• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে রংপুরের তৈরি টুপি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুরে মঙ্গা জয় করেছেন নারীরা। তাদের নিপুণ হাতে সুই আর সুতায় তৈরি টুপি এখন ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এই টুপি তৈরি শিল্পে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হতদরিদ্র প্রায় ১৫ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের আর এখন অভাবে পড়তে হয় না। থাকতে হয় না অনাহারে, অর্ধাহারে। এখন তারা স্বাবলম্বী।
 
জেলার কাউনিয়া উপজেলার সাব্দী গ্রামে ওসাহাবাজ গ্রামে ১৯৯৮ সালে টুপির কাজ নিয়ে আসেন জহির উদ্দিন ও আউয়াল হাফেজ। ভোলা থেকে আসা আগন্তুককে কেউ জায়গা দিতে না চাইলেও বাড়ির একটি ঘর ছেড়ে দেন আবোর উদ্দিন। সেই বাসায় থেকেই প্রথম শুরু হয় নারীদের সূক্ষ্ম হাতের সেলাইয়ে তৈরি টুপির কাজ। 

শুরুর দিকে কয়েকজন নারী থাকলেও ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার চারদিকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই টুপির চাহিদা অনেক বেশি থাকায় পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জহিরকে। বর্তমানে ওমানেই রয়েছে তার ৪টি টুপির দোকান। 
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের খোপাতি গ্রামের হাফেজ আবদুল আউয়াল (৬০)। চাকরি করতেন সিলেট টেক্সটাইল জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে। তিনি বদলি হয়ে আসেন কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলে। এরপর ২০০২ সালে তিনি অবসরে যান। অবসর নেওয়ার পর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা পান। কিছুদিন বসে থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেন। চিন্তা করলেন এভাবে বসে বসে থাকলে সব টাকাই একদিন শেষ হয়ে যাবে। ভাবতে থাকেন, কী কাজ করা যায়। 

এরপর ভাবেন যে টাকা পয়সা রয়েছে, সেই টাকা দিয়ে এমন কিছু করবেন, যাতে নিজে এবং সমাজের অবহেলিত মানুষও উপকৃত হন। তারাও যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে তার পূর্ব পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে ফেনী চলে যান। সেখান গিয়ে প্রায় ২ মাস টুপি বানানোর প্রশিক্ষণ নেন ব্যবসায়ী আবুল খায়েরের কাছে। তার কাছ থেকে ৩০০ পিস টুপি বানানোর কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে আসেন বাড়িতে। তিনি নিজে এবং বাড়ির পাশের কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে সেগুলোর কাজ শেষ করে আবার তা ফেনীতে দিয়ে যান। কাজ দেখে মালিক আবুল খায়ের বেশ খুশি হন। এজন্য প্রতিটি টুপি তৈরি বাবদ তাকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রতি টুপিতে তার লাভ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এভাবে শুরু হয় তার টুপি তৈরির ব্যবসা। অবসরের এবং জমি বন্ধকের প্রায় ৫ লাখ টাকা দিয়ে নিজেই কিনে ফেলেন মোটরচালিত ৫০টি সেলাই মেশিন। ওইসব মেশিন দিয়ে চলে টুপি সেলাই ও এমব্রয়ডারির কাজ। তিনি কাউনিয়ার বালাপাড়ার সাহাবাজ গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে করেছেন অফিস ও কারখানা। ফ্যাক্টরির নাম দিয়েছেন ‘এম এইচ টুপি’ কারখানা। এভাবে ধীরে ধীরে তার ব্যবসা প্রসারিত হয়ে যায়। 

এখন শুধু কাউনিয়া উপজেলায় নয়, রংপুর সদর, লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর চর, কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন গ্রামের মহিলারা টুপি বানিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন। কাউনিয়া উপজেলার খোপাতি, চানঘাট, পূর্বচানঘাট, বল্লভবিষু, ভূতছাড়া, সাব্দী, হরিশ্বর, পাজরভাঙ্গা, গদাই, তালুকশাহবাজ, নিজপাড়া, মধুপুর, ভায়ারহাট, কুফিরপাড়, শিবু, কুড়িগ্রামের উলিপুর, রাজারহাট, লালমনিরহাট সদর এবং রংপুর সদরের নব্দিগঞ্জ গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মহিলা টুপি তৈরির কাজ করছেন।

কাউনিয়া উপজেলার ভুতছড়া গ্রামের রমিছা বলেন, ‘স্বামীর আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতাম। এখন সংসারের কাজের পাশাপাশি সেলাই করে মাসে প্রায় ৩ হাজারও আয় করি। অবসর সময়ে বাড়িতে বসে টুপি তৈরির কাজ করি। শুরুর দিকে একেকটা টুপি সেলাই করে পেয়েছি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্তমানে কাজ ভেদে টুপি সেলাই করে পাচ্ছি ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।’ 

তিনি জানান, তার কাজ হচ্ছে টুপির চারদিকে মোটা সূতা ঢোকানো। যাকে বলা হয় হাসু। এতে তিনি পান প্রতিটি টুপির জন্য ৭০-৮০ টাকা। তাতে মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা তার উপার্জন হয়।

উপজেলার ক্ষুদ্র টুপি ব্যবসায়ী জজ মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মহিলাদের সুতাসহ টুপি দিয়ে আসি নকশা করার জন্য। নকশা হয়ে গেলে তা আবার ফেরত নিয়ে আসি টাকা দিয়ে। বিভিন্ন কারখানার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। বড় ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে এই টুপিগুলো কিনে নেন। মোটামুটি ভালোই টাকা লাভ আসে।’

Place your advertisement here
Place your advertisement here