• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর তীরে মাঠজুড়ে শুধু সাদা কাশফুলের সমারোহ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী সময়টা চলছে শরৎকাল। এ মৌসুম এলেই চরাঞ্চলখ্যাত জেলা কুড়িগ্রামের চারদিকে বসে সাদা মেঘের ভেলার মতো কাশফুলের মেলা। কুড়িগ্রামে রয়েছে ছোট-বড় মিলে ১৬টি নদ-নদী। এসব নদ-নদীর তীরে মাঠজুড়ে শুধু সাদা কাশফুলের সমারোহ। নদ-নদীর অববাহিকায় চার শতাধিক চরাঞ্চলে জেগে ওঠা বালুমাটিতে বিশাল পরিসরে কাশবন হয়ে উঠেছে।

এ জেলায় কোথাও তেমন বিনোদন স্পট না থাকায় বিনোদনপ্রেমী তরুণ-তরুণীরা ছুটছেন এসব কাশবনের দিকে। কাশগাছের চূড়ায় সাদা কাশফুলে যখন ভরে ওঠে, তখন প্রকৃতি যেন হেসে ওঠে চারদিকে। তাই একটুকরো প্রশান্তি নিতে ছুটে যায় মানুষ। এ সময় মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে তারা মনোরোম এসব দৃশ্য। আর সিনেমা-পাগল দর্শকদের তো কাশফুল চেনার কথা আরও বেশি। যারা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস এবং বিশ্ববিশ্রুত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি ‘পথের পাঁচালী’ দেখেছেন, তারা জানেন কাশফুলের সৌন্দর্য সম্পর্কে। কলকাতার বর্ধমান শহর থেকে অনতিদূরে পালসিট স্টেশনের কাছে ছিল সেই কাশবন। সত্যজিৎ রায় দিনের পর দিন কাশবনে এসেছেন দৃশ্য ধারণের জন্য। সেখানেই ‘পথের পাঁচালী’র প্রথম শুটিং করে চলচ্চিত্রের রূপ দিয়েছিলেন তিনি।

সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলার অববাহিকায়, সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায়, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাটসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা গেছে সাদা মেঘের ভেলায় কাশফুলের মেলা। এ চিত্র এখন কুড়িগ্রামের শত শত চরাঞ্চলের। এমন প্রকৃতি ও সৌন্দর্যে যে কারও হারিয়ে যেতে মন চাইবে। কাশবন শুধু চরাঞ্চলের সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, এসব কাশগাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরাঞ্চলবাসী।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বন্যা-পরবর্তী সময়ে নদ-নদীর অববাহিকায় বালুমাটি জমে। সেখানেই জন্ম নেয় কাশগাছ। কোনো প্রকার ব্যয় ছাড়াই কাশবন বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন চরাঞ্চলের মানুষ। এক বিঘা জমির কাশের বাগান ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তারা।

এ ছাড়া কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে বলে জানা যায়। যেমন পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এ ছাড়া শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়।

কুড়িগ্রাম সদর ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চর গ্রামের কাশেম আলী বলেন, আমার ১০ বিঘা জমিতে কাশিয়া (কাশ) ফলন হয়েছে। এগুলো খুলনা ও বরিশাল বিভাগের লোকজন এসে নিয়ে তারা পানের বরজে দেবে। অনেকে আবার কিনে ঘরের ছাউনি ও ঘরের বেড়া দেয়। কাশিয়া আবাদ করা লাগে না। বন্যার পর প্রতিবছর এমনিতেই জমিতে জন্ম নেয়। আর এক থেকে দুই মাস পর আমার ১০ বিঘা জমির কাশিয়া তিন থেকে চার লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব। এই টাকা দিয়েই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারে খরচ চালাব। চরে বিনা পয়সায় এই আবাদটাই হয়ে থাকে আমাদের।

ওই গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, আমরা নদীভাঙা মানুষ। আমার এখানে কোনো প্রকার ব্যয় ছাড়া কাশিয়া হয়। আমার দুই বিঘা জমিতে কাশিয়া হইছে, তা বিক্রি করে অন্য আবাদ করব আর বাকি টাকা সংসারে খরচ করব। জমিতে কাশ জন্ম নেওয়ার পাঁচ থেকে ছয় মাস পর গাছ থেকে কাশিয়ার ফুল পড়ে গেলে গাছ কেটে আঁটি বাঁধি। পরে এক হাজার আঁটি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান।

কাশবন দেখতে আসা মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা হয় ধরলার অববাহিকায়। তিনি বলেন, আমার বাড়ি এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। এখানে একটা কাজে এসেছি। তাই কাশফুলের বাগান দেখতে এলাম। খুব ভালো লাগল। পরবর্তী আসলে পরিবার নিয়ে আসার কথা আছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন জানান, ঋতুপরিক্রমায় এখন শরৎকাল। আর সেই শরৎকালের বৈশিষ্ট্য কাশফুল। কাশফুলের আদিনিবাস শুধু রোমানিয়ায়। এটি বাংলাদেশেরও একটি পরিচিতি উদ্ভিদ। আমাদের কুড়িগ্রামে এটি অতিপরিচিত।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু কুড়িগ্রামে ৪২০টিরও বেশি চরাঞ্চলে রয়েছে। এসব চরে এখন কাশফুলের সমারোহ। কাশফুলের ইংরেজি নাম ক্যাটকিন। কাশফুলে রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। কাশ সাধারণত শুকিয়ে খর হিসেবে গোখাদ্যর ব্যবহারও করা হয়। তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে ঘরের ছাউনি, বেড়া নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আমাদের অর্থনৈতিক ফসল পানগাছের ছাউনি ও বরজেও ব্যবহার হয়ে থাকে কাশ। আমরা জানি কাশে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশের মূল পিশিয়ে খাওয়ানো হয়। ব্যথা বা ফোঁড়া হলে কাশের মূলের রস উপশম করে। তা ছাড়া পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে যেখানে শিল্প-কারখানার ছাই থাকে, সেখানে কাশ জন্ম নিলে পরিবেশ পরিশোধিত হয়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here