• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী জাহিদ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

করোনায় দীর্ঘ দিন লকডাউন থাকায় ব্যবসায় ধস নামে জাহিদের। সংসার চালাতে খেতে হয় হিমশিম। তবে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা, ধৈর্য আর চেষ্টা থাকলে অনেকভাবে আয় করা যায়। যা প্রমাণ করে দিয়েছেন জাহিদুল ইসলাম জাহিদ নামে এক যুবক। কোয়েল পাখির খামার দিয়ে ডিম ও পাখি বিক্রি এলাকাজুড়ে সাড়া ফেলেছেন তিনি। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভাধীন শাহপাড়ার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। শহরের হাজিপাড়ায় বিসমিল্লাহ ড্রাইওয়াশের দোকান করে দিনযাপন করছিলেন তিনি। করোনায় লকডাউন থাকায় দীর্ঘ দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয় তাকে। আয়ের পথ না থাকাই ব্যবসা ছেড়ে কোয়েল পাখি পালনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
 
১ বছর আগে ঠাকুরগাঁও সদরের সালান্দর এলাকায় জমি লিজ নিয়ে বিসমিল্লাহ কোয়েল পাখির খামার নাম দিয়ে কোয়েল পালন শুরু করেন জাহিদুল। খামার দেওয়ার ২ মাস পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২ মাস পরে কোয়েলের ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনোপ্রকার সহযোগিতা পাননি এমন অভিযোগও করেন তিনি। তার সঙ্গে সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের আশাও ব্যক্ত করেন জাহিদুল।

বর্তমানে জাহিদুলের খামারে ২৫ শ থেকে ৩ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন খামার থেকে ২২ শ থেকে ২৩ শ ডিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আর তার খামারে এখন ৬ জন মানুষ নিয়মিত কাজ করেন। এই খামার থেকে জাহিদুলসহ আরও ৬ জনের পরিবার ভালোভাবেই চলছে বলে জানান খামারের অন্য কর্মচারীরা।

খামারে কর্মরত সুমন জানান, তিনবেলা সময়মতো খাওয়া ও পানি দেওয়া হয় পাখিগুলোকে। ৭ দিন পর পর খামারটি পরিষ্কার করা হয়। কোয়েল পাখির রোগবালাই খুবই কম হয়। তবে এখন ঠান্ডায় অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। এছাড়া পাখির খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেশি পরছে লালন-পালনে।

খামারের ম্যানেজার শরিফ জানান, সংসারে অভাব ছিল। কোয়েল পাখি পালন করে এখন ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। সংসারে এখন সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। কোয়েলের খামারে সঠিকভাবে খাওয়া দিতে পারলে ও পরিচর্যা করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিজেরও কোয়েল এর খামার করার ইচ্ছা আছে।

কোয়েল পাখির ডিম কিনতে আসা বাসস্ট্যান্ডের দোকানদার সরিফুল বলেন, কোয়েলের খামার থেকে ৯ টাকা হালি দরে ডিম ক্রয় করে নিয়ে যাই। বাজারে খুচরা ১২ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি করি। রাস্তার পাশে ভাপা পিঠা, ডিম সিদ্ধর দোকানে কোয়েলের ডিম সিদ্ধ করে বিক্রি করা হয় প্রতি পিচ ৫ টাকা দরে। এই ডিম অনেক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।

খামারি জাহেদুল ইসলাম জাহিদ জানান, একটি কোয়েল পাখি ৪৫ দিনে ডিম দেওয়া শুরু করে। ৬০ দিন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ডিম দেয়। এখন আমার খামারে প্রতিদিন ২২ শ থেকে ২৩ শ ডিম উৎপাদন হয়। খামার থেকেই ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। বর্তমান শীতে রাস্তার পাশের ভাপাপিঠা, ডিম সিদ্ধ করে বিক্রয় করা হয়। সেখানেও এই ডিমের চাহিদা ভালো।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনো পরামর্শ এবং সহযোগিতা ছাড়াই তিনি এত দূর এসেছেন। এখন শীতে প্রতিদিন ৫/১০টি কোয়েল পাখি মারা যাচ্ছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কেউ কোনোদিন তার খামার দেখতেও আসেননি। একবার শুধু রানীক্ষেত রোগের জন্য কয়েকটি টিকা এনেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমার খামারে ৬ জন মানুষ কাজ করে। আমার খামারের ডিম বিক্রয় করে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। সেই টাকা কর্মচারীদের বেতন দিয়ে নিজেও সংসার নিয়ে ভালোই চলছেন। তবে সরকারি সহযোগিতা বা ঋণ পেলে খামারের পরিধি আরও বাড়াব। কোয়েলের সংখ্যা বাড়ালে ডিম উৎপাদন বেশি হবে। আরো মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই কোয়েল খামারের মাধ্যমে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শাহরিয়ার মান্নান জানান, হাঁস-মুরগির মতো কোয়েল পাখি পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কোয়েল পাখির রোগব্যাধি কম। এজন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোয়েল পাখি পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন শীতে কোয়েল পাখি মারা যেতে পারে। সেজন্য হিট দেওয়ার ব্যবস্থা করলে মৃত্যুর হার অনেকটা কমে যাবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here