যাও করতে হবে। চাকিরপশাকে রংপুরে বিভাগের সবচেয়ে আর্কষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণও তাই বলা আছে। আমরা আশা করছি, জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here