• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

ইভা হত্যায় স্পর্শকাতর তথ্য

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

একাধিক প্রেমের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেমিকরা দশম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা খানম ইভাকে হত্যা করেছে। বিষয়টি ডিজিটাল ডিভাইস চেক, আদালতে দেওয়া একজনের জবানবন্দি এবং জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, খুবই স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া গেছে, যা পরিবার এবং সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না। এসব তথ্য জানান রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ।

তিনি বলেন, টেপামধুপুর-নব্দীগঞ্জ সড়কের হরিচরন লস্কর এলাকায় একটি ফাঁকা জায়গায় দুটি মোটরসাইকেল দাঁড় করায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার পর তিন প্রেমিক বলে এখন যদি তোকে রেপ করি তাহলে কি হবে। তখন সানজিদা তাদের বলে, তোদের আমি বিশ্বাস করি। এরপর তারা সানজিদাকে তাদেরসহ অন্যান্যদের সঙ্গে চেটিং করা, প্রেম করা এবং শারীরিক রিলেশন করার বিষয়ে জানতে চায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে প্রথমে সায়েম চাকু বের করে স্টেপ করার চেষ্টা চালায়। তখন হাত দিয়ে বাধা দিতে গেলে উভয়ের হাতের আঙ্গুল কেটে যায়। এক পর্যায়ে সায়েম সানজিদার গলায় স্টেপ করে। আবার স্টেপ করতে গেলে চাকু ভেঙে যায়। পরে অন্য দুইজন সানজিদাকে পেছন দিক থেকে পিঠে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে।

রক্ত ফিনকি দিয়ে পুরো শরীরে পড়তে থাকে এবং সানজিদা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা দ্রুত পালিযে যায়। পুরো ঘটনাটি তারা ২ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই সেরে ফেলে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর তিনজনই সায়েমের মোবাইলে লগইন করা সানজিদার আইডি থেকে তাদের পক্ষ থেকে চ্যাটিং করা সব মেসেজ মুছে ফেলে দেয়।

গত মঙ্গলবার ( ১৬ আগস্ট) বেলা আড়াইটায় কোচিং করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার পর কুটিরপাড়ায় রাস্তায় রাত সাড়ে নয়টায় পড়েছিল স্কুল শিক্ষার্থী সানজিদা খানম ইভার রক্তাক্ত শরীর।

স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সানজিদার প্রেমিক নাহিদুল ইসলাম সায়েমকে গ্রেফতার করা হয় ঐ রাতেই। বুধবার রাতে সায়েম আদালতে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এছাড়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সায়েম অনেক তথ্য জানিয়েছে।

আশরাফুল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ইভা বাড়ি থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বের হলেও কোচিং সেন্টারের দিকে না গিয়ে নব্দীগঞ্জের দিকে যায়। কিছুদূর গিয়ে তার প্রেমিক পাশের গ্রামের তালুক পশুয়ার নুর হোসেনের ছেলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম সায়েমের মোটরসাইকেল যোগে রংপুর নগরীর শাপলা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে। সায়েমের সঙ্গে তার তিন বছরের সম্পর্ক থাকলেও মাস তিনেক আগে ব্রেকআপ হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং দেখাশুনাসহ সব কিছুই চলতো।

সিনেমা দেখার ফাঁকে সায়েমের সঙ্গে সানজিদার অন্য প্রেমিকদের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সানজিদা সায়েমের মোবাইল ফোনে তার ফেসবুক আইডি লগ ইন করে। এ সময় সায়েম দেখতে পায় একাধিক ছেলের সঙ্গে সানজিদার আপত্তিকর চেটিং। তখন সায়েম সানজিদাকে আরেকজন মেয়ের ছবি ও চেটিং দেখিয়ে বলে মেয়েটি সায়েমকে পছন্দ করে। এর সঙ্গে এখন প্রেম চলছে। এসব বিষয় নিয়ে সিনেমা হলেই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হল থেকে বাইরে বের হয়ে সানজিদা একাই মাহিগঞ্জে চলে যায় । 

তিনি বলেন, হলের সামন থেকে রাগ করে সানজিদা চলে যাওয়ার পর সায়েম সানজিদার আরেক প্রেমিককে মোবাইল করে ঘটনা খুলে বলে। তখন ঐ প্রেমিক আরেক প্রেমিকসহ মাহিগঞ্জ আসে এবং তাজহাট কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন একটি গলির মাথায় সানজিদাকে নিয়ে যায়। এরপর পর সেখানে যায় সায়েম। চারজন মিলে সেখানে সিনেমা হলের ঘটনাটি মীমাংসা করে। পরে সেখানে চারজনেই পীরগাছার আলীবাবা থিম পার্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সানজিদা অন্য এক প্রেমিকের মোটরসাইকেলে উঠে। আর এক প্রেমিক ওঠে সায়েমের মোটরসাইকেলে। 

ঐ পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, আলী বাবা থিম পার্কের সামনে পৌছানোর পর রাত হওয়ায় সেখানে ভেতরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সানজিদা। বলে বাড়িতে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। তখন তারা চারজনেই ওই দুটি মোটরসাইকেলে করে সেখান থেকে বাড়ির পথে রওনা দেয়। এরমাঝে একটি ফাঁকা জায়গায় কথা বলার জন্য দাঁড়ালে সেখানে অনেক পথচারী থাকায় আবারো বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, সায়েমকে গ্রেফতারের পর আমরা তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে তাতে খুবই স্পর্শকাতর চ্যাটিং মেসেজ দেখতে পাই। শুধু যে সানজিদারই একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তা নয়। ঐ তিন ছেলেরই আবার একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তাদের মেসেজে অত্যন্ত খোলামেলা চ্যাটিং ছিল, যা দেখে আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়েছি। কি করে এ ধরনের খোলামেলা আপত্তিকর কথাবার্তা টিন এজরা লিখতে পারে। শুধু তাই নয়, সানজিদা, সায়েম ও অন্য দুইজনের যে একাধিক ছেলে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক সেটা তারা নিজেরা খোলামেলাভাবে বলাবলিই করতো মেসেজে ও কথাবার্তায়। 

আশরাফুল আরো বলেন, এ ঘটনায় জড়িত অপর কথিত আরেক প্রেমিককে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছি জড়িত অন্যজনকে গ্রেফতার করতে। পুলিশ ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই নিরলসভাবে কাজ করে এ ঘটনার জড়িতদের সাসপেক্ট করতে পেরেছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে অবশ্যই সন্তান-সন্ততিদের পারিবারিক এবং সামাজিতভাবে সচেতন হতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, ঘটনার আগে সানজিদাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে ভিকটিমের ভ্যাজাইনাল সওয়াব সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। 

এদিকে সানজিদার বাবা ইবরাহিম খান বলেন, আমার মেয়ে কেমন ছিল তা এলাকাবাসী জানেন। আমার মেয়ে যদি খারাপ হয়, তাহলে আমি বিচার চাই না। যদি ভালো হয় তাহলে যেভাবে তাকে একটার পর একটা স্টেপ করে মারা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

বড়দরগা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম খোকন বলেন, সানজিদা ভদ্র এবং মেধাবী ছাত্রী ছিল। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় আমরা যে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে এ প্লাস পাওয়ার মতো ভেবে আলাদা টেক কেয়ার করতাম তার মধ্যে সে প্রথম ছিল। সেও  এ প্লাস পাওযার লক্ষেই পড়ালেখা করতো। এভাবে তাকে হত্যার বিষয়টি আমরা মানতে পারছি না। হত্যাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here