• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

`জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি` ব্রিটিশ স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নির্মিত পঞ্চগড়ের জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দিরটি ব্রিটিশ স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন কুচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন।

দেবীগঞ্জ পৌরসদরের চৌরাস্তা থেকে করতোয়া সেতু যাওয়ার পথে এশিয়ান মহাসড়ক সংলগ্ন মধ্য পাড়ায় ১ একর ৪ শতাংশ জমির উপর জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ স্থাপত্যের সাথে মিল রেখে ইট, সুরকি, চুন, পাথর ও লোহার সমন্বয়ে জমিদার বাড়ির আদলে জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি নির্মাণ করা হয়।

মন্দিরের মূল ভবনে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি গোলাকৃতির প্রবেশদ্বার যার উভয় পাশে রয়েছে উঁচু দুটি পিলার এবং বাম দিকে পুরোহিত প্রবেশের জন্য আরো একটি ছোট প্রবেশদ্বার রয়েছে। মন্দিরের ভিতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য গোলাকার আকৃতির ৮টি জানালা রয়েছে এবং মন্দিরের ভিতরে ৩টি কক্ষ রয়েছে। ডান পাশের কক্ষে দেবী কালীর প্রতিমা, মাঝের কক্ষে দেবী দূর্গার এবং বাম পাশের কক্ষে কৃষ্ণ ঠাকুরের প্রতিমা রয়েছে। মন্দিরের পিছনের অংশে পূজা অর্চনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত পুরোহিতের থাকার জায়গা ও মন্দির কমিটির কার্যালয়, মন্দিরের ডানে দূর্গা পূজার স্থায়ী মন্ডব, সামনে বিস্তৃর্ণ ফাঁকা মাঠ এবং চতুর্দিক ইটের সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ঐতিহাসিক জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দির।

বিভিন্ন পুস্তক ও লোকমুখে প্রচলিত, বিংশ শতাব্দীতে কোচবিহার মহারাজার ম্যানেজার হাতির পিঠে ভজনপুর তহশীলে যাওয়ার সময় শালডাঙ্গার জঙ্গলে একটি পিতলের ভাঙ্গা মূর্তি দেখতে পান। মূর্তিটি ছিল দুর্গা দেবীর। বাহক হাতিটি সেখান থেকে আর যেতে না চাইলে ম্যানেজার মূর্তিটি নিয়ে দেবীগঞ্জে ফিরে আসেন এবং মহারাজার নিকট খবর পাঠান। মহারাজা ভাঙা মূর্তিটি কাশি থেকে অষ্টধাতু দ্বারা মেরামত করে এনে ১৯১৪ সালে জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ির নির্মাণ করে সেখানে মূর্তিটি স্থাপন করেন। ধারনা করা হয় শালডাঙ্গায় প্রাপ্ত এই মূর্তিটি দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠকের আন্দোলনের সময় তাদের উপাসনার জন্য গভীর জঙ্গলের স্থাপিত হয়েছিল।

প্রতিবছর বৃহৎ পরিসরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয় জগবন্ধু ঠাকুরবাড়িতে। দুর্গাপূজার সময় মন্দির প্রাঙ্গনে বসে সপ্তাহব্যাপী মেলা। এছাড়া সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, কালী পূজা সহ সনাতন ধর্মের অন্যনা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এখানে পালন করা হয়।

জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দিরের পুরোহিত জীবন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এই মন্দিরটি অনেক পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১১০ বছর ধরে নিয়মিত পূজা, অর্চনা চলছে। এছাড়া প্রতিদিন গীতা পাঠ এবং প্রতি শুক্রবার ও শনিবার ধর্মীয় আলোচনা হয়ে থাকে। শত বছরের পুরানো ঐতিহাসিক জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দির দেখতে দূরদূরান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছুটে আসেন দেবীগঞ্জে।

কুমার অংকন সাহা নামে স্থানীয় এক যুবক জানায়, শত বছরের পুরনো জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দিরটি ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারন করে আছে‌‌। প্রতি বছর পঞ্চগড় জেলার সব থেকে বড় দূর্গা পূজার আয়োজন হয় এখানে। দূর্গা পূজা বাদেও সারা বছর দূরদূরান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং দর্শানার্থীরা এই মন্দির দেখতে আসেন। ১১০ বছর আগে নির্মিত জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দিরে সম্প্রতি বেশ কিছু স্থানে ফাটল ধরেছে। মন্দিরটি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সংস্কার।

এ বিষয়ে জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি মন্দিরের দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শুভ্রাংশু শেখর রায় (শুভ) বলেন, ১৯১৪ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পঞ্চগড় জেলার অন্যতম প্রচানী এবং বৃহৎ মন্দির। মন্দিরের বেশ কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, যা সংস্কার করা প্রয়োজন। আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরটি সংস্কার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এতে করে আগামী প্রজন্ম এই মন্দিরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ব্রিটিশ শাসন এবং পাকিস্তানি শাসন আমল পার করে স্বাধীন বাংলাদেশে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের ভুপ বাহাদুরের স্মৃতি জাগরুক করে ১১০ বছর ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here