• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

সেদিন মা জীবন দিলেও প্রধানমন্ত্রী সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

২০০৪ সালের একুশে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন রংপুরের রেজিয়া বেগম। এ ঘটনার ১৮ বছর পার হলেও নিহত রেজিয়ার পরিবারের শোক এখনো কাটেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুহাত ভরে দেওয়া অনুদানে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পরিবারটি।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়ার গ্রামের বাড়ি রংপুর নগরী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে। সেখানেই বসবাস করছেন রেজিয়ার দুই ছেলে। আরাজি শাহবাজপুরে বড় ছেলে হারুন-অর-রশিদ ও গঙ্গানারায়ণ গ্রামে ছোট ছেলে নুরুন্নবী মোস্তুল্লাহর সংসার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানারায়ণ গ্রামের দরিদ্র কৃষক আফাজ উদ্দিনের ৪ মেয়ের মধ্যে রেজিয়া বেগমের উপার্জনেই চলত তাদের সংসার। বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিনের ৪ মেয়ের মধ্যে রেজিয়া বেগম ছিলেন দ্বিতীয়। তার বিয়ের পর দুই ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়ে স্বামী খালেক মণ্ডল নিরুদ্দেশ হন। তারপর থেকে রেজিয়া অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে ভিসায় ছবি লাগানোর খণ্ডকালীন কাজ করে বৃদ্ধ বাবা-মা ও তার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণ চালাতেন।

গ্রামে স্বামী পরিত্যাক্তা রেজিয়া বেগমের ২ ছেলেকে নিয়ে রেজিয়ার বৃদ্ধ বাবা-মা সুখেই ছিলেন। দুিই বেলা দু’মুঠো ভাতের চিন্তা ছিল না তাদের। কিন্তু এই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি ওই বৃদ্ধ যুগলের। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান রেজিয়া বেগম।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রেজিয়া হাজারীবাগে বাড্ডায় পানির ট্যাংকের কাছে থাকতেন। সেখানকার এক আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীর সঙ্গে নিহত রেজিয়ার সুসম্পর্ক ছিল। এরই জের ধরে ঘটনার দিন ওই নারী নেত্রী নিহত রেজিয়াসহ আরও ২০ জন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দেন। জনসভা চলাকালীন হঠাৎ ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে রেজিয়া বেগমের মৃত্যু হলে ২২ আগস্ট নিহত রেজিয়ার বাবা-মা মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে তাকে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

উপার্জনক্ষম মেয়ের মৃত্যুর পর থেকেই বৃদ্ধ মা আমেনা বেগম শোকে আড়াই বছর বাকরুদ্ধ অবস্থায় শয্যাসায়ী থাকার পর সুচিকিৎসার অভাবে ২০০৬ সালে মারা যান। গোটা পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব খবর জানতে পেরে তাদের ঢাকায় ডেকে পাঠান এবং আফাজ উদ্দিনসহ নিহত রেজিয়ার ২ ছেলেকে আবাদি জমি কিনে চাষাবাদ করার পরামর্শ প্রদান করেন।

সম্প্রতি কাউনিয়াতে রেজিয়ার ছেলেদের পরিবারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রেনেড হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া টাকায় কেনা ৯ শতক জমির ওপর আধা-পাকা টিনসেড বাড়ি করেছেন ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী নুরুন্নবী মোস্তুল্লাহ। গত বছরও খড়ের ঘরে দেশি গরু পালন করতেন তিনি। এবার বাড়ির শেষ সীমানা ঘেঁসে তৈরি করেছেন উন্নতমানের গরুর খামারের অবকাঠামো। নুরুন্নবীর খামারে এখন উন্নত শংকর জাতের ৬টি গরু রয়েছে। দুধ ও গোবর বিক্রি করে তার সংসার ভালোই চলছে। 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সম্প্রতি প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া শুরু করেছেন নুরুন্নবী। এ ছাড়া ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার মাসিক সুদ পাওয়ায় অভাব নেই তার সংসারে। 

নুরুন্নবীর বড় উঠানে হাঁস-মুরগি চষে বেড়াচ্ছে। আধা পাকা নিজেদের এবং গরুর জন্য ঘর করেছে নুরুন্নবী। নুরুন্নবীর একমাত্র ছেলে মাসুদ রানা (১৪) স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। নুরুন্নবীর স্ত্রী মর্জিনা বেগম গরু লালন-পালনে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেন।

অপরদিকে নুরুন্নবীর বড় ভাই হারুন-অর-রশিদ পার্শ্ববর্তী গ্রাম আরাজি শাহবাজপুরে ৩ শতক জমির ওপরে বাড়ি করে ছিলেন। চলতি বছরে তিনি পার্শ্ববর্তী আরও ৯ শতক জমি কিনে বাড়ি ভিটা বড় করেছেন। জমি বন্ধক নিয়ে চাষবাদ বাড়িয়েছেন। তার সংসারেও অভাব নেই। একমাত্র মেয়ে হালিমা খাতুনকে (২৫) বিয়ে দেওয়ার পর এখন সুখের সংসার তার। কাজ পাগল হারুন ভোর হতেই বেরিয়ে পড়েন নিজের জমিতে কৃষি কাজে। 

রেজিয়ার ছোট ছেলে নুরুন্নবী বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার নানার হাতে এক লাখ টাকা তুলে দিলে গ্রামে ২৪ শতক জমি কিনে বাড়ি করি। এখানে আমাকে ৯ শতক, আমার বড় ভাইকে ৩ শতক ও আমার ৩ খালাদের নামে ১২ শতক লিখে দেয় আমার নানা। 

এরপর ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দুই ভাইকে ৪ লাখ করে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী আরও ১২ লাখ করে দু’ভাইকে ২৪ লাখ টাকা দেন। ওই টাকা ব্যাংকে ফিক্সড করেছি। ব্যাংক থেকে প্রতি মাসে মাসে টাকা পাই। সেটা দিয়েই সংসার চলে। 

নুরুন্নবী আরও বলেন, এবার গরুর খামার বড় করেছি। ভালো আয়-উন্নতি হচ্ছে। আমার মা একুশ আগস্টে জীবন দিলেও প্রধানমন্ত্রী নিজ সন্তানের মতো দায়িত্ব নিয়ে আমাদের আগলে রেখেছেন। আমরা ভালো আছি, সংসারে কোনো কষ্ট নেই। কিন্তু মাকে হারানোর কষ্ট ভুলতে পারি না। একুশে আগস্ট এলেই মাকে ভীষণ মনে পড়ে। মানুষ কত নির্মম-নিষ্ঠুর হলে এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে বোমা মেরে হত্যা করতে পারে। আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখনো বেঁচে আছেন। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, তিনি আমাদেরকে মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি।

রেজিয়ার বড় ছেলে হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাড়ির ধান ও ব্যাংক থেকে টাকা পেয়ে খুব সুখেই দিন কাটছে আমাদের। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমার মাকে মেরে ফেলেছে তাদের বিচার হয়েছে এতে আমরা খুশি। সরকার আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে, আগামীতেও নিবে এটাই চাই। 

রেজিয়ার পুত্রবধূ আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টাকায় ৯ শতাংশ বাড়ি ভিটার জমি ক্রয় করেছি। সেখানেই পুরাতন টিনের ঘরে বসবাস করছি। সরকার আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। অনেক সহযোগিতা করেছে। এতে আমরা খুব খুশি।  

বর্তমানে রেজিয়ার সন্তানদের দাবি, গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত অনেকের বিচার হয়েছে। এখনো যারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন, তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। সব খুনিদের বিচার হলে তার মায়ের আত্না শান্তি পাবে। ওইদিনের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার ষড়যন্ত্রে বিস্মিত হয়ে তারা বলেন, শেখ হাসিনা এতিম, তার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। আল্লাহ্ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সবসময় রক্ষা করেছেন এবং করবেনও।
#ঢাকাপোস্ট।

Place your advertisement here
Place your advertisement here