• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

প্রিসিলার উষ্ণ উপহারে তাদের শীত নিবারণের চেষ্টা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারি ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রিসিলার উষ্ণ উপহারে তাদের শীত নিবারণের চেষ্টা                          
ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে রংপুর। হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। উষ্ণতা পেতে ঘরে-বাইরে থাকা মানুষ পরিধান করছেন মোটা কাপড়। কিন্তু শীতবস্ত্রের অভাবে কনকনে এই শীতে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। বিশেষ করে দুর্ভোগ বেড়েছে দিনমজুর, শ্রমিক ও চাষিদের। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে চেষ্টা করছেন শীত নিবারণের। 

এমন শীতার্ত ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষদের শীত নিবারণে উন্নতমানের জ্যাকেট পাঠিয়েছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা। সেই জ্যাকেট হাতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা দিনমজুর মনজাব আলী। মাঘ শুরুর আগেই জেঁকে বসা এই শীতে প্রিসিলার উপহার পেয়ে খুশি মনজাব আলীর মতো আরও অনেকে। 

জল টলমল চোখে আবেগ আপ্লুত হয়ে ষাটোর্ধ্ব বয়সী মনজাব আলী বলেন, ‘বিদেশি আপার (ফাতেমা প্রিসিলা) জ্যাকেটটা খুব ভালো। এ্যলা আর জারোত (ঠান্ডা)  সমস্যা হবার নায়। আল্লাহর রহমতে সকাল বেলা কামোত (কাজে) যাইতে আগের মতো জারোত কষ্ট হবার নায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়দিন ধরি মোর মত গরীব কামলা-কিষাণের একনা সমস্যা হওচে। জারোতে সবায় সোরপোটা (জড়োসড়ো) নাগি গেইচে বাহে। ঠিক মত কাম (কাজ) না করলে হামরা খামো কী? জারোতে হামার কামাই কমি গেইচে। এ্যালা এই জ্যাকেট পিন্দি কামোত যামো, আল্লাহর আগের মত কষ্ট হবার নায়।’

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা উপহার হিসেবে শীতবস্ত্র পাঠিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে রংপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় উপহারের সেই জ্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে।

ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিত মুখ। পড়াশোনার পাশাপাশি সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করে এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছেন তিনি। দাঁড়িয়েছেন অবহেলিত মানুষের পাশে। 

প্রিসিলার উপহারের জ্যাকেট পেয়ে খুশি রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি প্রিসিলার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, রিকশা চালাইতে তো আর আগের মতো কষ্ট হয় না। এ্যলা সোগ রিকশা মটর দিয়্যা চলে। কিন্তু শীতের জনতে আগের মত কামাই নাই। রাইত (রাত) সাত-আটটা বাজলে বাড়ি গেছনো। এ্যলা নয়া বিদেশি জ্যাকেট পিন্দি দশটা-এগারোটা পর্যন্ত রিকশা চালামো। আল্লাহ দেয় কামানো ভালো হইবে।

সাতান্ন বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম রংপুর নগরীর আলমনগর রবার্টসনগঞ্জ এলাকায় থাকেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশায় যাত্রী পরিবহন করে ৫০০-৭০০ টাকা উপার্জন করেন তিনি। সেই টাকা থেকে রিকশার গ্যারেজ মালিককে দিতে হয় ৩০০ টাকা। বাকি টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

শীত নিবারণে উন্নতমানের জ্যাকেট না থাকায় সাইফুলের মতো দুর্ভোগে পড়েছিলেন ভবঘুরে মনতাজ মিয়া। সারাদিন রংপুর নগরের অলিগলি ঘুরে বেড়ানো মনতাজের পরনে অনেক ময়লা ছেঁড়া জামা-কাপড় থাকলেও ছিল না শীত নিবারণ করার মতো কাপড়। কনকনে শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রিসিলার উপহারের জ্যাকেট পেয়ে খুশি হন মানসিক ভারসাম্য হারানো এই মানুষটিও।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে রংপুর নগরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে শীতের ধাক্কায় কাবু মানুষদের কষ্ট করতে দেখা গেছে। পৌষ মাস শেষ হতে বাকি আরও .৬ দিন। কিন্তু ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষের কাছে এ যেন মাঘের আগাম কুয়াশার প্রকোপ। হিমেল হাওয়ায় সঙ্গে ঝিরিঝিরি জলফোঁটায় ভিজে গেছে প্রকৃতির বুক।

দিগন্তজোড়া মাঠে প্রতিদিনের মতো কাজে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণি। এদের অনেকের শীতবস্ত্র কেনার মতো সামর্থ্যও নেই। তাই খড় ও শুকনা পাতা কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয় প্রিসিলার উপহারের জ্যাকেট।

শীতের সকালের কষ্ট ভুলে উপহারের জ্যাকেট শরীরে মুড়িয়ে সবুজ খেতবুনন করছিলেন কৃষিশ্রমিক জাহেদুল ইসলাম। নগর মীরগঞ্জ এলাকার এই কৃষিশ্রমিক বলেন, 'শীতের এই সময়ে নিম্নআয়ের কৃষি-শ্রমিকদের দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হয়। শীত নিবারণে উন্নত বস্ত্র না থাকায় কনকনে হিমেল হাওয়ার চোট হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন অনেকেই। সেইদিক থেকে আল্লাহর রহমতে নতুন জ্যাকেট পেয়ে ভালো আছি। আগের মতো শরীরে খুব বেশি ঠান্ডা লাগছে না।' 

অন্যদিকে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার কথা হয় মেহের উদ্দিনের সঙ্গে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রিসিলার উপহারের জ্যাকেট পেয়ে ৮৮ বছর বয়সী মেহের উদ্দিন বলেন, শীতের প্রকোপ মোকাবিলায় প্রস্তুতি না থাকায় অনেকেই কষ্টে আছে। তবে আল্লাহর রহমতে এখন আমার আর কষ্ট হবে না। জ্যাকেটটা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। যিনি গরীবের জন্য এই উপহার পাঠিয়েছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাই। 

ঢাকা পোস্টের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ বলেন, এই সময়টাতে উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ বেশ তীব্র থাকে। বিষয়টি আমি প্রিসিলাকে অবগত করি। প্রিসিলা তার লোকজনের মাধ্যমে আমাদের কয়েকজন প্রতিনিধির কাছে উপহার হিসেবে শীতবস্ত্র পাঠিয়েছেন। সেগুলো সমাজের অসহায়, দুঃস্থ ও শীতার্ত মানুষদের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, শুধু সরকারের একার পক্ষে শীতার্তদের চাহিদা অনুযায়ী শীতবস্ত্র বিতরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবীদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাই সবার জায়গা থেকে একটু চেষ্টা করলে আমাদের আশপাশে থাকা শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতার কাপড় পৌঁছানো সম্ভব।

রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার সকাল ৬টায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এর আগের দিন শুক্রবার এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ চলছে। আরও কয়েকদিন দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাংশে মৃদু ও মাঝারী ধরণের শৈত্য প্রবাহ চলতে পারে। এ সময় তামপাত্রা ৬  থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠা নামা করতে পারে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন ধরনের কুয়াশা বিরাজমান থাকবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here