• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

সাফজয়ীদের উৎসর্গ করে শীতার্তদের জন্য পিঠা উৎসব

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে নাজেহাল ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতার্ত এসব মানুষদের উষ্ণতার চাদরে মোড়াতে রংপুরে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমধর্মী পিঠা উৎসবের। তিন দিনের এই উৎসব উৎসর্গ করা হয় সাফজয়ী ফুটবলকন্যাদের। শীতার্ত মানুষদের সহায়তার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উই ফর দেম আয়োজন করে ‘পিঠার মোড়কে উষ্ণতা’ নামে এই চ্যারিটি ইভেন্ট।

গত ৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রংপুর নগরীর কামাল কাছনায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলে শুরু হয় তিন দিনের এই পিঠা উৎসব। প্রতিদিন বিকেল থেকেই পিঠা উৎসবে ছিল পিঠাপ্রেমী মানুষের উপচে পড়া ঢল। শনিবার (৭ জানুয়ারি) উৎসবের সমাপনী দিন ছিল লোকে লোকারণ্য।

এই পিঠা উৎসবে সবার নজর কেড়েছে সাফজয়ী ফুটবলকন্যাদের নামে গড়ে তোলা একেকটি স্টল। এগারো ফুটবলকন্যার নাম আর থরে থরে সাজানো ছিল হরেক রকম পিঠা। আলো ঝলমলে পরিবেশে গরম পিঠার সঙ্গে ভিন্নতার স্বাদ অনুভব করেন উৎসবে আসা দর্শনার্থীরা। সঙ্গে উপভোগ করেন দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা।

ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলে ঢুকতেই সাফজয়ী ফুটবলকন্যাদের সম্মানে গড়া স্টলগুলোর ভিন্নতায় মুগ্ধ হন অনেকেই। সেখানে একে একে  ফুটবলকন্যা মারিয়া মান্ডা, সানজিদা আখতার, কৃষ্ণা রানী, সিরাত স্বপ্না, রূপনা চাকমা, শিউলি আজিম, সাবিনা খাতুন, আখি খাতুন, মাসুরা পারভীন, মনিকা চাকমা ও সামসুন্নাহারের নামে সাজানো স্টল ছিল। 

প্রতিটি স্টলে চন্দ্রপুলি পিঠা, পাটিসাপটা, মহিনী, গোকুল, ফিরনি, মনহরা বড়া, চিতইপিঠা, ঝাল পুলি, পায়েস, গাজরের হালুয়া, সেনাইপিঠা, কুশলি পিঠা, ফুল পিঠা, মালাইরোল, রঙিন পায়েস, চন্দন ক্ষীর, রাঙা আলু রসবড়া, দুধপুলি পিঠার পসরা সাজিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও ছিল সবজি পুলি, জর্দা, চকলেট ডোনাট, নকশী পিঠা, কেক পুডিং, নারিকেল পুলি, ফ্লাওয়ার পিঠা, মুগুর পাকন, সবজি কাটলেট, পাখি পিঠা, এলেবেলে পিঠা, পালং রোল, ফলের বাহারি ঝুড়িসহ প্রায় শতাধিক পিঠা। হারিয়ে যাওয়া অনেক পিঠার সঙ্গে নতুন নতুন পিঠার নাম জানতে পেরে খুশি নতুন প্রজন্ম।

শীতার্ত মানুষদের সহায়তার জন্য এমন আয়োজনে উপস্থিত হয়ে পিঠা খেয়ে প্রশংসা করেছেন অনেক দর্শনার্থী। পিঠা উৎসবে ঘুরতে আসা সাবিহা তাবাসসুম বলেন, ছোটবেলায় নানার বাড়ি, দাদার বাড়িতে তেল পিঠা, চিতুই পিঠা, ভাপা পিঠা খেয়েছি। কিন্তু আজ এই উৎসবে এসে অনেকগুলো পিঠার নাম জানতে পারলাম। এসব নাম আগে শোনা হয়নি। তবে বেশি ভালো লাগছে আমাদের সাফজয়ী ফুটবলকন্যাদের নামে তৈরি করা স্টলগুলো দেখে। একেকটি স্টলের একেক রকম ভিন্নতা চোখে পড়ার মতো ছিল।

পিঠা খেতে খেতে কথা হয় সংস্কৃতিকর্মী রেজাউল ইসলাম জীবনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আয়োজন হিসেবে পিঠার দাম কম, তবে ভালোই স্বাদ রয়েছে। পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন পিঠার সঙ্গে শিশুদের পরিচয় হচ্ছে। এটা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য ভালো। আমি মনে করি, ইউ ফর দেম- এর মতো যদি শীতার্ত মানুষদের উপকারে আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের আশপাশে থাকা ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষদের শীতে দুর্ভোগ ও কষ্ট কমে আসবে।

আয়োজক সংগঠন উই ফর দেম- এর প্রতিষ্ঠাতা জীবন ঘোষ বলেন, চার বছর ধরে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হচ্ছে। আয়োজনের প্রতি বছরেই শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। এখানে প্রত্যেকজনেই স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে পিঠা উৎসবে তৈরি করা পিঠার উপকরণও স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ অর্থায়নে করে থাকেন। পিঠা উৎসবের অর্থ দিয়ে গত বছর ৯০০ জনের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এবারে সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে।

সংগঠনটির উপদেষ্টা সেরাফুল ইসলাম হিমেল বলেন, এই পিঠা উৎসবে কয়েকটি লক্ষ্য পূরণ হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো আয়োজনের টাকা দিয়ে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ, সেই সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহ সৃষ্টি করা। বর্তমান প্রজন্ম অনেক পিঠাই চেনে না, অচেনা পিঠার সঙ্গে পরিচয়ের এটি একটি সুযোগ। এ ধরনের উৎসবে যারা পাশে থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here