• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

পঞ্চগড়ে বই-খাতা ভুলে মোবাইলে আসক্ত শিক্ষার্থীরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

পঞ্চগড় রাজগনর নতুনবস্তি এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মুনতাসির আল ফুয়াদ। পড়ে পঞ্চগড় করতোয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। করোনার শুরু থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অন্য শিক্ষার্থীদের মতো বিদ্যালয়ের নিয়মিত লেখাপড়ায় বড় ছন্দপতন ঘটে তার। আস্তে আস্তে দিনগুলো তার বাড়িতেই কাটতে থাকে। প্রতিদিন বাবা মায়ের চাপে একটু পড়ার টেবিলে বসলেও বেশির ভাগ সময় কাটে মোবাইলে। খেলার মাঠ আর খেলার সাথী না থাকায় এক সময় সে মোবাইলে বিভিন্ন গেইমে আসক্ত হয়ে পড়ে। 

শুধু ফুয়াদ নয় জেলা শহরের ছোট থেকে বড় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের একই অবস্থা। করোনায় শিক্ষার্থীরা এখন বই-খাতা ছেড়ে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে! বয়সে ছোটরা কেবল মোবাইলের গেইমে আসক্ত হলেও বড়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন নেতিবাচক সাইটগুলোতেও আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীর তরুণ প্রজন্মের বড় অবক্ষয়ের আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে করোনা ভয়াবহ রূপ নিলে গত বছরের ১৮ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারপর থেকেই এক প্রকার গৃহবন্দি জীবন শুরু হয় শিক্ষার্থীদের। রোজগার রুটিন বদলে যায়। বিদ্যালয়ের চাপ না থাকায় বাড়িতেও তেমন লেখাপড়া করা হয়ে উঠে না তাদের। একপর্যায়ে ধীরে ধীরে তারা মোবাইলের ওপর আসক্ত হয়ে পড়তে থাকে। এই আসক্তি বই পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। অভিভাবকদের চাপে খানিক সময় বই ধরে বসলেও সুযোগ পেলেই হাতে বইয়ের বদলে উঠে মোবাইল। তারপর বিরামহীনভাবে চলে গেইম খেলা কিংবা ফেসবুক, ইউটিউবে বিচরণ! এমনকি নেতিবাচক সাইটগুলোতে আনাগোনা চলে! সন্তানদের মোবাইল আসক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে অভিভাবকদের। চিন্তিত শিক্ষকরাও। 

শিশু শিক্ষার্থী মুনতাসির আল ফুয়াদ বলে, স্কুল বন্ধ হলে আমি ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। খেলার সাথী না থাকায় মোবাইলেই গেইম খেলি। কখনো বিড়াল ছানাদের নিয়ে খেলি। রাতে মা পড়তে বসায়। এখন স্কুল খুলেছে। এখন আবার মন দিয়ে লেখাপড়া করবো। 

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সায়মা আক্তার বলে, স্কুল বন্ধ থাকার কারণেই এই ফাঁকা সময়টিতে অনেকেই মোবাইলে সময় কাটায়। সপ্তাহে দুই দিনের বদলে আগের মতো রেগুলার ক্লাশ শুরু হলে সবাই আবার পড়াশুনার মনোযোগ দিবে। 

অভিভাবক মার্জিনা বেগম বলেন, এই করোনায় আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাড়িতেই চেষ্টা করেছি বই পড়ানোর। কিন্তু তারা বইয়ের চেয়ে মোবাইলে আসক্ত হয়ে গেছে বেশি। জানি না শিশুদের এই ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে?

আতিকুল ইসলাম নামে জেলা শহরের আরেক অভিভাবক জানান, এখন ছেলে-মেয়েকে পড়ার টেবিলে বসাতে কি যে ঝক্কি পোহাতে হয়। বারবার বলে একটু পড়ার টেবিলে বসলেও কিছুক্ষণ পরেই দেখি নাই। শুধু মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। 

শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মোবাইলে শিক্ষার্থীরা কতটা আসক্ত হয়ে পড়েছে তা ভাবা যায় না। তারা লেখাপড়ার বিষয়ে মারাত্মকভাবে উদাসীন। সারাদিন ফোন নিয়ে পড়ে থাকে। করোনা শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে চালু করতে হবে। আবারও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে হবে। 

পঞ্চগড় মডার্ন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনায় শহরের মধ্যে বসবাস করে এমন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে তাদের। স্কুল খোলার পর এখন তারা আগের মতো ক্লাশে শিক্ষকদের লেকচার ধারণ করতে পারছে না। ছেলে-মেয়েদের মোবাইলে আসক্তি বিষয়ে অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে অভিযোগ করছে। এই আসক্তি কমানো না গেলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কাজ ও মেধাবিকাশ করতে পারবে না। তাই তাদেরকে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে এই আসক্তির পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক দিলরুবা আক্তার বলেন, ‘করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিশুদের মনোজগতের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। রুটিন করে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা, প্রাইভেট, পড়তে বসা সব কিছুইতেই একটা বড় ছন্দপতন হয়েছে। তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে। মোবাইলে আসক্তি তাদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুরা এখন বিদ্যালয়ের গুরুত্ব কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। মোবাইলের আসক্তি কমানোর জন্য অভিভাবকদের আরো সতর্ক হতে হবে এবং শিশুদের প্রতি সুপারভিশন বাড়াতে হবে। তারা যেন মোবাইল বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে কেবল ভালো দিকটি ব্যবহার করতে পারে সেজন্য অভিভাবকদেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সাথে তাদের সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে।’

Place your advertisement here
Place your advertisement here