• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

পোস্টম্যানের উদ্যোগে ৩২ বছর পর পরিবার পেলেন জিয়াউল

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঠিকানা অনুযায়ী চিঠি পৌঁছে দেওয়া পোস্টম্যানের কাজ। তবে এবার চিঠি নয়, ৩২ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিলেন নীলফামারীর ডোমার পোস্ট অফিসের বোড়াগাড়ি শাখার পোস্টম্যান হোসেন আলী।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে হারানো স্বজনকে ফিরে পেয়ে পরিবারে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এ সময় পোস্টম্যান হোসেন আলীর প্রশংসা করেন এলাকাবাসী।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির নাম জিয়াউল হক (৬২)। তিনি পিরোজপুর জেলার ৩ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের মরহুম মোক্তাদের আলী মাঝির ছেলে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতরের ডোমার উপজেলায় টাইপিস্ট পদে পোস্টিং হয় পিরোজপুর জেলার ৩ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের মো. জিয়াউল হকের। প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চাকরি না করার জন্য তার স্ত্রী তাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই চাকরি ছাড়তে চাননি। একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর থেকে জিয়াউল হকের আর কোনো খোঁজ পায়নি কেউ।

পরিবার হারিয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে প্রায় ২০ বছর আগে তার চাকরিটাও চলে যায়। চাকরি ফেরত পেতে বিভিন্ন দফতরে ঘোরাফেরা করেও লাভ হয়নি। এতে তিনি মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একসময় ভিক্ষা করা শুরু করেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জন্য তিনি পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসি-সহ বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে ৪০-৫০টি মানি অর্ডার করেন। মানি অর্ডারের কারণ না জেনে কোনো কর্মকর্তা তা গ্রহণ না করায় সেই টাকা ফেরত আসত ডোমার উপজেলায়। এ জন্য তিনি প্রতিদিন ডোমার পোস্ট অফিসে যাতায়াত করতেন।

এ বিষয়ে পোস্টম্যান হোসেন আলী বলেন, জিয়াউল হক ডোমার পোস্ট অফিসে প্রায় এসে মানি অর্ডার করতেন। কেউ গ্রহণ না করার সেই টাকা ফেরত চলে আসত। তিনি প্রতিদিন পোস্ট অফিসে এসে খোঁজ নিতেন তার পরিবারের কেউ টাকা পেয়েছে কি না। এভাবে তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে পোস্ট অফিস আসতেন। আমি কয়েক দিন আগে তার ঠিকানা নিয়ে পিরোজপুরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট দিই। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। তারপর সৌরভ নামের পিরোজপুরের এক পোস্টম্যানের সহায়তায় তার পরিবার খুঁজে পাই। অবশেষে তার ছেলে ডোমারে এসে তাকে নিয়ে যায়।

তার ছেলে সহিদুল ইসলাম সজীব বলেন, আমার যখন দেড় বছর বয়স, মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। বাবা ডোমার চলে আসেন। আমার বড় দুই বোন ও আমি নানার বাড়িতে বড় হই। কিন্তু পরে বাবার কোনো খোঁজ পাইনি। বুধবার সকালে যখন ডোমার পোস্ট অফিস থেকে হোসেন ভাই ফোন করে বলেন, আপনার বাবা ডোমারে আছে। তাকে নিয়ে যান। তখন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা রওনা হই। জীবনে প্রথম আজ বাবাকে দেখলাম ও জড়িয়ে ধরলাম। এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।

জিয়াউল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ৩২ বছর ধরে ছেলে-মেয়েদের খুঁজে চলছি। আজ তাদের পেলাম। খুব ভালো লাগছে। তিনি আরও বলেন, যে চাকরির জন্য পরিবার-পরিজন হারিয়েছি। আজ সেই চাকরিটাও নেই। সরকারের কাছে আমার চাকরিটা ফেরতের দাবি করছি।

এলাকাবাসী রোহেল উত্তল, মামুন ইসলাম বলেন, এ ব্যক্তিকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে পোস্ট অফিসে ঘোরাফেরা করতে দেখতাম। মাঝেমধ্যে তাকে আমরা খাবার কিনে দিতাম। এখন তিনি তার পরিবার খুঁজে পেয়েছেন। পোস্টম্যান হুসেন আলী পেশাগত দায়িত্বের বাইরে এমন কাজ করে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here